reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ১৭ এপ্রিল, ২০২২

মহাবিশ্ব কি? কিভাবে এর সৃষ্টি হয়েছে!

ছবি : সংগৃহীত

মহাবিশ্ব কি? এই প্রশ্নটা বিজ্ঞানপ্রেমীদের প্রথম একটি প্রশ্ন। সময় এবং স্থানের অন্তর্ভুক্ত প্রতিটি বিষয় নিয়ে মহাবিশ্ব। মহাবিশ্ব, যাকে আমরা ইংরেজিতে ইউনিভার্স বলি। মহাবিশ্ব সুবিশাল। এর সঠিক সংজ্ঞা আজও কেউ দিতে পারেনি।

বিজ্ঞানীরা বহু বছর ধরে মহাবিশ্ব নিয়ে গবেষণা করছেন। তারা নক্ষত্র ও গ্রহের দিকে তাকায় আর পর্যবেক্ষণ করছে। এই নক্ষত্র আর গ্রহ নিয়ে গবেষণাকে জ্যোতির্বিজ্ঞান বলা হয়। তারা মহাবিশ্বের আকার খুঁজে বের করতে চায়। এর উত্তর এখনও তাদের ধারণার বাইরে। কিন্তু তারা জানে যে, এটি এখনও বাড়ন্ত অবস্থায় রয়েছে, তা কবে থামবে কেউ জানে না।

মহাবিশ্ব কি

নাসার মতে, মহাবিশ্ব একটি বড়-খোলা জায়গা। আপনি-আমি এই মহাবিশ্বে আছি। যে বিষয়গুলো আপনি দেখতে পাচ্ছেন না, সেগুলোও এর মধ্যে আছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় নক্ষত্ররাও আছে, যেমনঃ সূর্য। এমনকি পৃথিবীর ক্ষুদ্রতম জিনিসগুলোও মহাবিশ্বের অংশ, যেমনঃ এমিবা, এন্টামিবা। আমরা আসলে জানি না মহাবিশ্ব কত বড়!

মহাবিশ্বই সবকিছু। এর মধ্যে রয়েছে সকল স্থান, এবং সকল পদার্থ এবং শক্তি যা মহাকাশে রয়েছে। ঘড়ির কাটা ঘোরা এমনকি সময়ও এই মহাবিশ্বের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত এবং অবশ্যই, এটি আপনার নিজেকেও অন্তর্ভুক্ত করে।

মহাবিশ্বের আদ্যপান্ত আলোচনা

পৃথিবী এবং চাঁদ মহাবিশ্বের অংশ, এছাড়া অন্যান্য গ্রহ এবং চাঁদের মত আরও কয়েক ডজন উপগ্রহ এর মধ্যে পড়ে। আমরা জানি যে, পৃথিবী সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে, তেমনি গ্রহাণু এবং ধূমকেতুও সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে। সূর্য, মিল্কিওয়ে (বিশেষ ছায়াপথ) গ্যালাক্সির শত শত বিলিয়ন নক্ষত্রের মধ্যে একটি, এবং এই নক্ষত্রগুলোর বেশিরভাগেরই নিজস্ব গ্রহ রয়েছে, যা এক্সোপ্ল্যানেট নামে পরিচিত।

নক্ষত্র নেবুলা ডব্লিউ৫১ হল মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির বৃহত্তম “স্টার ফ্যাক্টরি” গুলোর মধ্যে একটি। এই ধরনের “স্টার ফ্যাক্টরি” লক্ষ লক্ষ বছর ধরে কাজ করতে পারে। যদিও মহাবিশ্বকে একটি অদ্ভুত জায়গা বলে মনে হতে পারে, তবে এটি আমাদের থেকে খুব বেশী দূরে নয়। কেননা, আমরা এর মধ্যে বসবাস করছি। বিশ্বাস নাও হতে পারে। তবে আসুন একটু ভেভে দেখি- আপনি এই মুহূর্তে যেখানেই থাকুন না কেন, বাইরের স্থানটি মাত্র ৬২ মাইল (১০০ কিলোমিটার) দূরে।

দিন বা রাত, আপনি বাড়ির ভিতরে বা বাইরে থাকুন না কেন, ঘুমিয়ে আছেন, মধ্যাহ্নভোজন করছেন বা ক্লাস করছেন, বাইরের স্থানটি আপনার মাথার উপরে মাত্র কয়েক ডজন মাইল উপরে। এটা ঠিক আপনার নিচেও আছে। প্রায় ৮,০০০ মাইল (১২,৮০০ কিলোমিটার) আপনার পায়ের নীচে – পৃথিবীর বিপরীত দিকে – বাইরের মহাকাশের অবিস্মরণীয় ভ্যাকুয়াম এবং বিকিরণকে লুকিয়ে রাখে।

