ওয়ালী মাহমুদ সুমন, নীলফামারী ও মাহমুদ আল হাসান (রাফিন), জলঢাকা

  ২০ নভেম্বর, ২০১৮

নিজেদের দখলেই রাখতে চায় সব দল

জলঢাকা উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন এবং ১টি পৌরসভা নিয়ে গঠিত নীলফামারী-৩ আসন। তবে গত নির্বাচনে এ আসনের সঙ্গে কিশোরগঞ্জ উপজেলার রণচ-ি, বড়ভিটা ও পুটিমারী তিনটি ইউনিয়ন যুক্ত ছিল। এবার ওই ইউনিয়নগুলো যুক্ত হয়েছে নীলফামারী-৪ আসনের সঙ্গে। আয়তনে ছোট হয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে গত নির্বাচনের তুলনায় ভোটার সংখ্যা কমেছে এবার। একাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৩৬ হাজার ১৬৭ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ১৯ হাজার ৪৩৪ জন আর নারী ভোটার রয়েছেন ১ লাখ ১৬ হাজার ৭৩৩ জন। দশম সংসদ নির্বাচনে মোট ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৬১ হাজার ৪৪৬ জন।

বর্তমান সংসদ সদস্য উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি অধ্যাপক গোলাম মোস্তফা ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম সংসদ নির্বাচনে এমপি হন। নৌকা প্রতীকে ৬৮ হাজার ভোট বেশি পেয়ে জাতীয় পার্টির (জাপা) কাজী ফারুক কাদের লাঙ্গল প্রতীকতে পরাজিত করেন। এর আগে নবম সংসদে জাতীয় পার্টির কাজী ফারুক কাদের, অষ্টম ও সপ্তম সংসদে জামায়াতে ইসলামীর মিজানুর রহমান চৌধুরী এবং ষষ্ঠ সংসদে বিএনপির আনোয়ারুল কবির চৌধুরী নির্বাচিত হয়েছিলেন। এর মধ্যে বিএনপির আনোয়ারুল কবির চৌধুরী ও জামায়াতের মিজানুর রহমান চৌধুরী হয়েছেন প্রয়াত। একাদশ সংসদ নির্বাচনে বর্তমান এমপি অধ্যাপক গোলাম মোস্তফা ছাড়াও আওয়ামী লীগের হয়ে নির্বাচন করতে চান উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আনছার আলী মিন্টু, সম্পাদক সহিদ হোসেন রুবেল, জোবায়ের আলম, উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি ও সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল ওয়াহেদ বাহাদুর এবং ফ্যাশন ডিজাইনার ববিতা রানী সরকার।

এদিকে জাপার হয়ে লাঙ্গল প্রতীক পেতে চান সাবেক এমপি কাজী ফারুক কাদের, জেলা সহসভাপতি ও কেন্দ্রীয় সদস্য (অব.) সেনা সদস্য রানা মোহাম্মদ সোহেল, কেন্দ্রীয় সদস্য ডা. বাদশাহ আলমগীর।

এ ছাড়া বিএনপি থেকে এ আসনে মনোনয়ন সংগ্রহ করেছেন উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও জলঢাকা পৌর মেয়র ফাহমিদ ফয়সাল কমেট, রংপুর মহানগর বিএনপি নেতা শামসুজ্জামান শামু। তা ছাড়া জামায়াত থেকে প্রার্থী নির্ধারণ করে রাখা হয়েছে জেলা জামায়াতের সাবেক আমির ও নবম সংসদ নির্বাচনের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী আজিজুল ইসলাম। স্থানীয় নেতারা মনে করেন, নির্বাচনে বিএনপি জোট অংশগ্রহণ করলে মহাজোটের প্রার্থীর ধরন হবে এক রকম আর অংশগ্রহণ না করলে হবে আরেক রকম।

উপজেলার গোলমু-া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি এ বি এম নুরুজ্জামান আবু বলেন, বঙ্গবন্ধুকন্যার নেতৃত্বে বাংলাদেশে যে অভাবনীয় উন্নয়ন হয়েছে, তার ছোঁয়া লেগেছে আমাদের এখানেও। পিছিয়ে থাকা উপজেলাটিতে ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন বর্তমান এমপি গোলাম মোস্তফা। রাস্তাঘাট, ব্রিজ, কালভার্ট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল এমনকি গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর। তিনি বলেন, এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে গোলাম মোস্তফার বিকল্প নেই। আগামীতে তিনি মনোনয়ন পেলে নিশ্চয় বিজয়ী হবেন বিপুল ভোটে।

সংসদ সদস্য গোলাম মোস্তফা বলেন, মনোনয়ন দেওয়ার বিষয়টি নেত্রীর। তবে আমি আশা করি ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে তিনি আমাকে যে দায়িত্ব দিয়েছিলেন, সেটি পালন করে চলেছি তার নেতৃত্বে। জলঢাকার যে পরিবর্তন সেটি দৃশ্যমান। উন্নয়নের বিষয়টি মূল্যায়ন করবেন স্থানীয়রা। তবে জলঢাকা থেকে ভোটমারী পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণসহ আরো গুরুত্বপূর্ণ অনেক কাজ প্রক্রিয়াধীন। অর্থনৈতিক জোনসহ তিস্তা ইপিজেড স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে আমার। আগামীতে আমি যদি নির্বাচিত হই, তাহলে কোনো কাজই বাকি থাকবে না।

