আরিফ খান, বেড়া-সাঁথিয়া (পাবনা)

  ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২২

বদলে গেছে সাঁথিয়ার কৃষিচিত্র

সারা বছরই ডুবে থাকত বিল এলাকার কৃষিজমি * এক যুগেরও বেশি দুর্ভোগ গেছে ৮ গ্রামের কৃষকের * দুটি নিষ্কাশন খাল পুনঃখনন করায় নেমে গেছে পানি

পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার ধূলাউড়ি গ্রামের বেহুলার বিল। নিষ্কাশন খাল ভরাট হয়ে যাওয়ায় সারা বছরই পানিতে ডুবে থাকত বিলের প্রায় ৪৫০ হেক্টর কৃষি জমি। এক যুগেরও বেশি সময় ধরে রাউতি, ধূলাউড়ি, চৌবাড়িয়া, ভুলবাড়িয়াসহ ৮ গ্রামের প্রায় চার হাজার কৃষকের দুর্ভোগ গেছে।

সম্প্রতি নিষ্কাশন খাল পুনরায় খনন করা হয়েছে। আর এতে নেমে গেছে দীর্ঘদিন জলাবদ্ধ থাকা এলাকার পানি। চলতি মৌসুমেই জমিতে ফসল রোপণের আশা করছেন স্থানীয় কৃষিজীবীরা।

পুনরায় খনন করা হয়েছে উপজেলার গোপিনাথপুর গ্রামের বান্নেগাড়া খালও। বর্ষার পানি নিষ্কাশনের পথ না থাকায় শুষ্ক মৌসুমেও জলাবদ্ধ থাকত খাল পাড়ের ৬ গ্রামের বিপুল পরিমাণ কৃষিজমি। এখন আর জমিতে আটকে থাকছে না অতিরিক্ত পানি। পাট কেটে খালের পানিতে জাগ দিয়েছেন চাষিরা। এসব খাল খননে বদলে গেছে পাবনার সাঁথিয়ার গ্রামাঞ্চলের কৃষিচিত্র। চাষাবাদের আওতায় এসেছে জলাবদ্ধতায় অনাবাদি থাকা সহ¯্রাধিক হেক্টর কৃষিজমি। পানি নিষ্কাশনের পাশাপাশি শুষ্ক মৌসুমে সেচ সুবিধার কারণে চলতি মৌসুমেই সুফল পাবেন চাষিরা, বলছে কৃষি বিভাগ। দ্রুত পানি নিষ্কাশনের ফলে বেহুলা ও বান্নেগাড়া বিলের জমিতে ধান, গম, পেঁয়াজ, রসুনসহ রবিশস্য রোপণ করতে পারবেন চাষিরা। লো লিফট পাম্প ব্যবহারে সেচ কাজ হবে খালের পানিতেই। জ্বালানি সাশ্রয়ে ফসল উৎপাদনের খরচও কমবে চাষিদের। চাপ কমবে ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহারেও।

এ ব্যাপারে পাইকশা গ্রামের চাষি ইলাহী মুন্সী বলেন, আমাদের শত শত বিঘা জমি আমরা চাষ করতে পারতাম না। পানি ও কচুরিপানায় ঢেকে থাকত। দুই এক বিঘা চাষ করতে পারলেও খরা মৌসুমে সেচ দিতে ব্যয় বেড়ে যেত। কিন্তু এই খাল খননের ফলে যেমন জমি থেকে জলাবদ্ধতা দূর হয়েছে, তেমনই খরার মৌসুমে সেচ নিয়েও দুশ্চিন্তা কমেছে।

আরেক চাষি জানিক শেখ বলেন, এই খাল খননে আমরা খুব উপকৃত হয়েছি। বছরের অধিক সময় জলে ডুবে থাকা জমিগুলোও আমরা চাষ করতে পারব।

কালাইচারা গ্রামের কৃষক আবদুল মাজেদ বলেন, খাল খননে ফসল আনা-নেওয়ায় সুবিধা হয়েছে। এখন আমরা খুব সহজে নৌকা নিয়ে সবকিছু আনা-নেওয়া করতে পারছি। তাছাড়া অনেক জমি পানির নিচে থাকত, চাষ করতে পারতাম না। এখন সে অসুবিধা নেই। খালে পানি নেমে যাচ্ছে। চাষ করতে পারব।

কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) সূত্র জানায়, ভূ-উপরিস্থ পানির মাধ্যমে সেচ উন্নয়ন পাবনা-নাটোর-সিরাজগঞ্জ (পানাসি) প্রকল্পের আওতায় সাঁথিয়ায় প্রায় সাড়ে ৬ কিলোমিটার খাল খনন করেছে কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন। এতে ব্যয় হয়েছে প্রায় ৫১ লাখ টাকা।

পাবনা-নাটোর-সিরাজগঞ্জ ভূ-উপরিস্থ পানির মাধ্যমে সেচ উন্নয়ন (পানাসি) প্রকল্প পরিচালক এ বি এম মাহমুদ হাসান খান প্রতিদিনের সংবাদকে জানান, সাঁথিয়া উপজেলার বেহুলা ও বন্নেগাড়া বিলের দুটি খাল পুনঃখনন করা হয়েছে। খাল দুটি পুনঃখননের ফলে প্রায় ১৫০০ হেক্টর জমি জলাবদ্ধতা দূর হবে এবং ৬০০ হেক্টর জমি এক ফসলি থেকে দুই-তিন ফসলি জমিতে পরিণত হবে। তিনি আরো জানান, লো লিফট পাম্প ব্যবহারে সেচ কাজ হবে খালের পানিতেই। এতে জ্বালানি সাশ্রয়ে ফসল উৎপাদনের খরচও কমবে চাষিদের। চাপ কমবে ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহারেও।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close