মানে আমাদের মাথার উপরে যেমন বিস্তৃত একটি জগত আছে তেমনি পায়ের নিচে ও এমন একটি জগত আছে। টেকনিক্যালি চিন্তা করলে আপনিও বুঝতে পারবেন যে, আপনি এই মুহূর্তে মহাকাশেই আছেন। মানুষ ভাবে মহাকাশ একদিকে আর পৃথিবী একদিকে, আসলে পৃথিবী একটি গ্রহ, এবং এটি অন্যান্য গ্রহের মতো মহাকাশ এবং মহাবিশ্বের অংশে রয়েছে।

সৌরজগত কি?

মহাবিশ্বের কথা বলতে প্রথমে আমাদের মাথায় সৌরজগত এবং তার গ্রহগুলোর কথাই আসে। সৌরজগতের ৮ টি গ্রহ রয়েছে। গ্রহগুলির মধ্যে আবার ভিন্নতা আছে, যেমনঃ অভ্যন্তরীণ, পাথুরে গ্রহগুলি হল বুধ, শুক্র, পৃথিবী এবং মঙ্গল। বাইরের গ্রহগুলি হল গ্যাসপ্রধান তাদের মধ্যে রয়েছে জায়েন্ট বৃহস্পতি ও শনি এবং বরফের গ্রহ হল ইউরেনাস এবং নেপচুন।

এছাড়া ও বামুন গ্রহ নামের একধরনের ছোট গ্রহ রয়েছে যাদেরকে বিজ্ঞানীদের ভাষায় বলা হয় এক্সোপ্লানেট। প্লুটো হল এমন একটি বামুন গ্রহ।

বুধ: সৌরজগতের ক্ষুদ্রতম গ্রহ এবং সূর্যের নিকটতম গ্রহ বুধ পৃথিবীর চাঁদের চেয়ে সামান্য বড়। পৃথিবী থেকে সূর্যকে যেমন দেখায়, বুধের পৃষ্ঠ থেকে, সূর্যকে তিনগুণেরও বেশি বড় দেখায় এবং সূর্যের আলো সাতগুণ বেশি উজ্জ্বলও হয়। সূর্যের এত কাছে থাকার শর্তেও বুধ সৌরজগতের উষ্ণতম গ্রহ নয়।

এটি চাঁদের থেকে কিছুটা বড়। এটি সবচেয়ে দ্রুততম গ্রহ, যা প্রায় ৮৮ দিনে সূর্যকে একবার প্রদক্ষিণ করে।

শুক্র: শুক্র গ্রহটি সূর্য থেকে দ্বিতীয় গ্রহ এবং পৃথিবীর নিকটতম গ্রহের প্রতিবেশী। শুক্রগ্রহের কার্বন ডাই অক্সাইডে ভরা একটি পুরু, বিষাক্ত বায়ুমণ্ডল রয়েছে, এই গ্রহটি বিষাক্ত এবং সৌরজগতের উষ্ণতম গ্রহ। শুক্রগ্রহের পৃষ্ঠের তাপমাত্রা প্রায় ৯০০ ডিগ্রি ফারেনহাইট (৪৭৫ডিগ্রি সেলসিয়াস) যা সীসা নিমেষেই গলাতে পারে।

শুক্রগ্রহের পৃষ্ঠে বায়ু চাপ রয়েছে – পৃথিবীর চেয়ে ৯০ গুণেরও বেশি যা সাধারণত সমুদ্রের নীচে অনুভূত হয়। শুক্রগ্রহে, সূর্য পশ্চিম দিকে উঠে এবং পূর্ব দিকে অস্ত যায়, যা পৃথিবীর পুরো উল্টো।

পৃথিবী: আমাদের বাসস্থান গ্রহটি সূর্য থেকে দূরবর্তী তৃতীয় গ্রহ, এবং একমাত্র গ্রহ যেখানে প্রাণের অস্তিত্ব আছে। যদিও পৃথিবী সৌরজগতের পঞ্চম বৃহত্তম গ্রহ, তবে এটি আমাদের সৌরজগতের একমাত্র গ্রহ যার পৃষ্ঠে পানি রয়েছে। নিকটবর্তী শুক্রগ্রহের চেয়ে সামান্য বড়, পৃথিবী সূর্যের নিকটতম চারটি গ্রহের মধ্যে সবচেয়ে বড়, যার সবকটিই শিলা এবং ধাতু দিয়ে তৈরি।

