জুনাইদ কবির, ঠাকুরগাঁও

  ২৫ মে, ২০২২

চোখ জুড়ানো মে ফ্লাওয়ার

আর কোনো ফুল এত নিয়ম মেনে ফোটে না। তবে ‘মে ফ্লাওয়ার’ ফোটে মে মাসেই, এর কোনো ব্যতিক্রম হয় না। বছরের পর বছর ধরে এই এক নিয়মে ফুটছে। এবারও মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে ঠাকুরগাঁও নারগুন উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আবদুল জলিলের বাড়িতে প্রতি বছরের মতো এবার ফুটেছে প্রকৃতির শোভ ও চোখ জুড়ানো এই ফুল।

আবদুল জলিল জানান, দীর্ঘ ১৬ বছর থেকে মে বল তার বারিতে ফুটছে। ১১ মাস টপ ফাঁকা থাকলেও মে মাস এলেই যেন টপ মে বলে পরিপূর্ণ হয়ে উঠে। আর এ ফুল দেখলেই চোখ জুড়িয়ে যায়।

টবের মাটির নিচে পেঁয়াজের গুঁড়ির মতো একটি অংশ শুধু উঁকি দেওয়ার চেষ্টা করছে। দেখে মনে হচ্ছিল এ থেকে গাছ হবে। সেই গাছে ফুল। না মাত্র কয়েক দিনের মধ্যে এত কিছু সম্ভব হবে না। কিন্তু কী আশ্চর্য, ঠিক মে মাসের শুরুতে মে ফুলটির কলি ও মাঝামাঝি সময়ে পূর্ণাঙ্গ মে ফুলের দেখা মিলল! নরম সবুজ কান্ডের ঠিক মাথায় হালকা লাল রঙের বলটি স্থির হয়ে বসে আছে। ক্রমেই ফুলের সংখ্যা বাড়তে থাকে। আকারে বড় হয়েছে। সৌন্দর্যটাও উপভোগ করার মতো। ঘ্রাণ নেই বললেই চলে। তবে দেখতে এত ব্যতিক্রম যে, মে ফ্লাওয়ারের দিকে চোখ যাবেই। যারা দেখেছেন আগে, তাদের কথা আলাদা। নতুন করে কেউ দেখলে বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে থাকতে হবে। বাগানের অন্যান্য ফুলও হয়তো মে মাসের অতিথির দিকে তাকিয়ে অবাক হয়। মে মাসে ফুটে বলেই এর নাম মে ফ্লাওয়ার। গোলাকার দেখতে হওয়ায় ফুলটিকে বল লিলিও বলা হয়। একই কারণে বলা হয় লিলি। পাউডার পাফ লিলি, আফ্রিকান ব্লাড লিলি নামেও এটি পরিচিত। তবে মে ফ্লাওয়ার হিসেবেই সবচেয়ে বেশি পরিচিত।

এ ফুলের পাপড়ি অন্যান্য ফুলের মতো হয় না। এমনকি পাপড়ি হয় না বললেও চলে। গড়নের দিক থেকে কদম ফুলের সঙ্গে কিছুটা মিলে যায়। তবে কদমের চেয়ে আকারে বড়। হালকা লাল রঙের ফুল। দূর থেকে দেখে মনে হতে পারে গোলাকার ফুলটি কাঁটায় ঘেরা। অনেক সুচ মুখ বের করে আছে। হাত বাড়ালেই বিপদ! আদতে তা নয়। ফুলের গায়ে আঙ্গুল দিয়ে ছুঁয়ে দিলে নরম কোমল একটা অনুভূতি হয়। ফুলটিতে হলুদ রঙের অস্তিত্ব আছে। সেটি চোখে তেমন পড়ে না। তবে হাত দিলে আঙ্গুলে হলুদ রং লেগে যায়। সাদা জামা পরে ফুলের কাছে গেলে হঠাৎই দেখা যাবে, জামায় হলুদের ছিটেফোঁটা লেগে আছে।

জানা যায়, মে ফ্লাওয়ারের অস্তিত্ব প্রথম আবিষ্কৃত আফ্রিকা মহাদেশে। বর্তমানে পৃথিবীর নানা দেশে হয়। বাংলাদেশেও অনেক দিন ধরে আছে। মে ফ্লাওয়ার গাছ লম্বা ১০ মিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। ফুল প্রায় ৩ সেমি চওড়া হয়। পাপড়ি ও পুংকেশর অসমান।

মে ফ্লাওয়ার মে মাসের মধ্যেই ফুরিয়ে যায়। কখনো কখনো একটি গাছে একাধিক ফুল হয়ে থাকে। পরিণত ফুল অক্ষত অবস্থায় ঝরে পড়ে না। আস্তে আস্তে ফুলের বিভিন্ন অংশ খসে পড়তে থাকে। এক সময় হাওয়াই মিঠাইয়ের মতো চুপসে যায়। নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। অবশ্য তত দিনে একই গাছে নতুন ফুল ফুটতে শুরু করে। এভাবে মে মাসের প্রায় পুরোটাজুড়েই দেখা যায় এই ফুল। সব ফুল ঝরে পড়ার পর লম্বা সবুজ পাতার সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। কয়েক মাস এই পাতারা সতেজ থাকে। তারপর পাতা কাণ্ড কিছুই থাকে না। আবার মে মাসে দেখা দেওয়ার কথা দিয়ে চোখের আড়ালে চলে যায় গাছ ও ফুল। শূন্য টব দেখে মনেই হয় না, এর মাটির নিচে আবার জাগার স্বপ্ন নিয়ে ঘুমিয়ে আছে কোনো তাজা প্রাণ!

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close