বদরুল আলম মজুমদার

  ০৩ এপ্রিল, ২০২০

উত্তরায় প্রকৃত অসহায় কত, এগিয়ে আসছেন কারা?

রাজধানীর বৃহত্তর উত্তরা এলাকায় মহামারি করোনায় গৃহবন্দি নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া মানুষের পাশে এগিয়ে আসছেন সমাজের বিত্তবানরা। হাতে সহযোগিতার একটি ব্যাগ বা পুঠলা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনের লোকজনকেই এখন পর্যন্ত বেশি দেখা যাচ্ছে। তবে প্রয়োজনের তুলনায় তা নেহায়েতই সামান্য। বিত্তবান মানুষের সংখ্যা এ অঞ্চলে বেশি থাকলেও কম নেই খেটে খাওয়া মানুষ। তবে সাহায্যের হাত নিয়ে এখন পর্যন্ত যারাই এগিয়ে এসেছেন তাদের সাধুবাদ দিচ্ছেন সবাই। এখনো পর্যন্ত যারা সহযোগিতা নিয়ে গরিবের পাশে দাড়িছেন এ সংখ্যা শতকরা হিসেবে একেবারেই নগণ্য। ঢাকা-১৮ আসন এলাকার আনাচে-কানাচে হাজার হাজার বিত্তবান মানুষ বাস করছে। যাদের মাসিক আয় দশ লাখ টাকারও অধিক। তাছাড়া এখানে যারা রাজনীতি করেন তারাও সংখ্যায় কম নয়, যাদের অধিকাংশই হাজার বা শত কোটি টাকার মালিক।

বিত্তবানদের এমন অবস্থানের বিপরীতে এসব এলাকায় কতগুলো গরিব বা খেটে খাওয়া পরিবার বসবাস করে তার একটি হিসেব জানতে কথা হয় স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সাথে। তাদের সাথে আলাপ করে জানা যায়, মডেল টাউন উত্তরার দুটি থানা এলাকায় খুববেশি খেটে খাওয়া মানুষ বাস করে না। তারপরও উত্তরা পূর্ব ও পশ্চিম থানা এলাকা মিলে প্রায় ৫ হাজার নিম্ন আয়ের মানুষ বাস করে। যাদের আয় রোজগারের আসল উৎস হচ্ছে সেক্টরের উচ্চবিত্তরা। এ দুটি থানা তথা উত্তর সিটির ১ ও ৫১ নং ওয়ার্ডের জনপ্রতিনিধিদ্বয় সাধ্যমতো ত্রাণসামগ্রী বিলি করে যাচ্ছেন। তবে ত্রাণ বিতরণে অত্যন্ত সুন্দর একটি কর্মপন্থা নিয়ে কাজ করছেন ৫১ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোহাম্মদ শরিফুর রহমান। তার নির্বাচনী ও তৎসংলগ্ন এলাকা নিয়ে জরিপ করে ১৭ প্লাস পরিবারকে শনান্ত করেছেন। উত্তরা ১১, ১২, ১৩, ১৪ ও ১৫ নং সেক্টরে ১৭শ নিম্ন আয়ের পরিবার বাস করে। গত ১ এপ্রিল থেকে এ পরিবারগুলোতে সহযোগিতা করে আসছেন তিনি। তার পরিকল্পনা অনুযায়ী এসব পরিবারের মাঝে আগামী ১ মাস খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করবেন। এজন্য তাদের লাইন ধরে দাঁড়াতে হবে না। শতাধিক স্বেচ্ছাসেবী বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রতি ৫ দিনের খাবার দিয়ে আসবেন। রেশনিং ভিত্তিতে প্রতি পরিবারের কাছে মাসে ৬ বার দিয়ে আসবেন নিত্য প্রয়জোনীয় খাদ্যসামগ্রী। যাতে পরবর্তী ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত সঠিকভাবে তারা সরকারি নির্দেশনা মানতে পারেন।

কাউন্সিলর শরিফুর রহমানের এ পরিকল্পনা নিয়ে কথা হয় স্থানীয় আওয়ামী লীগের একজন প্রভাবশালী নেতার সঙ্গে, যিনি ঢাকা-১৮ আসনে ত্রাণ বিতরণের পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছেন। তিনি প্রতিবেদককে বলেন, শরিফের এ মডেলটি ধরে কাজ করলে, অত্র নির্বাচনী এলাকার প্রতিটি ওয়ার্ডে স্থানীয় জনপ্রতিনিধির সমন্বয়ে কাজ করতে পারলে আর সমাজের সকল বিত্তবান লোকগুলো এগিয়ে আসলে একটি পরিবারও না খেয়ে থাকবে না। ইনশাআল্লাহ আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