পৃথিবীর বয়স কমপক্ষে ৪ হাজার ৫৪৩ বিলিয়ন বছর। পৃথিবী ব্যতীত সমস্ত গ্রহই গ্রিক এবং রোমান দেব-দেবীদের নামে নামকরণ করা হয়েছিল। যাইহোক, পৃথিবী নামটি একটি জার্মানীয় শব্দ, যার অর্থ হল “মাটি”।

মঙ্গল: মঙ্গল গ্রহ সূর্য থেকে দূরবর্তী চতুর্থ গ্রহ যা ধুলোময়, ঠান্ডা, মরুভূমিবিশিষ্ট জায়গা যেখানে খুব পাতলা বায়ুমণ্ডল রয়েছে। মঙ্গল গতিশীল গ্রহ। এই গ্রহটি নিয়ে সবচেয়ে বেশি গবেষণা করা হয়েছে, যেখানে বিজ্ঞানীরা বলেছেন যে, এই গ্রহে এলিয়েন আছে। এই বিষয় নিয়ে অনেক নাটক, সিনেমা ও তৈরি হয়েছে।

বৃহস্পতি: সূর্য থেকে পঞ্চম দূরবর্তী বৃহস্পতি, এখন পর্যন্ত, সৌরজগতের বৃহত্তম গ্রহ। এটি সর্বপ্রথম গেলিলিও আবিস্কার করেন। বৃহস্পতির জলবায়ু আসলে অ্যামোনিয়া এবং পানি, মেঘ, হাইড্রোজেন এবং হিলিয়ামের বায়ুমণ্ডল দ্বারা ঘেরা। এই গ্রহে একটি ঝড় হয় যাকে বলা হয় আইকনিক রেড স্পট, যা শত শত বছর ধরে চলছে।

শনি: শনি গ্রহটি সূর্যের ষষ্ঠ দূরবর্তী গ্রহ এবং সৌরজগতের দ্বিতীয় বৃহত্তম গ্রহ। এই গ্রহের চারপাশে একটি রিং রয়েছে যা এটিকে অন্য গ্রহগুলো থেকে আলাদা করেছে। এর মুল উপাদান হল হাইড্রোজেন এবং হিলিয়াম।

ইউরেনাস: এটি সূর্য থেকে দূরবর্তী সপ্তম গ্রহ, এবং সৌরজগতের তৃতীয় বৃহত্তম গ্রহ। ইউরেনাস ১৭৮১ সালে জ্যোতির্বিজ্ঞানী উইলিয়াম হার্শেল আবিষ্কার করেছিলেন, যদিও তিনি মূলত ভেবেছিলেন যে এটি একটি ধূমকেতু বা একটি নক্ষত্র।

নেপচুন: দৈত্য নেপচুন সৌরজগতের অষ্টম এবং সবচেয়ে দূরবর্তী গ্রহ। এটিকে ঠাণ্ডা এবং অন্ধকার গ্রহ ও বলা হয়। পৃথিবীর তুলনায় সূর্য থেকে ৩০ গুণেরও বেশি দূরে, নেপচুনই সৌরজগতের একমাত্র গ্রহ যা খালি চোখে দেখা যায় না এবং এটি আবিষ্কারের আগে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছিল। ২০১১ সালে নেপচুন ১৬৫ বছরে র্প্রথমবারের মত কক্ষপথ সম্পন্ন করে।

বামুন গ্রহ

গ্রহ আর বামুন গ্রহের মধ্যে মুল পার্থক্য হল, আকারে আর গঠনে। বামুন গ্রহ গুলো সাধারণত বেশি গোলাকৃতির হয়। নেপচুনের বাইরেও আরও বামুন গ্রহ আবিষ্কৃত হয়েছে। তবে এর মধ্যে বেশ পরিচিত বামুন গ্রহগুলি হল সেরেস, প্লুটো, মেকমেক, হাউমিয়া এবং এরিস।

পৃথিবীর বয়স কত

এটি আসলে অনেক আলোচিত প্রশ্ন পৃথিবীর বয়স কত? পৃথিবীর বয়স যতই হোক তবে, তা মহাবিশ্বের একটি ক্ষণস্থায়ী বস্তু। মহাবিশ্ব শুরু হওয়ার পর থেকে প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ সময় পৃথিবীর অস্তিত্বও ছিল না। ভবিষ্যতে ও থাকবে না।

এখন থেকে কয়েক বিলিয়ন বছর পর, সূর্য প্রসারিত হবে, বুধ শুক্রকে গ্রাস করবে এবং পৃথিবীর আকাশকে ভরাট করবে। এমনকি এটি পৃথিবীকে গ্রাস করার জন্য যথেষ্ট প্রসারিত হবে,একদম গিলে ফেলার মত।

