নিজস্ব প্রতিবেদক

  ০৯ জুন, ২০১৮

বাজেট বাস্তবায়ন

কতটা সাপোর্ট দেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক

‘সমৃদ্ধ আগামীর পথযাত্রায় বাংলাদেশ’ শ্লোগানে এবারের প্রস্তাবিত বাজেট সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনির খাতে ইতিবাচক পদক্ষেপ আছে। আর সার্বজনীন পেনশন কাঠামো এবার ঘোষণা করা হবে। কর্পোরেট করহার কমানোর যে দাবি ছিল তা শেষ পর্যন্ত ব্যাংকিং খাতে কর কমানোয় সীমবদ্ধ হলো। সরকার বলছে সঞ্চয়পত্র নয়, এবার ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ঘাটতি মেটানো হবে। কিন্তু ব্যাংকিং খাতের এখন যা অবস্থা, তাতে তারা কেন্দ্রীয়ভাবে সরকারকে সেই সাপোর্ট কি দিতে পারবে? এবারের বাজেট নিয়ে এমন প্রশ্ন উঠেছে।

প্রসঙ্গত এটি দেশের ৪৭তম, আওয়ামী লীগ সরকারের ১৮তম এবং অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতের দ্বাদশ বাজেট।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বাজেটে কয়েকটি ভালো দিক আছে। যেমন: সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনার রূপরেখা ও বেসরকারি চাকরিজীবীদের জন্য পেনশন চালুর প্রস্তাব, ব্যক্তি শ্রেণির করমুক্ত আয়সীমা অপরিবর্তিত রাখা ইত্যদি। তবে বাজেট বাস্তবায়ন নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন অনেকে। বাজেটে রাজস্ব আদায়ের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে সেটা অর্জন করা অসম্ভব বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদ ও বিশেষজ্ঞরা।প্রতিবছর যে বাজেট ঘোষণা করা হয়, সংশোধিত বা প্রকৃত বাজেট তার চেয়ে গড়ে ২০ ভাগের মতো কম। এবারের বাজেট সবচেয়ে বড় বাজেট। কিন্তু অর্থবছরের শেষ দিকে বোঝা যাবে প্রকৃত বাজেট কত টাকার। তাই বাজেট বাস্তবায়নই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।

বাংলাদেশ সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি)-র অর্থনীতিবিদ ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘প্রস্তাবিত বাজেটের কাঠামোর দিকে তাকালে দেখা যায় বাজেটের আকার জিডিপির ১৭-১৮ শতাংশের একটা বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু এই বাজেটের অর্থায়ন গত বছরের মতোই অংকের হিসেবে মেলানোর চেষ্টা আছে। যেমন, রাজস্ব খাতে প্রস্তাবিত বাজেটে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩৩ শতাংশ। কিন্তু চলতি বাজেটের শেষে যে প্রবৃদ্ধি হয়েছে, তা হলো ১৭ দশমিক ৪ শতাংশ। বাজেটে এই দ্বিগুন রাজস্ব আদায়ের কাঠামোগত পরিকল্পনা আমরা দেখছি না। তাহলে এখানে তো বড় ধরনের ঘাটতি থেকে যাওয়ার কথা। সরকার কিভাবে সেটা পুরণ করবে। সরকার বলছে সঞ্চয়পত্র নয়, এবার ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ঘাটতি মেটানো হবে। কিন্তু ব্যাংকিং খাতের এখন যা অবস্থা, তাতে তারা কেন্দ্রীয়ভাবে সরকারকে সেই সাপোর্ট কি দিতে পারবে?

তিনি বলেন, ‘সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনির খাতে প্রস্তাবিক বাজেটে ইতিবাচক পদক্ষেপ আছে। আর সার্বজনীন পেনশন কাঠামো এবার ঘোষণা করা হবে। কর্পোরেট করহার কমানোর যে দাবি ছিল তা শেষ পর্যন্ত ব্যাংকিং খাতে কর কমানোয় সীমবদ্ধ হলো। ফলে এর বাইরের ব্যবসায়ীরা এর থেকে কোনো সুবিধা পাবেন না। তবে সরকার ফার্মাসিউটিক্যালসহ দেশীয় শিল্পের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ নিয়েছে।

তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, প্রতিবছরই বাজেট বাস্তবায়নে যে ঘাটতি তা কাটানোর কোনো উদ্যোগ নাই। বাজেটে এ নিয়ে নতুন আইনের তালিকা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু যারা বাস্তবায়ন করবেন, তাদের সক্ষমতার জায়গা একই রয়ে গেছে।

এদিকে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস) অর্থনীতিবিদ ড. নাজনীন আহমেদ বলেন, অর্থমন্ত্রী এ যাবৎ কালের সবচেয়ে বড় বাজেট প্রস্তাব করলেন। কিন্তু এটার বাস্তবায়ন নির্ভর করবে আমাদের জানা দুর্বলতাগুলো কিভাবে কাটিয়ে উঠতে পারি কিনা তার ওপর। করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানো দরকার ছিল, তা হলো না। সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনি বাড়ানো হলেও এটার সঠিক বাস্তবায়নের ওপর নির্ভর করছে দরিদ্র মানুষের কল্যাণ। এটা নির্বাচন বা যে কারণেই করা হোক, আমি মনে করি ইতিবাচক। দেশীয় শিল্পের জন্য প্রণোদনা আছে। কিন্তু নারী উদ্যোক্তাদের জন্য আলাদা কিছু নাই। স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ আগের মতোই। এই খাতে বরাদ্দ বড়ানো দরকার।

তিনি বলেন, এবারের বাজেটে একান্ন হাজার কোটি টাকা শুধু সুদের জন্যই ব্যয় করার কথা বলা হয়েছে। এটা সঞ্চয়পত্রের সুদ। অভ্যন্তরীণ ঋণের কারণে এই সূদ দিতে হবে। এটা চলতে থাকলে অর্থনীতিকে এর ফল ভোগ করতে হবে।

তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, এই বাজেটে অনেক দিক ব্যালেন্স করার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু অতীতের দুর্বলতা দূর না হলে এই বাজেট বাস্তবায়নই হবে বাজেটের বড় চ্যালেঞ্জ।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist