বদরুল আলম মজুমদার

  ২৫ অক্টোবর, ২০২১

খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য নিয়ে দুশ্চিন্তায় বিএনপি

আগামী নির্বাচনের আগে দলের চেয়ারপারসন খালেদার জিয়ার স্বাস্থ্যগত অবস্থা স্বাভাবিক না হলে অনেক বিষয়ে বেকায়দায় পড়তে হবে বিএনপিকে। তাছাড়া তার বয়স, শারীরিক অবস্থা সব মিলিয়ে যেকোনো ধরনের দুর্ঘটনার ব্যাপারেও চিন্তিত নেতারা। তিন বছর ধরে প্রায় একাকী জীবন, শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়াসহ নানা কারণেই তাকে নিয়ে দুশ্চিন্তা করতে হচ্ছে নেতাদের। তারা বলছেন, খালেদা জিয়া রাজনীতিতে সক্রিয় না থাকলেও তাকে সামনে রেখেই এগোতে চায় বিএনপি। তবে হঠাৎ কিছু হয়ে গেলে সবকিছু এলোমেলো হয়ে যেতে পারে।

এ অবস্থায় যেভাবে হোক উন্নত চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে যেতে ভেতরে ভেতরে সরকারের সঙ্গে দেন-দরবার চালিয়ে যাচ্ছে দলটি। তাছাড়া খালেদাকে বিদেশে উন্নত চিকিৎসা নিশ্চিত করতে কয়েকটি রাষ্ট্রের তৎপরতাও রয়েছে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।

বিএনপির বেশ কয়েকজন সিনিয়র নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, খালেদা জিয়া বন্দি জীবনের কারণে নিজে চলাফেরা করতে পারছেন না। অবাধ চলাচলের বিধিনিষেধ থাকায় তিনি রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়াতে পারবেন না। তবে দলীয় কোনো বিষয়ে তিনি খোঁজখবর রাখতে না পারলেও তার উপস্থিতিই বড় বিষয়। বরাবরের মতো নির্বাচন সামনে রেখে অনেক ধরনের যোগাযোগ বা পরিকল্পনার বিষয় তাকে জানানো হতে পারে। নেতাদের মতে, আগামী নির্বাচন এখনো দুই বছর বাকি। এ অবস্থায় সুস্থ খালেদা বিএনপির জন্য একটি বড় আশীর্বাদ। কারণ দলীয় যেকোনো আলোচনা বা বহিঃরাষ্ট্রের সঙ্গে যোগাযোগের ক্ষেত্রে চেয়ারপারসনের বিকল্প বা বিশ্বস্ত এখনো খালেদা জিয়াকে নিয়ে কাউকে দেখছেন না দলের নেতারা।

এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, খালেদা দলীয় কোনো কর্মকাণ্ডে না থাকলেও তিনি আমাদের সামনে আছেন এটাই বড় পাওয়া। নির্বাচন সামনে রেখে যে ধরনের যোগাযোগের কথা বলা হচ্ছে, সেটা খালেদা জিয়াকেই করতে হবে এমন কোনো কথা নেই।

বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, জ্বরে আক্রান্ত হয়ে বেশ কয়েক দিন গুলশানের ভাড়াবাড়ি ‘ফিরোজা’য় চিকিৎসাধীন ছিলেন খালেদা জিয়া। কিন্তু জ্বরের সঙ্গে তার দীর্ঘদিনের কিডনি জটিলতা দেখা দিলে গত ১২ অক্টোবর ৭৬ বছর বয়সি খালেদা জিয়াকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ নিয়ে কয়েক মাসের মধ্যে দ্বিতীয়বার হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে। বর্তমানে তিনি এভার কেয়ার হাসপাতালের হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. শাহাবুদ্দিন তালুকদারের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন আছেন। হাসপাতালের ভর্তির পর থেকে স্বাস্থ্যগত বেশ কয়েকটি পরীক্ষা করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় সবক’টি পরীক্ষার রিপোর্ট হাতে পেয়েছেন চিকিৎসকরা। আর কিছু রিপোর্ট শিগগিরই পাওয়া যাবে বলে জানিয়েছেন খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য গঠিত মেডিকেল বোর্ডের এক চিকিৎসক।

জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘ম্যাডাম হাসপাতাল আছেন। ডাক্তাররা তার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছেন। উনার চিকিৎসা চলছে। তবে গতকাল বিকালে প্রেস ক্লাবের এক আলোচনা সভায় মির্জা ফখরুল বলেন, ‘দেশনেত্রী অত্যন্ত অসুস্থ।’

নাম প্রকাশে অনীহা প্রকাশ করে তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার বেশ কয়েকটি পরীক্ষা করা হয়েছে। এর মধ্যে রক্তে শর্করার পরিমাণ কিছুটা বেশি পাওয়া গেছে। আর ইউরিন ইনফেকশন পাওয়া গেছে। এগুলো তেমন বড় কোনো সমস্যা নয়। শরীরে জ্বর তেমন বেশি নেই। রিপোর্টগুলো মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা পর্যালোচনা করেছেন। আরো কিছু পরীক্ষার রিপোর্ট পাওয়া যাবে। এরপর আমরা বিস্তারিত বলতে পারব।

এদিকে, গত বুধবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক আলোচনা সভায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, খালেদা খালেদা জিয়ার যে অবস্থা, তার চিকিৎসা দেশে সম্ভব নয়। ম্যাডাম কয়েক দিন ধরে হালকা জ্বর অনুভব করছেন। এছাড়া শারীরিক বিভিন্ন সমস্যায় ভুগছেন। তার পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্যই তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close