যদিও ভবিষ্যতে আসলে কি আছে তার সঠিক ভবিষ্যদ্বাণী করা কঠিন, তবে অতীত থেকে কিছুটা হলে ও ধারণা পাওয়া যায় কি হতে পারে সামনে। পৃথিবীতে এবং গ্রহাণুতে আইসোটোপের তেজস্ক্রিয় ক্ষয় নিয়ে গবেষণা করে বিজ্ঞানীরা জানতে পেরেছেন যে আমাদের গ্রহ এবং সৌরজগত প্রায় ৪.৬ বিলিয়ন বছর আগে গঠিত হয়েছিল।

মহাবিশ্বের বয়স কত

অনেকে বলেন যে, মহাবিশ্বের বয়স প্রায় ১৩.৮ বিলিয়ন বছর বলে মনে হয়। প্রাচীনতম নক্ষত্রের বয়স এবং মহাবিশ্বের প্রসারের হার পরিমাপ করে বিজ্ঞানীরা এই সমীকরণটি দিয়েছেন।

তারা গ্যালাক্সি থেকে আলোতে যে ডপলার শিফট হয় তা পর্যবেক্ষণ করে দেখতে পায় যে, গ্যালাক্সিগুলো পৃথিবীর কাছ থেকে এবং একে অপরের কাছ থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। অদূর ভবিষ্যতে ছায়াপথগুলো এত দূরে থাকবে যে পৃথিবী থেকে তাদের আলো দেখা যাবে না।

অন্য ভাবে বলতে গেলে, পদার্থ, শক্তি এবং মহাবিশ্বের সমস্ত কিছু এখনকার চেয়ে বেশি আঁটসাঁট ছিল। তারা আগে কাছাকাছি ছিল, এখন দূরে চলে যাচ্ছে।

মহাবিশ্বের জন্ম নিয়ে বেশি ভাবার দরকার নেই। মহাবিশ্বের কোন অস্তিত্বই ছিল না। মহাকাশের কোনো অস্তিত্ব ছিল না। সময় মহাবিশ্বের অংশ এবং তাই এর কোন অস্তিত্ব ছিল না। সময়ও শুরু হয়েছিল বিগ ব্যাং দিয়ে। সময়ের সাথে সাথে মহাবিশ্ব ধারণাটি গঠিত হয় এবং তার সাথে সাথে মহাকাশ ধারণাটি ও গঠিত হয়।

মহাবিশ্ব কি দিয়ে তৈরি

মহাবিশ্বে সব ধরণের শক্তি এবং পদার্থ রয়েছে। মহাবিশ্বের পদার্থের বেশিরভাগই হাইড্রোজেনের পরমাণুর মত, যা শুধুমাত্র একটি প্রোটন এবং একটি ইলেক্ট্রন দিয়ে তৈরি। একসাথে অনেক ট্রিলিয়ন পরমাণু মিলে একটি ধূলিকণা তৈরি হয়, যা মহাবিশ্বের একটি বেসিক উপাদান। এছাড়াও কয়েক টন কার্বন, সিলিকা, অক্সিজেন, বরফ এবং কিছু ধাতু একসাথে, মিলে একটি গ্রহাণু তৈরি হয়। অথবা তেত্রিশ লক্ষ ত্রিশ হাজার হাইড্রোজেন এবং হিলিয়ামের মিক্সারে একটি সূর্যের সমান নক্ষত্র তৈরি হয়ে যায়।

গ্যালাক্সি, তারার ক্লাস্টার, গ্রহ, বামন গ্রহ, চাঁদ, রিং, রিংলেট, ধূমকেতু, উল্কাপিণ্ড, পাতালপুরীর পানি, পাথর, সিরিফ এই সবকিছু মিলেই মহাবিশ্ব গঠিত। এছাড়াও হোম গ্যালাক্সি, মিল্কি ওয়েতে কমপক্ষে ১০০ বিলিয়ন নক্ষত্র রয়েছে এবং কমপক্ষে ১০০ বিলিয়ন ছায়াপথ রয়েছে। এই সব কিছুই মহাবিশ্বের অংশ।

এককথায় বলতে গেলে মহাবিশ্ব অনেকগুলো ‘ডার্ক ম্যাটার আর ডার্ক এনার্জির সমন্বয়ে গঠিত’ যা আজ অবধি কেউ খোলাসা ভাবে বুঝতে পারেনি। আমরা কল্পনাও করতে পারিনা আরো কত ধরণের রহস্য লুকিয়ে আছে এই মহাবিশ্বের মাঝে।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
মহাবিশ্ব,বিজ্ঞান,ইউনিভার্স
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close