নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২৩ জুন, ২০২২

চার মাস পর শনাক্ত ছাড়াল হাজার

দেশে মহামারি নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণের ঊর্ধ্বমুখী ধারার মধ্যে চার মাস পর দৈনিক শনাক্ত হাজার ছাড়িয়েছে। এতে ১৫ ফেব্রুয়ারির পর প্রথমবারের মতো দৈনিক শনাক্তের হার ১৩ শতাংশ ছাড়াল। ২৪ ঘণ্টায় (মঙ্গলবার সকাল থেকে বুধবার সকাল পর্যন্ত) ৮ হাজার ৫৩৬টি নমুনা পরীক্ষা করে ১১৩৫ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছেন, আর মৃতু হয়েছে একজনের। গতকাল বুধবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের করোনাবিষয়ক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

করোনার এমন ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা ফের সামাজিক সংক্রমণ শুরুর ইঙ্গিত বলে শঙ্কা জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের। তারা বলছেন, সংক্রমণে এমন ঊর্ধ্বগতি অব্যাহত থাকলে রোগী শনাক্তের হার ১৭ শতাংশের বেশি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, নতুন রোগীদের নিয়ে শনাক্ত রোগী বেড়ে হয়েছে ১৯ লাখ ৫৯ হাজার ২০৯ জন। তাদের মধ্যে ২৯ হাজার ১৩৪ জনের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে করোনাভাইরাস। আর নমুনা পরীক্ষা অনুযায়ী শনাক্ত হার ১৩ দশমিক ৩০ শতাংশ। আগের দিন এই হার ছিল ১১ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ। ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়ে উঠেছেন আরো ১২২ জন। তাদের নিয়ে ১৯ লাখ ৬ হাজার ১০৫ জন সেরে উঠলেন। এর আগে করোনার তৃতীয় ঢেউ চলাকালে গত ১৬ ফেব্রুয়ারি সংক্রমণের হার ছিল ১২ দশমিক ২ শতাংশ। সবশেষ ২৫ ফেব্রুয়ারি এর চেয়ে বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছিল। সেদিন ১ হাজার ৪০৬ জনের শরীরে ভাইরাস শনাক্তের কথা জানিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এ ছাড়া মাঝে ২০ দিন দেশে কোভিডে কারো মৃত্যুর খবর ছিল না। কিন্তু তিন দিন ধরে ১ জন করে মৃত্যু হচ্ছে।

এ বিষয়ে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ও সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মোশতাক হোসেন বলেন, ‘সংক্রমণের যে ঊর্ধ্বগতি দেখা যাচ্ছে তাতে বলা যায় আগামী দু-তিন দিনের মধ্যেই দেশে ফের সামাজিক সংক্রমণ শুরু হবে। এর শুরুটা হবে ঢাকায়। এরপর চট্টগ্রাম এবং ধীরে ধীরে সারা দেশে এমন পরিস্থিতি তৈরি হবে।’

নমুনা পরীক্ষা অনেক কম হচ্ছে জানিয়ে এই বিশেষজ্ঞ বলেন, নমুনা পরীক্ষা আরো বাড়াতে হবে। যারা করোনায় আক্রান্ত হচ্ছে তাদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে। এ ছাড়া যথাসময়ে টিকা নিয়ে নিতে হবে। মাস্ক পরিধান করতে হবে। নিশ্চিত করতে হবে সামাজিক দূরত্ব। আর পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারের পক্ষ থেকে এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের সাবেক পরিচালক ডা. বেনজীর আহমেদ বলেন, ‘দেশে কয়েক দিন ধরে করোনা সংক্রমণ ও শনাক্ত হার বাড়ছে। তবে করোনা শনাক্ত হওয়ার সংখ্যাটা আরো বেশি হবে। কারণ অনেকের উপসর্গ থাকলেও পরীক্ষা করাচ্ছেন না। ‘ভারত, চীন, হংকং, দক্ষিণ কোরিয়া, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ডেও করোনা রোগী বাড়ছে। বুস্টার ডোজ নিয়েও মানুষ করোনা আক্রান্ত হচ্ছেন। তাতে মনে হচ্ছে দেশ এখন করোনার চতুর্থ ঢেউয়ে প্রবেশের দুয়ারে দাঁড়িয়ে আছে। এই ঢেউ কতটা ছোট রাখা যায় সে ব্যাপারে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রথমে একটি জিনোম সিকোয়েন্সিং বা রোগতাত্ত্বিক বিশ্লেষণ দরকার। তাতে বোঝা যাবে বর্তমান ধরন কোনটি। দ্বিতীয়ত, কারা বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন তা জানা জরুরি। যেমন : কেউ টিকা নেননি, কেউ হয়তো এক ডোজ নিয়েছেন, কেউবা দ্বিতীয় ডোজ এবং বুস্টার সম্পন্ন করেছেন। অর্থাৎ টিকার শেষ ডোজ থেকে সংক্রমণ হওয়া পর্যন্ত সময় হিসাব করতে হবে। এসব তথ্য জানা গেলে পদক্ষেপ নেওয়া সহজ হবে।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close