নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২৩ নভেম্বর, ২০২১

দুর্নীতি রোধে প্রযুক্তি

দুদকে বসছে ডিজিটাল ফরেনসিক ল্যাব

ডিজিটাল যুগে অনিয়ম-দুর্নীতিতেও প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ছে। অভিযোগ আছে, মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমেও নিয়মিত লেনদেন হয় ঘুষ। এতে প্রযুক্তিনির্ভর নানা মাধ্যম থেকে যায় দুর্নীতির নানা প্রমাণ বা আলামত। তথ্য-প্রমাণ বা প্রযুক্তিগত সামর্থ্য না থাকায় এসব দুর্নীতির বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থাই নিতে পারছে না দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক। তাই উন্নত বিশ্বের দুর্নীতি দমন সংস্থা ও গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তাদের পরামর্শে ডিজিটাল ফরেনসিক ল্যাব গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে দুদক।

এ ল্যাবে কম্পিউটার ফরেনসিক, মোবাইল ফরেনসিক, অডিও-ভিডিও ফরেনসিকের প্রযুক্তি আনা হয়েছে। মুছে ফেলা যেকোনো তথ্য, অডিও, ভিডিও, ই-মেইল পুনরুদ্ধার করা যাবে ল্যাবে। বায়োমেট্রিকের মাধ্যমে শনাক্ত করা যাবে ভয়েস কথোপকথন। এতে হুন্ডি, অর্থ পাচার ও অবৈধ অর্থ লেনদেনসহ নানা অনিয়ম-দুর্নীতি শনাক্ত করা যাবে। আগামী বছরের শুরুতেই চালু হবে এই ল্যাব।

এদিকে, বিদেশে অর্থ পাচারকারীদের বিরুদ্ধে দুদক থেকে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে মানুষের প্রত্যাশা থাকলেও আইনি কারণে সম্ভব নয় বলে জানালেন দুদক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ। বলেন, আগে মানিলন্ডারিং বিষয়টি দেখার দায়িত্ব ছিল দুর্নীতি দমন কমিশনের। এখন এ সংক্রান্ত ২৮টি অপরাধের মধ্যে ২৭টিই চলে গেছে বিভিন্ন জায়গায়। একটি রয়ে গেছে দুদকের কাছে।

মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ বলেন, সব দেশেই দুর্নীতি হয়, আমাদের দেশেও হচ্ছে। এটা প্রতিরোধ করতে হলে সবাইকে একত্রে কাজ করতে হবে। শুধু দুদক ও একটা আইনের ওপর নির্ভর করে দুর্নীতি দূর করা সম্ভব নয়। এজন্য সবার অংশগ্রহণ প্রয়োজন।

দুর্নীতি প্রমাণ করা অত্যন্ত দুরূহ বিষয় জানিয়ে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, আমরা তিলকে তাল বানিয়ে বলি। যার বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনিও মিথ্যা বলেন। সাক্ষীও সত্যি কথা বলেন না। ফলে দুর্নীতি প্রমাণ করাটা অনেক কঠিন। যারা দুর্নীতিবাজ হিসেবে জনশ্রুত তাদের চিহ্নিত করে বর্জন করলেই হয়।

দুদকে সাংবাদিকদের অসহযোগিতা করা হয় এ অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, দুদক সাংবাদিকদের সব ধরনের সহযোগিতা করছে। তদন্ত, অনুসন্ধানে কোনো ব্যাঘাত সৃষ্টি না করে যা তথ্য দেওয়া যায়, তার সবই দিতে বলা হয়েছে। দুদক সাংবাদিকদের প্রতিপক্ষ ভাববে কেন? আমরা তো একই দেশের নাগরিক। একই সমাজ থেকে এসেছি। আমাদের উদ্দেশ্যও অভিন্ন। সরকারি অফিসে কিছু নিয়মকানুন পালন করতে হয়। এটা আপনারা হয়রানি হিসেবে ভাবছেন। যেটা আলোচনার মাধ্যমে নিষ্পত্তি করা সম্ভব।

এ বিষয়ে দুদকের কিছু করার নেই জানিয়ে দুদক কমিশনার (তদন্ত) মো. জহুরুল হক বলেছেন, মানিলন্ডারিংয়ের কাজটি এখন দুদকের না। আমরা দুদক জুরিসডিকশন দেখব। যা আমাদের জুরিসডিকশনে নেই সেটাতে আমরা যাব না। ওই বদনাম যেন আমাদের ঘাড়ে না আসে।

২০১৫ সালে মুদ্রা পাচার আইন সংশোধন হলে সরকারি চাকরিজীবী ছাড়া অন্য ব্যক্তিদের অর্থ পাচারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ হারায় দুদক।

কমিশনার জহুরুল হক বলেন, প্রাইভেট ব্যক্তি মানিলন্ডারিং করে এবং ব্যাপক পরিমাণে মানিলন্ডারিং করে। হাজার হাজার কোটি টাকা না, লাখ লাখ কোটি টাকা মানিলন্ডারিং হয়। আমরা কী করব? আমরা তো কিছু করতে পারিনি।

আইন সংশোধনের পর তা দুদকের পাশাপাশি পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি), জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), বাংলাদেশ কাস্টমস ও কর বিভাগ এবং মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর তদন্তের সুযোগ পায়।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close