প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ১৪ মে, ২০২২

ভারতেও পি কের বিলাসী বাগানবাড়ি

এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপক প্রশান্ত কুমার হালদার ওরফে পি কে হালদার ও তার সহযোগী সুকুমার মৃধার অর্থ পাচারের শিকড় ছড়িয়েছে ভারতেও। পলাতক এই পাচারকারীর অবৈধ সম্পত্তির খোঁজ পেয়ে গতকাল শুক্রবার কলকাতার ৯টি স্থানে একযোগে অভিযান চালিয়েছে ভারতের এনফোর্সমেন্ট ডাইরেক্টরেট (ইডি)। প্রথমেই অশোকনগরে খোঁজ মেলে এক বিলাশবহুল বাগানবাড়ির। খবর ভারতীয় সংবাদমাধ্যম নিউজ এইটিনের।

নিউজ এইটিন জানায়, অশোকনগর পৌরসভার ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের ভারতী ক্লাব এলাকার বাসিন্দা সুকুমার মৃধা নামে এক ব্যবসায়ীর বাড়িতে প্রথমে হানা দেয় ইডি। ওই ব্যবসায়ী ভুয়া সংস্থা খুলে বাংলাদেশের বিভিন্ন ব্যাংক থেকে কমবেশি ৩০০ কোটি টাকা ঋণ নেন। সেই ঋণ শোধ না করে ভারতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। পি কে হালদার ও সহযোগীর বিরুদ্ধে হাওলার মাধ্যমে অবৈধ টাকা ভারতে আনা এবং পশ্চিমবঙ্গের একাধিক জায়গায় সম্পত্তি কেনার অভিযোগ রয়েছে। পি কে হালদারের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ও মামাতো ভাই সুকুমার মৃধার জামাই সঞ্জীব হাওলাদার জানান, প্রায় দুই বছর আগে শেষবার সুকুমার মৃধা অশোকনগরের এই বাড়িতে এসেছিলেন। তবে সুকুমার মৃধার জামাই হিসেবে সম্পর্ক এড়িয়ে যান সঞ্জীব।

তিনি জানান, প্রায় দুই বছর আগে শেষবার সুকুমার মৃধা অশোকনগরের এই বাড়িতে এসেছিলেন। আর পাঁচজনের মতোই অস্পষ্টভাবে বাংলাদেশের অর্থ পাচারের ঘটনা তিনি শুনেছিলেন। তবে স্পষ্টভাবে তিনি কিছু জানেন না। কলকাতা থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরে উত্তর ২৪ পরগনা জেলার অশোকনগর পৌরসভার ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের মাছ ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত পি কে হালদারের সহযোগী সুকুমার মৃধা। তবে নিজেকে পি কে হালদারের সহযোগী নয়, ক্লায়েন্ট বলে পরিচয় দিতেন সুকুমার। কিন্তু আর্থিক দুর্নীতির খোঁজে তল্লাশি চালাতে গিয়ে উঠে আসে প্রকৃত রহস্য।

পি কে হালদার এবং সুকুমার মৃধা প্রকৃতপক্ষে অশোকনগরের দীর্ঘদিনের প্রতিবেশী। ইডি ধারণা করছে, এই দুজনের দীর্ঘদিনের যোগসাজশেই এনআরবির এই বিপুল আর্থিক দুর্নীতি হয়েছে। ভারতী পল্লী এলাকার পাশেই নবজীবন পল্লীতে বিলাসবহুল বাগানবাড়ি রয়েছে প্রশান্ত কুমার হালদারের আত্মীয় প্রণব কুমার হালদারের। ঠিক তার পাশেই আরেক বিলাসবহুল বাগান বাড়ি সুকুমার মৃধার। মাছ ব্যবসায়ী পরিচয়ে সুকুমার মৃধা এলাকায় পরিচিত হলেও তার আর্থিক সঙ্গতি নিয়ে বারবার প্রশ্ন উঠেছে। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা বাহিনীর তদন্তে জানা যায়, এই এলাকাতেই একাধিক সম্পত্তি ক্রয় করেছে হালদার-মৃধা জুটি। এদিন শুধু অশোকনগরেই ৩ বাড়িতে একযোগে তল্লাশি শুরু করে ইডি। যার একটিতে এতদিন একাই থাকতেন সুকুমার মৃধার জামাই।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সঞ্জীব হাওলাদারও বাংলাদেশি নাগরিক। তিনি সুকুমার যে বাড়িতে থাকছিলেন সেটি মূলত পিকে হালদারের ভাই এনআরবি কাণ্ডে অন্যতম অভিযুক্ত প্রীতিশ সুকুমার হালদারের। স্থানীয়দের কাছে তিনি প্রাণেশ হালদার নামে পরিচিত ছিলেন। তিন থেকে চার বছর আগে প্রীতিশ কুমার হালদার তার বাড়িটি সুকুমার মৃধার নামে হস্তান্তর করেন। সুকুমার এবং মৃধার বাড়ি ছাড়াও তাদের আরেক সহযোগী স্বপন মিত্রের বাড়িতে হানা দিয়েছে ইডি। অশোকনগরের একই এলাকার বাসিন্দা স্বপন মিত্র পি কে হালদারের হাওলার টাকা পাচারের কাজে অন্যতম অভিযুক্ত। এদিন তার বাড়ি তল্লাশি চালিয়ে একাধিক নথি পাওয়া গেছে বলে জানা যায়। এরপর দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাকে আটক করে ইডি।

অশোকনগরের গ-ি ছাড়িয়ে কলকাতার বাইপাস সংলগ্ন এলাকা, কলকাতা সংলগ্ন দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার অভিজাত এলাকায় একাধিক বাড়ি ও অফিস রয়েছে। এদিন সেখানেও তল্লাশি চালায় এনফোর্সমেন্ট ডাইরেক্টরেট। এখন পর্যন্ত অশোকনগরের একটি বিলাসবহুল বাড়িতে সুকুমার মৃধার মেয়ে অনিন্দিতা মৃধার স্বামীর হদিস মেলে। তাকে জেরা করছে ইডি। অন্যদিকে পি কে হালদারের আত্মীয় প্রণব কুমার হালদার ও তার দুই ছেলে মিঠুন হালদার ও বিশ্বজিৎ হালদারকেও জেরা শুরু করেছে ইডি।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রণব কুমার হালদার ছিলেন সরকারি কর্মচারী। তার বড় ছেলে একটি বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত ও ছোট ছেলে মিঠুন হালদার বিএসএফ জওয়ান হিসেবে কর্মরত। আয় ও তাদের সম্পত্তি সঙ্গতিহীন হওয়ায় তারাও ইডির নজরে রয়েছেন। তাদের চার বিঘা জমির ওপর বিলাসবহুল বাড়িটি এলাকায় নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close