পার্থ মুখোপাধ্যায়, কলকাতা থেকে

  ০৮ ডিসেম্বর, ২০১৯

উন্নাওয়ে ধর্ষণ কাণ্ড

প্রতিবাদে উত্তাল দিল্লির রাজপথ

২০১২ সালে দিল্লি নির্ভয়া গণধর্ষণ-হত্যাকা-ের পর ফের ধর্ষকদের শাস্তি চাই দাবিতে উত্তাল হয়েছে দিল্লির রাজপথ। প্রতিবাদে রাস্তায় বেরিয়ে প্রতিবাদ করেছেন হাজার হাজার মানুষ। ২০১২ সালে দিল্লি নির্ভয়া কা-ে দাবি ছিল, ধর্ষকদের শাস্তি চাই। ২০১৯ সালে ফের রাজপথে মানুষের বিক্ষোভের দাবিও একইÑ ধর্ষকদের শাস্তি চাই। তেলঙ্গানা-উন্নাওয়ের পরপর গণধর্ষণ-খুনের ঘটনার প্রতিবাদে দিল্লির রাজপথে স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিবাদে শামিল হয়েছেন নাগরিকরা। উন্নাওয়ের নির্যাতিতার মৃত্যুতে ক্ষুব্ধ নাগরিকদের ক্ষোভ, মহিলা নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ সরকার। শনিবার বিকালে দিল্লির ইন্ডিয়া গেটের কাছে মিছিল আটকে দেয় পুলিশ। তবে ব্যারিকেড ভেঙে এগোনোর চেষ্টা করেন বিক্ষোভকারীরা। এরপরই বিক্ষোভকারীদের হটাতে জলকামান ব্যবহার করে পুলিশ। অন্যদিকে, দিল্লির রাজঘাট থেকে মোমবাতি মিছিল করে ইন্ডিয়া গেট পর্যন্ত পৌঁছান কলেজ পড়ুয়া থেকে বৃদ্ধারাও। হাতে জাতীয় পতাকা নিয়ে মিছিলে হাঁটতে দেখা যায় অনেককেই। এর মধ্যে, উন্নাওয়ের নির্যাতিতার পরিবারের জন্য ২৫ লাখ টাকার ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করেছে উত্তরপ্রদেশ সরকার। উন্নাওতে নিহত নির্যাতিতার বাড়িতে যান উত্তরপ্রদেশের মন্ত্রী-সংসদ সদস্যরা। তাদের সামনে বিক্ষোভ করে কংগ্রেসের ছাত্র-যুবরা। পুলিশের সঙ্গেও ধস্তাধস্তি শুরু হলে লাঠিচার্জ করা হয়। এদিকে, তেলঙ্গানায় এনকাউন্টারের জায়গা পরিদর্শন করেছেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সদস্যরা।

জানা গেছে নিজের মেয়ের গায়ে পেট্রল ঢেলে জ্বালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে উন্নাও-কা-ে নির্যাতিতার মৃত্যুতে নজিরবিহীন প্রতিবাদ করেছেন দিল্লির এক মা। জানা গিয়েছে ওই মেয়ের বয়স মাত্র ছয় বছর। গতকাল শনিবার দুপুরে ঘটনাটি ঘটেছে দিল্লির সফদরজঙ্গ হাসপাতালের সামনে। যদিও মেয়ের গায়ে আগুন দেওয়ার আগেই মা ও মেয়েকে উদ্ধার করেছে পুলিস। প্রতিবাদী মায়ের কা-ে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে রাজধানী দিল্লিতে। ওই মায়ের দাবি, তার মেয়েকেও হয়তো ভবিষ্যতে কেউ জ্বালিয়ে দেবে তাই তিনিই পোড়াবেন তার মেয়েকে। দিল্লির মার বক্তব্য, তার মেয়েকেও জ্বালিয়ে দেওয়া হোক। দীর্ঘ লড়াইয়ের পর গত শুক্রবার রাতেই সফদরজঙ্গ হাসপাতালে মৃত্যু হয়েছে উন্নাও-কা-ে অগ্নিদগ্ধ নির্যাতিতার। আর তার প্রতিবাদেই ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছেন দিল্লির এই মা।

