খুলনা ব্যুরো

  ১৪ জানুয়ারি, ২০২২

পাইকগাছায় মিষ্টি পানিতে চিংড়ি চাষের সিদ্ধান্ত

খুলনার পাইকগাছায় লবণ পানির চিংড়ি উৎপাদন বন্ধে বিশেষ মহল জমি মালিকদের একাংশকে সংঘবদ্ধ করে ইতোমধ্যে সভা-সমাবেশসহ আন্দোলন করে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় পাইকগাছায় চিংড়ি চাষি সমিতির নেতাদের সঙ্গে স্থানীয় সংসদ সদস্য (খুলনা-৬) আক্তারুজ্জামান বাবুর মতবিনিময় হয়েছে। গত বুধবার উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মমতাজ বেগমের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে এ মতবিনিময় করেন তিনি। প্রধান অতিথির বক্তব্যে এমপি বাবু লবণ পানি ওঠানো বন্ধ করে মিষ্টি পানিতেই চিংডি চাষ করতে বলেন। এ ছাড়া ২০ একরের কম সব খাল উন্মুক্ত করা হবে বলেও জানান তিনি।

সভায় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা চেয়ারম্যান আনোয়ার ইকবাল মন্টু, পাইকগাছা থানার ওসি জিয়াউর রহমান জিয়া, উপজেলা চিংড়ি চাষি সমিতির উপদেষ্টা ও আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক শেখ কামরুল হাসান টিপু, ভাইস চেয়ারম্যান শিহাব উদ্দীন ফিরোজ বুলু, উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা পবিত্র কুমার দাস, উপজেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের শাখা কর্মকর্তা রমিত হোসেন মনি, মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান, উপজেলা চিংড়ি চাষি সমিতির সভাপতি মোস্তফা কামাল জাহাঙ্গীর, সম্পাদক গোলাম কিবরিয়া রিপন, পৌর প্যানেল মেয়র শেখ মাহবুবুর রহমান রঞ্জু, ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ, কে এম আরিফুজ্জামান তুহিন, শেখ জিয়াদুল ইসলাম, রিপন কুমার মন্ডল, কাজল কান্তি বিশ্বাস, জিএম আবদুস সালাম কেরু।

এর আগে সুন্দরবন উপকূলীয় পাইকগাছায় ধান চাষের পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের অন্যতম প্রধান খাত চিংড়ির উৎপাদন অব্যাহত রাখতে গত ৫ জানুয়ারি ইউএনও বরাবর সহস্রাধিক চিংড়ি চাষি স্বাক্ষরিত স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।

স্মারকলিপিতে বলা হয়, উপজেলার দেলুটি ও জিরবুনিয়া মৌজায় প্রায় ৩ দশক ধরে ১১ হাজার ১০০ বিঘা জমিতে চিংড়ির পাশাপাশি ধান চাষ হয়ে আসছে। যেখানে বছরের শ্রাবণ মাস পর্যন্ত লবণ পানির চিংড়ি চাষ, এরপর নদীর পানি মিষ্টি হওয়ায় একই জমিতে ধান চাষও হয়ে আসছে।

তবে ওইদিন ইউপি চেয়ারম্যানদের একটি অংশ লবণ পানি উত্তোলনের বিপক্ষে মত দিয়ে তারা মিষ্টি পানিতে ধানের পাশাপাশি চিংড়ি চাষের দাবি জানান। এ সময় তারা দাবি করেন, সারা বছর জমিতে লবণ পানি ধরে রেখে চিংড়ি চাষ করার ফলে জমির উর্বরতা ক্রমশ নষ্ট হচ্ছে। এর বিরূপ প্রভাবে এলাকার গাছপালা মরে যাচ্ছে, গো-খাদ্যের অভাব দেখা দিয়েছে। দেশীয় প্রজাতির মিষ্টি পানির মাছ বিলুপ্ত হচ্ছে।

তাছাড়া লবণ পানির চিংড়ি চাষের ফলে পানির ঢেউয়ের নিয়মিত আঘাতে সরকারের কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে পাকা ও কাঁচা রাস্তাগুলো ভেঙে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। শত শত ঘের মালিক ওয়াপদার রাস্তা কেটে নিচ দিয়ে পানি সরবরাহ করে ক্ষতিগ্রস্ত করছেন। যেখানে রাস্তা কেটে পাইপ ঢোকানোর ফলে সেই এলাকা নিচু হয়ে নদীর জোয়ারের পানি প্রবেশ করে ভাঙনসহ এলাকা লবণ পানিতে প্লাবিত হচ্ছে। যদিও উপজেলা প্রশাসন থেকে এর আগে রাস্তার পাশের চিংড়িঘেরে বিকল্প বেড়িবাঁধ দিয়ে চিংড়ি চাষের আহ্বান জানায়।

চিংড়িচাষিসহ এর সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এমন পরিস্থিতিতে অযৌক্তিক নানা বিষয় সামনে রেখে এলাকায় লবণ পানির উত্তোলন বন্ধ করলে অঙ্কুরেই বিনাশ হবে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের অন্যতম প্রধান চিংড়িশিল্প ও বেকার হয়ে পড়বে এর সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা।

এর আগে মিষ্টি পানিতে মাছের সঙ্গে সাথীফসল হিসেবে ধান ও মাছ সমন্বয় চাষের সম্ভাব্যতা যাচাইপূর্বক মতামত দিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মমতাজ বেগমকে আহ্বায়ক করে চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান, কৃষি কর্মকর্তা, মৎস্য কর্মকর্তা, ১০ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, চিংড়ি চাষি সমিতির সভাপতি ও সম্পাদকসহ এ বিষয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়।

এ বিষয়ে পাইকগাছা উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা পবিত্র কুমার দাশ জানান, পরিকল্পিত উপায়ে আধুনিক পদ্ধতির চিংড়ি চাষ শুরু হলে জমিতে আর লবণ পানি ওঠানো লাগবে না।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম জানান, পাইকগাছার সোলাদানা, গদাইপুর, দেলুটি ও গড়ইখালী ইউনিয়নে আশির দশক থেকে লবণ পানিতে চিংড়ি চাষ হয়ে আসছে। এ এলাকায় জমি দীর্ঘদিন লবণ পানিতে ডুবে থাকায় নষ্ট হচ্ছে মাটির অনুজ। জমির উর্বরতাও নষ্ট হচ্ছে।

সর্বশেষ মতবিনিময় সভায় সুরক্ষা নিশ্চিতে সব চিংড়িঘের সংলগ্ন ওয়াপদা ও রাস্তার পাশে বিকল্প বেড়িবাঁধ দিয়ে চিংড়ি চাষ করতে ঘের মালিকদের নির্দেশ দেওয়া হয়। পাশাপাশি সøুইসগেটগুলো সংস্কার ও গেটসংলগ্ন খালগুলো খননপূর্বক পানি সরবরাহের সুব্যবস্থার পাশাপাশি মাছ ও ধান সমন্বয় চাষের ওপর গুরুত্বারোপ করে ২০ একরের কম সব খাল উন্মুক্ত করা হবে বলেও জানানো হয়।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close