শাহ আলম, খুলনা ব্যুরো

  ১৩ মে, ২০২২

পানির দামে খুলনায় বিক্রি হচ্ছে তরমুজ

চাষির মাথায় হাত

তরমুজের দামে হঠাৎ দরপতনে চাষিদের চোখে মুখে হতাশার ছাপ। ঘূর্ণিঝড় অশনির প্রভাবে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে খেতে আসছেন না ব্যাপারীরা। এ বছর বাম্পার ফলন হওয়ার পরও বিক্রি করতে না পেরে এখন দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন কৃষকরা। নীরবে চোখের পানি ফেলছেন তারা।

গেল বছর তরমুজের দাম ভালো পাওয়ায় এ বছর অনেকে বেশি জমিতে তরমুজ চাষ করেছেন খুলনার কৃষকরা। গত বছর জেলায় ৭ হাজার ৫১২ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষ হয়। লাভজনক হওয়ায় এ বছর ১৩ হাজার ৯৭০ হেক্টর জমিতে এর চাষ হয়েছে। উৎপাদন হয় প্রায় সোয়া চার লাখ টন তরমুজ। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি দাকোপে ৭ হাজার ৬২৫ হেক্টরে। এছাড়া বটিয়াঘাটায় ৩ হাজার ৬০০, পাইকগাছায় ১ হাজার ৫১০, কয়রায় ৮৯৫, ডুমুরিয়ায় ৩৫০, রূপসায় পাঁচ, তেরখাদায় তিন ও ফুলতলা উপজেলায় এক ও মেট্রো থানায় আরো এক হেক্টর জমিতে তরমুজের চাষ হয়েছে। কিন্তু ভালো দাম না পাওয়ায় এখন পর্যন্ত ৪০ ভাগ জমির তরমুজ মাঠেই পড়ে আছে। ফলে ক্ষতিতে পড়েছেন কৃষকরা। এদিকে, দাম না পাওয়ায় মাঠেই পচে যাচ্ছে রসালো ফল তরমুজ।

বটিয়াঘাটার গঙ্গারামপুর ইউনিয়নের কৃষক মনোরঞ্জয় রায় জানান, গত বছর এমন দামে বিক্রি হয়েছিল যে এবারও আমরা ভেবেছিলাম, ভালোই দাম পাব। এ কারণে প্রথম দিকে কম দামে আমরা খেত ছাড়িনি। এখন তো ওই টাকাও পাচ্ছি না। দাকোপ উপজেলার আনন্দনগর এলাকার কৃষক বাবুল শেখ জানান, এক বিঘা জমিতে তরমুজ উৎপাদনে ৩০-৩৫ টাকা খরচ হয়েছে। রোজার মধ্যে কিছুটা তরমুজের দাম পেয়েছি। এখন দাম পাচ্ছি না। মাঠেই সব তরমুজ পচে যাচ্ছে। যা বিক্রি হচ্ছে তা পানির দামে।

ওই এলাকার আরেক চাষি গোলাম মোস্তফা জানান, মাঠে গাছ দেখা যাচ্ছে না সব বড় বড় তরমুজ পড়ে আছে। আগে বিঘাপ্রতি লাখ টাকা লাভ হলেও এখন দাম নেই। আনন্দনগর, ছোট চালনা, পানখলী, মৌখালী, তীলডাঙ্গাসহ বিভিন্ন এলাকার মাঠেই তরমুজ নষ্ট হচ্ছে। ওই উপজেলার বানিশান্তার কৃষক উৎপল সানা জানান, তরমুজ উৎপাদনে বিঘাপ্রতি ৩৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। সেই খেত এখন ব্যবসায়ীরা ২০ হাজার টাকাও দাম বলছে না। খুলনার দাকোপের আনন্দনগর গ্রামের তরমুজ চাষি শেখ আবু সাঈদ জানান, ৫-১০ কেজি ওজনের একটি তরমুজ খেত থেকে ১০-২০ টাকা পিস বিক্রি হচ্ছে। সেই তরমুজ বাজারে ৩০-৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

জেলার পাইকগাছা উপজেলার গড়ইখালী এলাকার চাষি শাফায়াত হোসেন জানান, মাঠে তরমুজের ঢল, বাজারমূল্য নেই। দেশের বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে যাচ্ছে তরমুজ। আড়তে নিয়েও দাম পাচ্ছে না কৃষক। খেত থেকে ট্রাকপ্রতি আড়তে পৌঁছতে ২০-২৫ হাজার টাকা, আড়তদারি ১০ শতাংশ, লেবার খরচ, আড়তে বিক্রির পর ভাড়া মেটাতে পারছি না।

বটিয়াঘাটার গঙ্গারামপুর ইউনিয়নের কায়েমখোলা গ্রামের কৃষক মো. আসাদ গাজী বলেন, গত বছর তিন বিঘায় তরমুজ চাষ করে চার লাখ টাকা লাভ হওয়ায় এবার সাড়ে চার বিঘা জমিতে তরমুজ চাষবাদ করেছি। সব মিলিয়ে সাড়ে চার বিঘায় খরচ হয়েছে ১ লাখ ৯ হাজার টাকা। খেতে তরমুজ বিক্রি করতে না পারায় খুলনার আড়তে তরমুজ নিয়েছিলাম। দেড় বিঘার তরমুজ মোকামে আনতে আবার খরচ হয়েছে সাড়ে ৮ হাজার টাকা। সেই তরমুজ গত দুই দিন ধরে বিক্রি করতে পারিনি।

ডুমুরিয়ার শরাফপুরের আকড়া গ্রামের কুদ্দুস গাজী জানান, যদি কেজিতে সাত-আট টাকাও পেতাম তাহলে খরচ উঠে কিছু লাভ থাকত। এখন মাঠে যা আছে তা আর আনার চেষ্টাও করব না। খরচ দিয়ে পারা যাবে না।

খুলনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খুলনার উপপরিচালক মো. হাফিজুর রহমান বলেন, দাকোপ, পাইকগাছা, কয়রা, বটিয়াঘাটা, ডুমুরিয়ায় এবার প্রায় ১৪ হাজার হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষ হয়েছে। প্রতি বিঘায় ১ লাখ টাকার তরমুজ রয়েছে। সে হিসেবে মোট ১ হাজার ৫০ কোটি টাকার তরমুজ চাষাবাদ হয়েছে খুলনায়। গত বছর প্রায় ৬০০ কোটি টাকার তরমুজ উৎপাদন হয়েছিল খুলনায়। এবার রমজানের শুরুতে তরমুজ লাভজনক ছিল। ঈদের পর ঘূর্ণিঝড় অশনির প্রভাবে খেতে আসেনি ব্যাপারী। ফলে তরমুজ ওঠার সময়ই ব্যাপারীরা খেতে আসেনি। একই সঙ্গে পরিবহন খরচ বেড়ে যাওয়া এবং বাম্পার ফলন এ সব মিলেই কৃষকের কিছু দুঃশ্চিন্তা বেড়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close