আবার মনোনয়ন পাবেন নিশ্চিত করে গোলাম মোস্তফা বলেন, শেখ হাসিনার অনুগ্রহ অনুকম্পায় আমার মতো একজন অখ্যাত মানুষকে জাতীয় সংসদের একটি উচ্চ আসনে বসিয়েছেন। এটি একটি বড় অবদান। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত নেত্রীকে ভুলতে পারব না।

আরেক মনোনয়নপ্রত্যাশী উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্পাদক সহিদ হোসেন রুবেল বলেন, আমি দীর্ঘ ২০ বছর থেকে এই দায়িত্ব নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করে আসছি। ২০০৬ সালে আমাকে এবং আমার পরিবারকে হত্যার চেষ্টা করা হয়। ভাগ্যক্রমে বেঁচে যাই। এ ছাড়া অকথ্য নির্যাতন সহ্য করতে হয়েছে। বর্তমান এমপি তার কর্মকা-ে বিতর্কিত হয়ে পড়েছেন। তিনি বলেন, গ্রামগঞ্জে, পাড়া-মহল্লায় জননেত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়ন বার্তা ছড়িয়ে দিয়েছি। নেত্রী এবার আমাকে মূল্যায়ন করবেন আশা করি।

জামায়াত নেতারা মনে করেন, জলঢাকা উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর ঘাঁটি। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে এখানে যে দাঁড়াবেন, তিনি বিজয়ী হবেন বিপুল ভোটে। জলঢাকায় জামায়াতের সম্পাদক মো. কামরুজ্জামান বলেন, জামায়াত থেকে অধ্যক্ষ আজিজুল ইসলামকে এ আসনের নির্বাচনের জন্য মনোনীত করা হয়েছে। তিনি এর আগেও নির্বাচন করেছিলেন। আজিজুল ইসলাম কেন্দ্রীয় ও রংপুর বিভাগীয় ইউনিটের সদস্য।

জামায়াতের ভোট আরো বেড়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, জনগণের সঙ্গে সব সময় রয়েছে দলটি। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আমাদের প্রার্থীকে ঠেকানোর কেউ নেই। নির্বাচনী প্রস্তুতি সব সময় রয়েছে বলে জানান কামরুজ্জামান।

তবে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী জলঢাকা পৌরসভার মেয়র ফাহমিদ ফয়সাল কমেট বলেন, দীর্ঘদিন রাজনীতি করেছেন আমার বাবা। জনগণের ভালোবাসায় হয়েছেন এমপি ও চেয়ারম্যানও। আমিও পৌরসভার মেয়র নির্বাচিত হয়েছি। আমাকে মনোনয়ন দেওয়া হলে বিপুল ভোটে জনগণ আমাকে নির্বাচিত করবেÑএ বিশ্বাস রয়েছে।

জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ পারভেজ বলেন, দলকে সাংগঠনিকভাবে এগিয়ে নেওয়া, তৃণমূলকে ধরে রাখা, এরশাদের হাতকে শক্তিশালীকরণে বিভিন্ন কাজে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছি। আমি আশা করি পার্টির চেয়ারম্যান পল্লী বন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ যাকে যোগ্য মনে করবেন, তাকে মনোনয়ন দেবেন। যাতে লাঙ্গল প্রতীককে বিপুল ভোটে নির্বাচিত করতে পারে।

মহাজোটের শরিক জাসদের হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চান জেলা জাসদের সভাপতি অধ্যাপক আজিজুল ইসলাম। প্রতিদিনের সংবাদকে তিনি বলেন, নীলফামারীতে জাসদ শক্তিশালী হয়েছে। ভোট বেড়েছে। গ্রামগঞ্জে সংগঠন করা হয়েছে। এখন আওয়ামী লীগের ভেতরে দ্বন্দ্ব প্রকট। আমরা ভালো অবস্থানে রয়েছি এখানে। মনোনয়ন পেলে নিশ্চিত জয়লাভ করতে পারব।

এ ছাড়া নির্বাচন করতে চান উপজেলা চেয়ারম্যান সৈয়দ আলী। তিনি টানা দ্বিতীয়বারের মতো চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। সৈয়দ আলী বলেন, এলাকার মানুষ আমাকে এমপি হিসেবে দেখতে চায়। মানুষের সুখে-দুঃখে থেকেছি এখনো আছি। সাধ্যমতো উপকার করে যাচ্ছি।

এ ছাড়া ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জলঢাকা উপজেলা সভাপতি আমজাদ হোসেনকে তাদের প্রার্থী হিসেবে রেখেছে এ আসনে।

নির্বাচন ঘিরে জেলা নির্বাচন অফিস ৮৯টি ভোটকেন্দ্রে ৪৫২টি ভোটকক্ষের তালিকা প্রস্তুত করলেও এর আগের নির্বাচনে ১০৭টি ভোটকেন্দ্রে ৫৫৪টি ভোটকক্ষ ছিল।

নির্বাচনী ফলাফলে দেখা গেছে এককভাবে নির্বাচন করে আওয়ামী লীগ প্রথম, পঞ্চম এবং দশম সংসদে বিজয়ী হয়। এরপর নবম সংসদে সেখানে নির্বাচিত হয় মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টি, চতুর্থ সংসদে জাতীয় পার্টি, পঞ্চম সংসদে বিএনপি এবং দ্বিতীয় সংসদে মুসলিম লীগ এবং তৃতীয়, সপ্তম ও অষ্টম সংসদে নির্বাচিত হয় জামায়াতের প্রার্থী।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close