অন্যদিকে, ৯০ শতাংশ দগ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে দলবদ্ধ ধর্ষিতার মৃত্যুর পর ক্ষোভে, প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে উঠেছে উত্তরপ্রদেশের উন্নাও। বিধানসভা ভবনের সামনে ধর্ণায় বসেছেন উত্তরপ্রদেশের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী সমাজবাদী পার্টি (সপা) নেতা অখিলেশ সিংহ যাদব। ধর্ণা শুরুর আগে ধর্ষিতার জন্য দুই মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। উন্নাওয়ে সকালেই ধর্ষিতার বাড়িতে পৌঁছে যান কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধী। এদিকে, উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ জানিয়েছেন, দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য উন্নাওয়ের দলবদ্ধ ধর্ষণ মামলাটিকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টে। আশ্বাস দিয়েছেন, অপরাধীরা চরমতম শাস্তি পাবে। কিন্তু দলবদ্ধ ধর্ষিতার জন্য কেন পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হলো না, সেই প্রশ্নটা উঠতে শুরু করে দিয়েছে। উন্নাওয়ে পৌঁছেই এই প্রশ্ন তুলেছেন প্রিয়াঙ্কা। বলেছেন, যারা প্রথমে এফআইআর নিতে অস্বীকার করেছিলেন সেই পুলিশকর্মীদের বিরুদ্ধে যোগী আদিত্যনাথের সরকার কেন এখনো কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়নি? ধর্ণামঞ্চ থেকেই সপা নেতা অখিলেশ সিংহ যাদব জানিয়েছেন, দুই-এক দিনের মধ্যেই তিনি যাবেন ধর্ষিতার বাড়িতে।

উন্নাওয়ের নির্যাতিতার মৃত্যুতে শোক জ্ঞাপন করেছেন মুখ্যমুন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নিজের টুইটার হয়ান্ডেলে একটি টুইট করেছেন মমতা। উন্নাওয়ের নিগৃহীতার মৃত্যুকে উদ্দেশে তিনি লিখেছেন, দুঃখিত, নৃশংসতার কোনো সীমা নেই। উন্নাওয়ের ঘটনা যে তার ‘হৃদয়কে নাড়া দিয়েছে, তা আগেও জানিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। উন্নাওয়ের নির্যাতিতার কথা টেনে এনে তৃণমূল নেত্রী বলেছেন, সবাই তো জানত তার কেস চলছে। সংবেদনশীল কেস। তারপরও পুড়িয়ে মারার চেষ্টা। মেয়েটা ৯৫ শতাংশ পুড়ে যাওয়া অবস্থায় এক কিলোমিটার ছুটে গিয়েছে। কিন্তু, কোনো সাহায্য পায়নি। এটা আমাকে দুঃখ দেয়। এহেন ক্ষেত্রে, আইনকে আরো শক্তিশালী হতে হবে, তাও মনে করিয়ে দিয়েছেন তিনি।

ওদিকে, তেলেঙ্গানার মতোই তার মেয়ের ধর্ষকদেরও গুলি করে মারুক পুলিশ, দাবি জানিয়েছেন উন্নাওয়ে ধর্ষিতার বাবা। বলেছেন, মেয়েকে হারিয়েছেন। যারা মেরেছে তাদেরও গুলি করে মারা হোক বা ফাঁসিতে ঝোলানো হোক। একই দাবি উন্নাওয়ে দলবদ্ধ ধর্ষিতার ভাইয়েরও। বলেছেন, বোনকে যেখানে পাঠিয়েছে, তিনি চান, ধর্ষকদেরও সেখানে পাঠানো হোক। মুখ্যমন্ত্রীর কাছে এই আর্জি জানাচ্ছেন। এর আগে, আদালতে সাক্ষ্য দিতে যাওয়ার পথে আক্রান্ত হন ২৩ বছরের ওই তরুণী। তাকে আদালতে যেতে প্রথমে বাধা দেন পাঁচজন। তাদের মধ্যে শিবম ও শুভম ত্রিবেদী তরুণীকে ধর্ষণে অভিযুক্ত। বাকিদের তরুণী চেনেন না বলে পুলিশকে জানিয়েছিলেন। হুমকিতে কান না দেওয়ায় প্রথমে বেধড়ক মারধর করা হয় তরুণীকে। তার গলায় ছুরি দিয়ে আঘাত করা হয়। পরে তার গায়ে পেট্রল ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। তরুণীর ভাই বলেছেন, তিনি মোটেই চান না, ওই পাঁচজন ধর্ষণে অভিযুক্ত বেঁচে থাকুক। হয় ওদের গুলি করে মারা হোক, না হলে ফাঁসিতে লটকানো হোক। মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের কাছে এই আর্জি জানিয়েছেন ধর্ষিতার ভাই।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close