পাঠান সোহাগ
মাদকাসক্তের চিকিৎসায় নতুন উদ্যোগ
দেশে আশঙ্কাজনক হারে ছড়িয়ে পড়েছে মাদক। বাড়ছে মাদকাসক্তের সংখ্যা, সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে এর বিস্তার ও চোরাকারবার। দিন দিন পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। কিন্তু সেই হারে মাদকের নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিকার নেই। এসব দিক বিবেচনা করে মাদকাসক্তদের চিকিৎসাসেবা ও নিয়ন্ত্রণের সরকারিভাবে নতুন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
এমনি এক পরিস্থিতিতে বিদ্যমান কেন্দ্রগুলোর শয্যা পরিধি বাড়ানো এবং প্রতিটি বিভাগীয় শহরে একটি করে মাদকাসক্ত নিরাময় ও পুনর্বাসনকেন্দ্র প্রতিষ্ঠার করা হবে। এই উদ্যোগে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল এলাকায় মাদকাসক্ত হাসপাতালটিতে বর্তমান ৫০ শয্যা থেকে বাড়িয়ে ১০০ শয্যায় উন্নীত করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে কেন্দ্রটি ২৫০ শয্যা চালু হবে। পাশাপাশি খুলনা ও চট্টগ্রামের পাঁচ বেডের হাসপাতালকে ২৫ শয্যায় উন্নীত করা হবে। অধিদফতরের সাংগঠনিক কাঠামো পুনর্বিন্যাস করে মোট ছয় হাজার ১০৭টি পদ সৃজন করে জনবল নিয়োগের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে ইতোমধ্যে সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে আলোচনাও হয়েছে। কেন্দ্রীয় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের এক কর্মকর্তা জানান, দেশে ৭০ লাখের মতো নারী-পুরুষ মাদকাসক্ত। বিপুলসংখ্যক মাদকাসক্তের জন্য সরকারি চারটিসহ বেসকারি মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রগুলোর সেবা অপর্যাপ্ত। মাদকাসক্তদের প্রায় ৫০ শতাংশ মানসিক রোগে ভুগলেও বেসরকারি বেশির কেন্দ্রেই মনোরোগ বিশেষজ্ঞ নেই। মাদকাসক্তের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের সুযোগও নেই। মাদকের অন্ধকার জগতে থেকে ৯৯ ভাগ মাদকাসক্তই চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের অভাবে আলোর পথে ফেরার সুযোগ পাচ্ছেন না। তারা পথ হারিয়ে জড়িয়ে পড়ছেন নানা অপরাধে। দেশে সংঘটিত অপরাধের ৭০ ভাগের সঙ্গে কোনো না কোনোভাবে মাদকের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। দীর্ঘমেয়াদি ব্যয়বহুল এ চিকিৎসা সবার পক্ষে বেসরকারিভাবে নেওয়া সম্ভব নয়। মাদকাসক্তদের বড় অংশই নিম্ন আয়ের। তাদের কথা চিন্তাই করেই সরকার এ উদ্যোগ হাতে নিয়েছে।
জানা গেছে, সারা দেশে মাদক পাচার ও আসক্তি রোধে অধিদফতরের সক্ষমতা বৃদ্ধির নতুন নতুন কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে। মাদকাসক্ত রোগীদের চিকিৎসার জন্য নতুন কেন্দ্র তৈরি হবে এ কার্যক্রমের আওতায়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা ডিভিশনের আওতায় দেশের আটটি বিভাগীয় শহরে একটি করে মাদকসক্তি নিরাময় ও পুনর্বাসনকেন্দ্র প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সারা দেশে মাদকাসক্তির চিকিৎসা ও পুনর্বাসনে আরো পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের।
কেন্দ্রীয় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক মো. মেহেদী হাসান বলেন, আগামী জুলাই মাসে প্রশাসনিক দফতরটিকে সেগুনবাগিচা স্থানান্তর করা হবে। পরে এ জায়াগায় ২৫০ শয্যায় উন্নীত হবে। প্রতি জেলায় মাত্র ছয়জন করে ‘ল এনফোর্সমেন্ট (আইন প্রয়োগকারী) সহ মোট ১৩ জন জনবল রয়েছে। যেখানে প্রয়োজন ৪১ জন। তাই মাদক পাচার, আসক্তিরোধে অধিদফতরের সক্ষমতা বৃদ্ধির করে একে ঢেলে সাজানোর প্রক্রিয়া চলছে। সাংগঠনিক কাঠামো অনুযায়ী, সারা দেশে এক হাজার ৭০৬ জন জনবল কাজ করছেন। যাদের অধিকাংশই নিরাময় পুনর্বাসনের জন্য নিয়োজিত। এ প্রতিষ্ঠানের পরিবহন সুবিধাসহ আধুনিক যন্ত্রপাতিরও ঘাটতি রয়েছে। অধিদফতরের সাংগঠনিক কাঠামো পুনর্বিন্যাস করে মোট ছয় হাজার ১০৭টি পদ সৃজন করে জনবল নিয়োগের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এটি বাস্তবায়ন হলে মাদকাসক্তিমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে জিরো টলারেন্স নীতি বাস্তবায়ন হবে।
জানা যায়, দেশে মাদকের বিস্তার রোধ ও এর বিরুদ্ধে জনসচেতনতা সৃষ্টিতে ‘দ্য কোরিয়া ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি’ (কোইকা) অধিদফতরকে ৪০ লাখ মার্কিন ডলার অর্থ সাহায্য প্রদানের আশ্বাস দিয়েছে। এ নিয়ে এক চুক্তিও স্বাক্ষর হয়েছে। এসব অর্থের ছয় লাখ ৩০ হাজার মার্কিন ডলার অধিফতরের মাদক-সংক্রান্ত ইনফরমেশন ম্যানেজমেন্ট তৈরিতে, পাঁচ লাখ ডলার কোরিয়ান এক্সপার্টদের জন্য, দুই লাখ ৩০ হাজার ডলার প্রশিক্ষণ বাবদ, ১৬ লাখ ৫০ হাজার ডলার যন্ত্রপাতি ক্রয়, এক লাখ ৮০ হাজার ডলার সভা-সেমিনার বাবদ, ৯৫ হাজার ডলার ভিডিও তৈরি ও প্রচার, পাঁচ লাখ ৬৫ হাজার ডলার প্রকল্প পরিচালনাসহ অন্যান্য ব্যয় এবং এক লাখ ৫০ হাজার মার্কিন ডলার প্রকল্প মনিটরিং ও মূল্যায়ন কাজে বাজেট প্রদান করবে। সকল কার্যক্রম ২০১৯ সালে শেষ হবে বলে সম্ভাব্য সময় নির্ধারণ করা হয়েছে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের মহাপরিচালক মো. জামাল উদ্দীন আহমেদ বলেন, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ করতে হলে পুরো আমাদের এ অধিদফতরকে নতুন করে সাজানো দরকার। এজন্য কেন্দ্রীয় মাদক নিরাময় কেন্দ্রকে ৫০ থেকে ১০০ শয্যায় উন্নীত করা হয়েছে। এ ছাড়া প্রতিটি বিভাগীয় শহরে ৫০ শয্যার মাদক নিরাময় হাসপাতাল নির্মাণ করবে সরকার। তিনি আরো বলেন, জনবল বাড়াতে সংশ্লিষ্টদের মধ্যে বৈঠকও হয়েছে। ইতোমধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের অধীন ১২টি পদের বিপরীতে অধিদফতরে ২৪২ জন জনবল নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়েছে।
"