ঝিনাইদহ প্রতিনিধি

  ০৬ অক্টোবর, ২০২২

গড়াই নদীর ভাঙনে হুমকিতে ৮ গ্রাম

ঝিনাইদহের শৈলকুপায় আবারও গড়াই নদীর ভাঙন দেখা দিয়েছে। ফসলি জমি, ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। এতে ভয়ে-দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে উপজেলার সারুটিয়া, হাকিমপুর ও ধলহরাচন্দ্র ইউনিয়নের ৮ গ্রামের দুই শতাধিক বসতি পরিবারের।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, নতুন করে বড় ধরনের ঝুঁকিতে রয়েছেন সারুটিয়া ইউনিয়নের বড়ুরিয়া, কৃষ্ণনগর, হাকিমপুর ইউনিয়নের মাদলা এবং ধলহরাচন্দ্র ইউনিয়নের কাশিনাথপুর, মাজদিয়া ও উলুবাড়িয়া গ্রাম। প্রায় দুই যুগ ধরে গড়াই নদীভাঙনে বদলে গেছে এর গতিপথ। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বড়রিয়া, কৃষ্ণনগর, খুলুমবাড়ি, মাদলা, কাশিনাথপুর ও লাঙ্গলবাঁধ। ভিটেবাড়ি ও সহায়-সম্বল হারিয়ে কেউ কেউ আশ্রয় নিয়েছেন পাউবোর প্রধান সেচ খালের কাছে।

সারুটিয়া ইউনিয়নের কৃষ্ণনগর গ্রামের আব্দুল রহিম মিয়া বলেন, ‘নদীভাঙন একদম আমার বাড়ির কাছে চলে এসেছে। সব সময় ভয়ে ভয়ে থাকি। কোন সময় বসত-ভিটেমাটি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। দুই মাস ধরে ভাঙন শুরু হয়েছে। নদীর পানি কমছে আর গড়াই ভয়াল রূপ নিচ্ছে। ইতোপূর্বে নদীগর্ভে ভিটেমাটি চাষাবাদের জমি ও সহায়-সম্বল হারিয়েছি আমরা।’

হাকিমপুর ইউনিয়নের পূর্ব মাদলা গ্রামের বাসিন্দা আব্দুস সোবহান বিশ্বাস এবং একই ইউনিয়নের মারুফ জোয়ার্দ্দার বলেন, ‘গড়াই নদীর ভাঙনে এলাকার অনেক বাড়িসহ ফসলি জমি যেকোনো সময় বিলীন হতে পারে। আমরা খুবই আতঙ্কের মধ্যে আছি। শিগগিরই নদীভাঙন রুখতে না পারলে গুচ্ছগ্রাম, আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর, ভিটেমাটি ও ফসলি জমি বিলীন হয়ে যাবে।’

সহায়-সম্বল হারানো একই গ্রামের রেবেকা বেগম ও বিলকিচ নাহার বলেন, ‘নদীগর্ভে সবকিছু হারিয়ে এখন নিঃস্ব। নদীর ভয়াল ধসের কারণে গত ২০ বছরে চারবার জায়গা পরিবর্তন করেছি। আবারও আমরা ভাঙনের হুমকির মুখে। আমার স্বামী মারা গেছে, এক ছেলে নিয়ে স্বামীর বসতভিটা আঁকড়ে ধরে আছি। কষ্টে দিন পার করছি। আমাদের কষ্ট এলাকার চেয়ারম্যান, মেম্বাররা জানেন না। আগাম ব্যবস্থা নিলে ভাঙন হয়তো এত ভয়ানক রূপ নিত না।’

৬নং সারুটিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাহমুদুল হাসান মামুন ও ৮নং ধলহরাচন্দ্র ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমান বিশ্বাস ও আশরাফুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার বলেন, ‘নদী ধস রোধে ঝিনাইদহ নির্বাহী প্রকৌশলীর এসব এলাকা পরিদর্শন করার কথা ছিল। তিনি তা না করে দায়িত্ব অবহেলা করেছেন। যদি আগাম ব্যবস্থা নিতেন, তাহলে ভাঙন এমন রূপ নিত না। শিগগিরই ভাঙনরোধে পদক্ষেপ না নিলে পরিবারগুলো সব হারিয়ে একদম নিঃস্ব হয়ে যাবে।’

শৈলকুপা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. বনি আমিন বলেন, ‘আমি সরেজমিনে ঘুরে দেখেছি। বেশ ঝুঁকি নিয়েই বসবাস করছেন সেখানকার লোকজন। এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলেছি। দ্রুতই বরাদ্দ আসবে। তখন কাজ শুরু হবে।’

ঝিনাইদহ পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী রাশিদুর রহমান বলেন, ইতোমধ্যে ওই এলাকায় জিওব্যাগ ফেলার জন্য ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়েছে। বিষয়টির স্থায়ী সমাধানের জন্য কাজ করছি। আশা করি, দ্রুতই প্রকল্পের কাজ শুরু হয়ে যাবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close