আরমান ভূঁইয়া

  ০২ জুলাই, ২০২২

ডাকাতি ছিনতাই চুরি ৫ মাসে গ্রেপ্তার ১৮০০

রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে স্বর্ণের দোকান, মার্কেট, ব্যাংক, বাসা কিংবা মহাসড়কে ডাকাতি, ছিনতাই বেড়ে গেছে। অস্ত্রের মুখে সর্বস্ব লুটে নিচ্ছে সংঘবদ্ধ ডাকাত চক্রের সদস্যরা। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে তাদের তৎপরতা বেশি দেখা যায়।

নিরাপত্তা বাহিনীর কর্মকর্তাদের মতে, ঈদ কিংবা বিশেষ দিবস উপলক্ষে বেড়ে যায় ছিনতাই, চুরি ও মলম পার্টির তৎপরতা। সরু রাস্তা, গলি ও নির্জন এলাকায় ছিনতাই বেশি ঘটছে। অন্যদিকে বাস, ট্রেন ও লঞ্চ টার্মিনালগুলোতে অজ্ঞান-মলম পার্টির খপ্পরে পড়ে সর্বস্ব হারাচ্ছে অনেক মানুষ। ডাকাত, ছিনতাইকারী ও মলম পার্টির খপ্পর থেকে বাঁচতে ও সম্পদ রক্ষা করতে গিয়ে প্রাণহানির ঘটনাও ঘটছে।

এ বছরে ১৬ জানুয়ারি রাজধানীর মোহাম্মদপুরে বাসে অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়ে প্রাণ হারান মীর আবদুল হান্নান (৫৮) নামের এক পুলিশ কর্মকর্তা। ২৭ মার্চ ভোর ৫টার দিকে রাজধানীর শেওড়াপাড়ায় ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে বুলবুল হোসেন নামের এক দন্ত চিকিৎসক মারা যান। গত ৪ ফেব্রুয়ারি মিরপুর-১৪ নম্বর কচুক্ষেতে রজনীগন্ধা মার্কেটে রাঙাপরী জুয়েলার্সের দোকান থেকে প্রায় ৩০০ ভরি স্বর্ণালঙ্কার লুট হয়। অন্যদিকে ২০ জানুয়ারি রাজধানীর উত্তরা থেকে সাভারে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বাসে উঠে ডাকাতের কবলে পড়েন শফিকুল ইসলাম সজীব নামের একজন চিকিৎসক। যাত্রীবেশে বাসে উঠে ডাকাত সদস্যরা অন্য যাত্রীদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে লুট শুরু করে। চিকিৎসক শফিকুল ও অন্য যাত্রীদের চোখ বেঁধে রাতভর চালানো হয় নির্যাতন।

সম্প্রতি ডাকাতি, চুরি, ছিনতাই ও মলম পার্টির তৎপরতা বেড়ে যাওয়ায় নড়েচড়ে বসেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। গত পাঁচ মাসে র‌্যাব, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) ও মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) ধারাবাহিক অভিযানে গ্রেপ্তার হয়েছে অপরাধী চক্রের দেড় হাজারেও বেশি সদস্য। এর মধ্যে অন্তত ১৬টি সংঘবদ্ধ ডাকাত দল ও তাদের সর্দারকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

র‌্যাব জানায়, গত পাঁচ মাসে ৭২টি অভিযানে ২৩১ ডাকাত সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্যদিকে ৪৯২টি অভিযানে ছিনতাই, চোর, মলম ও অজ্ঞান পার্টির ১ হাজার ৭৮ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ও মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) তথ্য বলছে, এ বছরের জানুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত ১৬০ জন ডাকাত সদস্য, ছিনতাইকারী, চোর, অজ্ঞান ও মলম পার্টির চার শতাধিক সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। জব্দ করা হয়েছে প্রায় ১০ হাজার চোরাই মোবাইল ফোন। এছাড়াও চোরাই মোবাইল ফোনের আইইএমআই নম্বর পরিবর্তন করে বাজারে বিক্রি করা একাধিক চক্র ধরা পড়েছে।

র‌্যাব ও গোয়েন্দা পুলিশ বলছে, সারা বছরই ডাকাত সদস্যদের তৎপরতা থাকে। তবে বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে ডাকাতির ঘটনা বেশি ঘটে। গ্রেপ্তার ডাকাত সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদে এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, অধিকাংশ ডাকাত সদস্য বিভিন্ন পেশার আড়ালে ডাকাতি করে থাকে। প্রথমে চক্রের সদস্যরা সবজি বিক্রেতা অথবা অন্য কোনো প্রেশাজীবী সেজে ওই এলাকা বা বাড়ি রেকি করে। ডাকাত দলের সর্দাররা চক্রের অন্য সদস্যদের মাসিক ভাতা দিয়ে থাকে। পরে ডাকাতি করে ওই টাকা পুষিয়ে নেয়। মূলত ডাকাত সদস্যরা বছরে কয়েকটি ডাকাতি করে থাকে। আর সারা বছর অন্য কোনো কাজে নিয়োজিত থাকে।

