নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১১ মে, ২০২২

মেট্রোরেল

উত্তরে শেষ, দক্ষিণে কবে

ঢাকাবাসীর বহুল প্রতীক্ষিত মেট্রোরেলের উত্তরা থেকে আগারগাঁও অংশের হলঘরের ছাদ, প্ল্যাটফর্মের ছাদ, ইস্পাতের ছাদ ও আইকনিক স্টেশনের নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। আগেই পরীক্ষামূলক ট্রেন চলাচলও করেছে এই রুটে। এখন প্রতীক্ষা আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের।

মাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (এমআরটি) নির্মাণপ্রক্রিয়া-সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেছেন, তারা এরই মধ্যে সার্ভিস ট্রান্সফার, চেক বোরিং, টেস্ট পাইল, মেইন পাইল, পাইল ক্যাপ, আই-গ্রিডার, প্রিকাস্ট সেগমেন্ট কাস্টিং ও সব স্টেশনের জন্য সাব-স্ট্রাকচার নির্মাণ শেষ করেছেন। কনকার্স রুফ, প্ল্যাটফর্ম রুফ, স্টিল রুফ স্ট্রাকচার, আইকনিক স্টেশন স্থাপনসহ সব স্টেশনের জন্য কনকার্স রুফ ও রুফ স্টিলের নির্মাণকাজও শেষ।

ঢাকা মাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন সিদ্দিক বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যুগান্তকারী পদক্ষেপের ফলে স্বপ্নের গণপরিবহন মেট্রোরেল বাস্তবায়িত হচ্ছে। এ গতিতে নির্মাণকাজ অব্যাহত থাকলে চলতি বছরের ১৬ ডিসেম্বরের মধ্যেই আমরা প্রথম পর্যায়ের কাজ সম্পন্ন করতে সক্ষম হব।

ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, উত্তরা সেক্টর-৩ ও মতিঝিলের মধ্যে এই এলিভেটেড রেললাইন নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী, এটি কমলাপুর রেলস্টেশন পর্যন্ত বর্ধিত করা হবে।

উত্তরা থেকে মতিঝিল-কমলাপুর রেলস্টেশন পর্যন্ত মোট ২১ দশমিক ২৬ কিলোমিটার মেট্রোরেলের নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে, যা এখন ৭৮ দশমিক ৯৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।

অন্যদিকে উত্তরা ও আগারগাঁওয়ের মধ্যবর্তী রেললাইনের ৯২ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ৭৮ দশমিক ১৯ শতাংশ নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়েছে। ৯টি স্টেশনের প্রবেশ ও বের হওয়ার পথের নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়েছে। ছয়টি স্টেশনের প্রবেশ ও বের হওয়ার পথের নির্মাণকাজ চলছে।

যাত্রীদের উন্নত সেবা দিতে এমআরটি-৬ এর প্রতিটি স্টেশনের উভয় পাশে এলিভেটর, এস্কেলেটর ও সিঁড়ি থাকবে। মেট্রোরেল ঘণ্টায় ৬০ হাজার যাত্রী পরিবহন করতে পারবে। এছাড়া এতে প্রায় দুই ঘণ্টার যাত্রা সময় কমিয়ে মাত্র ৪০ মিনিটেই উত্তরা থেকে মতিঝিলে যাওয়া যাবে।

এদিকে, প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন অনুসরণে মতিঝিল থেকে কমলাপুর পর্যন্ত ১ দশমিক ১৬ কিলোমিটার বৃদ্ধি করায় মেট্রোরেল লাইন-৬ এর বর্তমান দৈর্ঘ্য ২১ দশমিক ২৬ কিলোমিটারে উন্নীত হয়। বাড়তি অংশের জন্য প্রকল্পে কাজের পরিধি বৃদ্ধি পাচ্ছে। এসব কারণে বাড়তি ঋণ দিচ্ছে জাপান।

প্রকল্পের সময়-ব্যয় বাড়া প্রসঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিভাগ বলছে, মতিঝিল থেকে কমলাপুর পর্যন্ত ১ দশমিক ১৬ কিলোমিটার বাড়তি অংশে ভূমি অধিগ্রহণ, নির্মাণ ও ইঅ্যান্ডএম সিস্টেম সংগ্রহ করা হবে। পাশাপাশি ট্রানজিট ওরিয়েন্টেড ডেভেলপমেন্টের (টিওডি) জন্য ভূমি বরাদ্দ ও নকশা তৈরি, ট্রেন পরিচালনার বিদ্যুৎ খরচ ও এন্টারপ্রাইজ রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম সংগ্রহ করা হবে। এছাড়া স্টেশনে যাত্রী ওঠাণ্ডনামার জন্য লিফট, এস্কেলেটর ও সিঁড়ি তৈরি, ফুটপাত নির্মাণ, পরামর্শক ব্যয় ও আনুষঙ্গিক কার্যক্রমের জন্যও ব্যয় বৃদ্ধি পাচ্ছে। পরামর্শক নিয়োগ খাতে ১৩৫ কোটি, ইউটিলিটি সংযোগ খাতে ১০ কোটি, লাইসেন্স ফি নবায়ন খাতে ১০ কোটি, ডিজিটাল আর্কাইভ সফটওয়্যার খাতে ৫০ লাখ, রোলিং স্টকস (মতিঝিল টু কমলাপুর) খাতে ৫০ কোটি ১৪ লাখ, সিভিল ওয়ার্কস (মতিঝিল টু কমলাপুর) খাতে ১১৬০ মিটার অন্তর্ভুক্তিতে ৭১৪ কোটি ৫৬ লাখ, স্টেশন প্লাজা নির্মাণে ৯২ কোটি ৮০ লাখ ও বৈদ্যতিক বিল খাতে ২০০ কোটি টাকা লাগবে।

ভূমি অধিগ্রহণ ও কেনা খাতে ১৮ দশমিক ৭৯ হেক্টর বৃদ্ধি করা হচ্ছে। ফলে জমির মোট পরিমাণ দাঁড়াবে ৪৫ দশমিক ৭৯ হেক্টর। এ খাতে মোট ধরা হয়েছে ৫ হাজার ৭৭৪ কোটি ৮১ লাখ টাকা। জেনারেল পরামর্শক সেবা খাতে ৫৭৭ কোটি ৭৯ লাখ টাকা বৃদ্ধি হচ্ছে। এছাড়া প্রকল্পের আওতায় সিডি ভ্যাট খাতে ১ হাজার ১৭৩ কোটি ৩৪ লাখ টাকা বাড়ছে।

ডিএমটিসিএল সূত্র জানায়, ঢাকা ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট (লাইন-৬) একটি ফাস্ট ট্র্যাকভুক্ত জনগুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প। উত্তরা থেকে কমলাপুর বাংলাদেশের প্রথম দীর্ঘ উড়াল মেট্রোরেল পুরোদমে এগিয়ে চলছে।

রাজধানীর যানজট কমাতে বর্তমান সরকার দায়িত্ব নিয়েই এ প্রকল্প হাতে নেয়, যা এরই মধ্যে বাস্তবে রূপ পেতে যাচ্ছে। এ প্রকল্পে খরচ হচ্ছে ২২ হাজার কোটি টাকা। যার অর্থায়ন করছে জাপানের আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা- জাইকা। ২০২৪ সালের মধ্যে এমআরটি-৬ বাস্তবায়নের সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়। উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল চালু হলে মাত্র ৩৫ মিনিটে গন্তব্যে পৌঁছানো যাবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close