প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ২৪ জানুয়ারি, ২০২২

অ্যান্টিবায়োটিকের অপব্যবহার

বছরে ১২ লাখ মানুষের মৃত্যু

বিশ্বে অ্যান্টিবায়োটিক-প্রতিরোধী ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণে ২০১৯ সালে ১২ লাখ মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। এইডস কিংবা ম্যালেরিয়াতে প্রতি বছর যত সংখ্যক লোক মারা যায়, অ্যান্টিবায়োটিক-প্রতিরোধী ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণে তার দ্বিগুণ মানুষ মারা গেছে বলে এক গবেষণায় জানা যায়। খবর বিবিসির

গবেষণার ফলাফলে জানা যায়, ২০১৯ সালে সারা বিশ্বে ১২ লাখ মানুষ প্রাণ হারিয়েছে এই অ্যান্টিবায়োটিক-প্রতিরোধী ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণে। এর মধ্যে দরিদ্র দেশগুলোতে সংক্রমণ পরিস্থিতি সবচেয়ে ভয়াবহ। অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্সের (এএমআর) কারণে বিশ্বব্যাপী মৃত্যুর ওপর ব্রিটেনের স্বাস্থ্য বিভাগের গবেষণার এই ফলাফল প্রকাশ করেছে আমেরিকার স্বাস্থ্যবিষয়ক প্রখ্যাত সাময়িকী ল্যানসেট।

যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব ওয়াশিংটনের নেতৃত্বে আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা ২০৪টি দেশে এই গবেষণা চালান। তবে অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স সবার স্বাস্থ্যের জন্যই ঝুঁকিপূর্ণ। এর থেকে রক্ষা পেতে হলে ওষুধ নিয়ে গবেষণায় আরো বেশি অর্থ বিনিয়োগ করতে হবে। এবং বর্তমান যেসব অ্যান্টিবায়োটিক রয়েছে তা প্রয়োগে বিশেষভাবে সতর্ক থাকতে হবে বলে পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

ব্রিটেনের স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্ট (এএমআর) এখন এক গোপন মহামারিতে পরিণত হয়েছে। অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারে এখনই সতর্ক না হলে কোভিড মহামারির অবসানের পর এটাই বিশ্বব্যাপী এক বড় সমস্যা হয়ে দেখা দিতে পারে বলে স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা হুশিয়ারি জানিয়েছেন।

গবেষণায় হিসাব করে দেখা গেছে, ২০১৯ সালে সরাসরি এএমআরের কারণে বিভিন্ন রোগে মারা গেছে ১২ লাখ লোক। এর বাইরে, আরো ৫০ লাখ মানুষ প্রাণ হারিয়েছে এএমআরের সঙ্গে সম্পর্কিত নানা অসুখে। এদিকে একই বছর এইডসে মারা গেছে আট লাখ ৬০ হাজার মানুষ। আর ম্যালেরিয়ায় মারা গেছে ছয় লাখ ৪০ হাজার জন।

এএমআরে মৃত্যুর প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে নিউমোনিয়ার মতো লোয়ার রেসপিরেটরি সংক্রমণ এবং রক্তের সংক্রমণকে, যেখান থেকে পরে সেপসিস হয়। এমআরএসএ (মেথিসিলিন রেজিস্ট্যান্ট স্টেফাইলোকক্কাস অরিউস) ব্যাকটেরিয়াকে এই গবেষণায় বিশেষভাবে প্রাণঘাতী বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

বিভিন্ন দেশের হাসপাতাল এবং রোগীদের থেকে নেওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে গবেষকরা দেখতে পেয়েছেন, সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে শিশুরা।

এএমআরে মৃত্যু হয়েছে প্রতি পাঁচজনের মধ্যে একটি হচ্ছে শিশু, যাদের বয়স পাঁচের নিচে।

গবেষণার ফলাফলের উল্লেখযোগ্য দুটি দিক : ১. সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে দক্ষিণ এশিয়া এবং সাহারা মরুভূমির দক্ষিণের দেশগুলোতে। এই অঞ্চলে প্রতি এক লাখ মানুষের মধ্যে মারা গেছে ২৪ জন। ২. সবচেয়ে কম মৃত্যু ঘটেছে বেশি আয়ের দেশগুলোতে। সেখানে প্রতি এক লাখের মধ্যে মারা গেছে ১৩ জন।

এদিকে অপ্রয়োজনে অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার, অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারে কর্তৃপক্ষের নজরদারির অভাব, পশুপাখির খাবারে, শাকসবজিতে বা কৃষিকাজে অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার ইত্যাদি নানা কারণে বাংলাদেশে প্রচলিত অ্যান্টিবায়োটিকের অনেকগুলো কার্যক্ষমতা কমে গেছে বলে বলছেন বিশেষজ্ঞরা।

বাংলাদেশের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইইডিসিআরের এক চলমান গবেষণায় উঠে এসেছে, দেশে প্রচলিত অ্যান্টিবায়োটিকের মধ্যে অন্তত ১৭টির কার্যক্ষমতা অনেকাংশে কমে গেছে। আইইডিসিআরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের প্রধান জাকির হোসেন হাবিব বলেন, অ্যান্টিবায়োটিকের অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহারের কারণে অনেক ওষুধই ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে অপেক্ষাকৃত কম কার্যকর হয়ে পড়ছে।

বিশ থেকে ত্রিশ বছর আগেও যে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণের বিরুদ্ধে কার্যকর ছিল, তা এখন অনেকাংশে কার্যকারিতা হারিয়ে ফেলেছে। এমন কি কিছুদিন আগেও যেসব অ্যান্টিবায়োটিক বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে কার্যকর ছিল, সেগুলোও কার্যকারিতা হারাতে শুরু করেছে বলে জানান তিনি।

ডা. হাবিবের মতে, সবচেয়ে ভয়াবহ বিষয় হলো বাংলাদেশে হাসপাতালগুলোতে এমন জীবাণুর উপস্থিতি পাওয়া গেছে যা সব ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী। অর্থাৎ কোনো অ্যান্টিবায়োটিকই ওই জীবাণুর বিরুদ্ধে কার্যকর হবে না। তার মতে, সংক্রমণ রোধের প্রাথমিক ধারণা ও কাঠামোগত পরিবেশ না থাকা বাংলাদেশে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স তৈরির অন্যতম প্রধান কারণ।

এছাড়া দেশের প্রত্যেক হাসপাতালে কোন রোগীকে, কী কারণে, কোন অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হলো তার নির্দিষ্ট তালিকা এবং সে বিষয়ে গবেষণা না হওয়াও দীর্ঘ মেয়াদে অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স তৈরি হওয়ার অন্যতম কারণ বলে জানা যায়। গ্রাহক পর্যায়ে অ্যান্টিবায়োটিক জাতীয় ওষুধ বেচাকেনার ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের নজরদারি না থাকাও রেজিস্ট্যান্স তৈরির ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। এছাড়া আরো কয়েকটি কারণে অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্ট হয়ে থাকে, এর মধ্যে প্রধান কয়েকটি হলো : ১. বিনা প্রেসক্রিপশনে ঘন ঘন অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করলে।

২. পুরো কোর্স শেষ না করে মাঝপথে অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়া বন্ধ করলে অ্যান্টিবায়োটিক কাজ করে না। ৩. প্রয়োজনের তুলনায় স্বল্প ডোজের অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হলে। ৪. ভাইরাসজনিত কোনো অসুখে, অর্থাৎ যেসব ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট সময় পরে এমনি সেরে যেত, সেখানে বিশেষ করে শিশুদের অ্যান্টিবায়োটিক দিলে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close