মহাসড়ক ও বাসে ডাকাতি বিষয়ে পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, ডাকাত সদস্যরা আন্তঃজেলা বাসে যাত্রী সেজে উঠে। পরে সুযোগ বুঝে বাসের স্টাফ ও যাত্রীদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে সর্বস্ব লুটে নেয়। আবার মহাসড়কে গাছ ফেলে কিংবা লেজার লাইট দিয়ে গাড়ি থামিয়ে ডাকাতি করছে। সম্প্রতি বেশ কয়েকটি ডাকাত দলের সর্দার ও চক্রের কয়েকশ সদস্যকে গ্রেপ্তারের পর বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর নানা তথ্য।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ-কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, ডাকাতি, ছিনতাইসহ সমাজের নানা অপরাধ নিয়ন্ত্রণে গোয়েন্দা পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সবসময়ই তৎপর রয়েছে। বিগত সময়ে বেশ কয়েকটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। ধারাবাহিক অভিযানে একাধিক চক্রের হোতাসহ সদস্যদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। অভিযান চলমান থাকবে বলেও জানান ডিবি প্রধান।

এ ধরনের অপরাধ ঠেকাতে সচেতনতা বাড়ানোর তাগিদ দিয়ে ডিবি প্রধান বলেন, নির্জন রাস্তা ও গলিতে ছিনতাইয়ের ঘটনা বেশি ঘটে। ওইসব এলাকায় সাবধানে চলাফেরা এবং অপরিচিত কোনো ব্যক্তির সঙ্গে কথা কিংবা বাইরে খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকার অনুরোধ জানান তিনি। ডিবি প্রধান বলেন, অনেক সময় ভুক্তভোগীরা থানায় অভিযোগ করেন না। এতে করে ওইসব ঘটনা আড়ালে পড়ে যায়। তাই পুলিশ কোনো ধরণের পদক্ষেপ নিতে পারে না। সেজন্য কোনো ঘটনার সম্মুখীন হলে থানায় অভিযোগ করার অনুরোধ জানান এই গোয়েন্দা কর্মকর্তা।

সম্প্রতি ছিনতাইয়ের ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় উদ্বিগ্ন সাধারণ মানুষ। বিশেষ করে মোবাইল ফোন ছিনতাইয়ে ঘটনা বাড়ছে মাত্রাতিরিক্তভাবে। প্রতিদিন গড়ে শতাধিক মোবাইল ফোন ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে। আবার তাদের বাধা দেওয়ায় ছিনতাইকারীদের ছুরিকাঘাতে হতাহতের ঘটনাও বাড়ছে। এ বছর ছিনতাইকারীদের ছুরিকাঘাতে অন্তত অর্ধশতাধিক মানুষ মারা গেছে। আহত হয়েছেন কয়েক শতাধিক।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বলছে, রাজধানীতে শতাধিক ছিনতাইকারী চক্র সক্রিয়। প্রত্যেকটি চক্রে ১২ থেকে ২০ জন সক্রিয় সদস্য রয়েছে। এসব ছিনতাইকারীর সিংহভাগই মাদকাসক্ত। মূলত তারা মাদকের টাকা জোগাড় করতেই চুরি-ছিনতাই করে থাকে।

র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ডাকাতি, ছিনতাই ও সংঘবদ্ধ অপরাধপ্রবণ এলাকাগুলো আমার চিহ্নিত করে অভিযান চালাচ্ছি। এ বছর ধারাবাহিক অভিযানে প্রায় দেড় হাজার ডাকাত, ছিনতাইকারী ও মলমণ্ডঅজ্ঞান পার্টির সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

র‌্যাবের অভিযান চলমান রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, বেশিরভাগ সময় দেখা যায় অপরাধীরা কিছুদিন কারাভোগ করে আবারও এই কাজে সম্পৃক্ত হয়ে যায়। ফলে এমন অপরাধ পুরোপুরি নির্মূল করা সম্ভব হচ্ছে না।

খন্দকার আল মঈন বলেন, ছিনতাইয়ের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে চলাচলে সচেতন হতে হবে। মোবাইল ফোন ছিনতাই রোধে গাড়িতে কিংবা রাস্তায় কথা বলার সময় সর্তক থাকতে হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close