সিলেট প্রতিনিধি

  ১৫ আগস্ট, ২০১৮

২৬ বছরে সিলেটে ছাত্রদলের ১৩ নেতাকর্মী খুন

গত ২৬ বছরে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের আভ্যন্তরীণ কোন্দলে সিলেটে ১৩ নেতাকর্মী খুন হয়েছেন। একের পর এক হত্যাকান্ড ঘটলেও কোনো হত্যাকা-েরই বিচার হয়নি। এই বিচারহীনতার ফলে দিনকে দিন গ্রুপিং রাজনীতি আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। ছাত্রদলের সাবেক নেতারা এ জন্য অছাত্রদেরকে মূল নেতৃত্বে নিয়ে আসাকে দায়ী করেছেন। আর বিএনপি নেতারা বলেছেন, ছাত্রদলের শীর্ষ নেতাদের এ বিষয়ে কঠোর হতে হবে। সন্ত্রাসীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেওয়া যাবে না।

দলের নেতাকর্মীদের মতে, ছাত্রদলের কমিটি গঠন নিয়ে সৃষ্ট বিরোধের জের ধরে গত শনিবার রাতে মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সহপ্রচার সম্পাদক ফয়জুল হক রাজু খুন হন। সিটি নির্বাচনে দলের প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরীর বিজয়ের পর রাজুসহ নেতাকর্মীরা বিজয়মিছিলে অংশ নেন। মিছিলের পর কুমারপাড়া পয়েন্টে নিজ দলের প্রতিপক্ষ গ্রুপের ক্যাডাররা তাকে কুপিয়ে হত্যা করে। তার শরীরে ৪০টি আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়। গত ১ জানুয়ারি নগরীতে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর শোভাযাত্রায় ধাক্কাধাক্কির জের ধরে আবুল হাসনাত শিমুকে ছুরিকাঘাত করে প্রতিপক্ষ গ্রুপের ক্যাডাররা। পরে হাসপাতালে মারা যান শিমু। শিমু ছিলেন মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সহসাংগঠনিক সম্পাদক।

২০১৪ সালের ২৭ জুন পাঠানটুলায় শুধুমাত্র গ্রুপ বদলের কারণে খুন হন গোবিন্দগঞ্জ কলেজ ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি জিল্লুল হক জিলু। ২০১২ সালের ডিসেম্বরে নগরীর শিবগঞ্জে নিজ দলের ক্যাডারদের হাতে খুন হন ছাত্রদল নেতা সজিব আবদুল্লাহ। একই বছরের ২২ মার্চ নিজেদের কোন্দলের শিকার হয়ে খুন হন মাহমুদ হোসেন শওকত। ২০১০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে প্রতিপক্ষ গ্রুপের ক্যাডারদের হামলায় খুন হয় ছাত্রদল কর্মী সৌরভ। একই বছরের ছয় মে আভ্যন্তরীণ কোন্দলের শিকার হন ছাত্রদলের কর্মী সাজু আহমদ।

২০০৫ সালের ১৪ জুলাই শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজেদের বিরোধে খুন হন ছাত্রদল নেতা রফিকুল ইসলাম লিটন। ১৯৯৫ সালের ২১ নভেম্বর এমসি কলেজ ক্যাম্পাসে মুহিন খান ও একই বছর মজুমদারী এলাকায় মুরাদ চৌধুরী শিপারকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। ১৯৯৪ সালের নভেম্বর মাস। শুক্রবারের জুমার নামাজের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন সিলেট শহর ছাত্রদলের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক এনামুল হক মুন্না। ঠিক এমন সময়েই নিজ দলের ক্যাডারদের হামলায় কুমারপাড়ার বাসায় খুন হন মেধাবী ছাত্রনেতা মুন্না। শহরে অনলবর্ষী বক্তা হিসেবে মুন্নার ব্যাপক পরিচিতি ছিল।

১৯৯৩ সালের ২৩ মে সরকারি কলেজে ছাত্রদল কর্মী লাল খুন হন। ১৯৯১ সালে বিশ্বনাথ কলেজে ছাত্রদল কর্মী বিধান হত্যাকা-ের মধ্য দিয়েই বৃহত্তর সিলেটে ছাত্রদলের খুনোখুনির রাজনীতির সূত্রপাত হয়। একাধিক সাবেক ছাত্রদল নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল প্রতিষ্ঠার পর থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত সিলেটে ছাত্রদলে কোন দ্বন্দ্ব-সংঘাত ছিল না। ১৯৯১ সালে পুনরায় বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর জাসদ ছাত্রলীগ থেকে দলে দলে ছাত্রদলে যোগদানের পরই পাল্টে যেতে থাকে সিলেটে ছাত্রদলের রাজনীতি। সিলেট ছাত্রদলের শান্ত রাজনীতি হয়ে ওঠে অশান্ত। ঘটতে থাকে একের পর এক হত্যাকা-। যে রাজনীতির সর্বশেষ বলি হলেন ফয়জুল হক রাজু।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে সিলেট জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ফয়সল আহমদ চৌধুরী বলেন, যারাই রাজুকে খুন করেছে এটি নিন্দনীয় এবং দুঃখজনক। ছাত্ররা নেতৃত্বে থাকলে তো এমন হতো না। কোন্দল দমনে কঠোর পদক্ষেপের বিকল্প নেই বলে তিনি মনে করেন। সিলেট জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও বিএনপির কেন্দ্রীয় সদস্য মিজানুর রহমান চৌধুরী মিজান বলেন, বিজয়ের দিনে এমন ঘটনা নিঃসন্দেহে বেদনার। কমিটি নিয়ে ক্ষোভ ছিল বিরোধ ছিল তার মানে এই নয় যে একজনকে মেরে ফেলতে হবে। কেন্দ্র সমস্যার সমাধান করবে বলে তার আশা। প্রকৃত খুনীর শাস্তি হলে এমন হত্যাকান্ডের ঘটনা কমে আসবে।

সিলেট জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি এমরান আহমদ চৌধুরী বলেন, নেতৃত্বের ব্যর্থতার কারণেই হত্যাকাbge ঘটে। আমরা এর বিচার চাই। আর যেন কোনো মায়ের বুক খালি না হয়। এ জন্য কেন্দ্রকে কঠোর হতে হবে। বিএনপির কেন্দ্রীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক কলিম উদ্দিন আহমদ মিলন বলেন, ছাত্রদলের বিষয়গুলো পর্যালোচনা হচ্ছে। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে ছাত্রদল। আমরা ছাত্রদলের শীর্ষ নেতাদের দরকারি পদক্ষেপ নিতে বলেছি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close