হুমায়ুন কবির, কেন্দুয়া (নেত্রকোনা)

  ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২২

নলিনীরঞ্জনের পৈতৃক বাড়ি

নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার চিরাং ইউনিয়নের সাজিউড়া গ্রামে উপস্থিত অবিভক্ত বাংলার অর্থমন্ত্রী প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ নলিনীরঞ্জনের পৈতৃক বাড়িটি মামলা জটিলতা এবং সংস্কারের অভাবে অবহেলায় পড়ে আছে। এর ফলে বাড়িটি শিকড়-বাকড় ও আগাছার দখলে অস্তিত্ব হারাতে বসেছে।

উপজেলা সদর থেকে ৪ কিলোমিটার পূর্বদিকে চিরাং ইউনিয়নের সাজিউড়া গ্রামে অবস্থিত এ বাড়ি। সেই গ্রামে প্রকৃতির সঙ্গে অনেকটা যুদ্ধ করে কালের সাক্ষী হিসেবে এখনো দাঁড়িয়ে আছে বাড়ির ভবন ও সীমানা দেয়াল।

এককালের ঐতিহ্যবাহী নলিনীরঞ্জন সরকারের পৈতৃক বাড়িটি পড়ে রয়েছে অযত্ন, অবহেলায়। এক একর জমিতে অবস্থিত বাড়ির দ্বিতল ভবন আর প্রাচীন রক্ষণাবেক্ষণ ও সংস্কারের অভাবে তার আগের জৌলুস হারিয়ে ফেলেছে।

জানা যায়, সাজিউড়া গ্রামে ১৮৭২ সালের সনাতন ধর্মাবলম্বী এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে নলিনীরঞ্জন সরকার জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম চন্দ্রনাথ সরকার। ১১ ভাইবোনের মধ্যে ছোটবেলা থেকেই নলিনীরঞ্জন সরকার ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী। পরবর্তী সময়ে তিনি কলকাতায় চলে যান। সেই সময় তিনি ব্রিটিশ সরকারের শাসনামলে তরুণ বয়সেই কলকাতা শহরে রাজনৈতিক ও সামাজিক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েন। খুব অল্প সময়ের মধ্যে জনপ্রিয় নেতা হয়ে ওঠেন। তিনি কলকাতা সিটি করপোরেশনের প্রথম বাঙালি মেয়র।

১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্তির পর পশ্চিমবঙ্গে বিধান রায়ের রাজ্য সরকারের মন্ত্রিসভায় অর্থ ও বাণিজ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এর আগে তিনি অবিভক্ত বাংলার অর্থমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

পরবর্তী সময়ে ভারত বিভক্তির পর নলিনীরঞ্জন সরকারের পুরো পরিবার জায়গা জমি রেখে ভারতে চলে যান। সেই থেকে তাদের ঘরবাড়ি, সম্পত্তি অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে আছে।

সবুজে ঘেরা বাড়ির মূল ফটকে রয়েছে বিশাল পুকুর, বসতঘর, মন্দির। তার পাশেই একটি পোস্ট অফিস। বাড়ির দেয়াল ও ছাদ থেকে প্লাস্টার খসে পড়েছে। লতাপাতার শেকড়-বাকড়ে ক্রমশ বন্দি হয়ে বিলীন হতে চলেছে বাড়িটির অস্তিত্ব।দি লীপ সরকার নামের স্থানীয় এক ব্যক্তি নিজেকে নলিনীরঞ্জন সরকারের নাতি পরিচয় দিয়ে বাড়ি ও জায়গার মালিকানা দাবি করে আদালতে মামলা করেছেন। মামলা আদালতে চলমান থাকায় বাড়িটি রক্ষণাবেক্ষণ ও সংস্কার করা যাচ্ছে না বলে জানান তিনি।

কেন্দুয়া সরকারি কলেজের প্রভাষক আবদুর মান্নান ভূঁইয়া বলেন, বাড়িটি নিয়ে সরকারের সঙ্গে একটি পক্ষের আদালতে মামলা চলছে। তাই এই বাড়িটি এখন বিলীন হওয়ার পথে। তিনি মামলা জটিলতা কাটিয়ে অবিভক্ত বাংলার অর্থমন্ত্রী নলিনীরঞ্জন সরকারের বাড়িটি রক্ষণাবেক্ষণ ও সংস্কার করার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানান।

নলিনীরঞ্জন সরকারের রেখে যাওয়া বাড়িটি সংস্কার করে তার স্মৃতি ধরে রাখতে বাড়িটিকে একটি পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার দাবি জানান স্থানীয় লোকজন। স্থানীয় ইউপি সদস্যসহ এলাকার সচেতন মহলের মতে, নলিনীরঞ্জন সরকারের পরিবারের রেখে যাওয়া কয়েক একর জায়গা, জমি ও বাড়িটির যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ দরকার। সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অবিলম্বে মামলা জটিলতার অবসান ঘটিয়ে বাড়িটি যথাযথ সংস্কার ও সংরক্ষণের জন্য কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করবে- এমনটাই আশা এলাকার লোকজনের।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close