উত্তরার পার্শ্ববর্তী তুরাগ থানা এলাকায় সবছেয়ে বেশি নিম্ন আয়ের মানুষের বসবাস। সিটির ৫২, ৫৩ ও ৫৪ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলররা এরই মধ্যে সরকারি বরাদ্দপ্রাপ্ত ৫শ প্যাকেট খাদ্যসামগ্রী বিলি করেছেন। তবে সরকারি এসব বরাদ্দের বাইরেও আরো প্রায় দুই হাজার পরিবারের মাঝে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করছেন ৫৪ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর হোসেন যুবরাজ। এছাড়া ৫২ ও ৫৩ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলরের উদ্যোগে বড় পরিসরে খাদ্যসামগ্রী বিতরণের কোনো খবর পাওয়া যায়নি। তবে তারাও প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানা গেছে।

এছাড়া দক্ষিণ ও উত্তর খানের নিম্ন আয়ের মানুষের মাঝে সরকারি বরাদ্দের বাইরেও সাধ্যমতো ত্রান বিতরণ করছেন স্থানীয় কাউন্সিলররা। তবে অতি অল্প সময়ে সর্বাধিক সংখ্যক মানুষের মাঝে ত্রাণ বিলিয়ে যাচ্ছেন ৪৪ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর সফিক। তার এ উদ্যোগে অনুপ্রাণিত হয়ে এলাকার আরো অনেকে ত্রাণ নিয়ে মানুষের ঘরে ঘরে যাচ্ছেন।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধির বাইরে বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের নেতারা এগিয়ে আসছেন বিভিন্ন সহযোগিতা নিয়ে। ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মামুন সরকার এখন পর্যন্ত নিরলসভাবে ত্রাণ দিয়ে যাচ্ছেন নিম্ন আয়ের মানুষের মাঝে। বঙ্গবন্ধুর জন্ম শতবার্ষিকীর দিনে তিনিই প্রথম হ্যান্ড সেনিটাইজার ও মাক্স বিতরণের মধ্য উত্তরায় ত্রাণ কার্যক্রম শুরু করেন। যা এখন পর্যন্ত অব্যাহত রেখেছেন। তুরাগের স্বেচ্চাসেবক লীগ নেতা হাজি জাহিদুল হাসান নিজ উদ্যোগে ৫৪ নং ওয়ার্ডে ৬৫০টি পরিবারের মাঝে ৭ দিনের খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করেছেন। এছাড়া তার উদ্যোগে সমাজের বিত্তবানদের সহযোগিতায় আরো প্রায় ১ হাজার পরিবারের মাঝে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করেছেন। বিমানবন্দর থানা এলাকায় প্রথমবারের মতো মধ্যবিত্ত পরিবারের খোঁজখবর নিচ্ছেন থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সোহেল রেজা। তার এ উদ্যোগকে অনেকেই স্বাগত জানিয়েছেন। এছাড়া তুরাগ থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আরিফ হাসানের নেতৃত্বে প্রায় ৫ শতাধিক পরিবারের মাঝে খাদ্যসামগ্রী বিতরণের খবর পাওয়া গেছে।

আওয়ামী লীগ নেতাদের বাইরে বিএনপি নেতারাও বসে নেই, ৪৮ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আলী আকবরের নেতৃত্বে ত্রাণ কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। এছাড়া স্থানীয় বিএনপি নেতা আমজাদ হোসেনও সহযোগিতা করছেন নিম্ন আয়ের মানুষদের। ৪৭ নং ওয়ার্ডে বিএনপি নেতা হেলাল উদ্দিন তালুকদার ও তার ভাইয়েরা মিলে এখন পর্যন্ত প্রায় ৫ শতাধিক পরিবারের মাঝে ত্রাণ বিলি করেছেন। ৫৩ নং ওয়ার্ডে বিএনপি নেতা হাজি মোস্তফার সহধর্মিণী ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। তবে এসব বিতরণে হাজি মোস্তফা মাঠে না থাকায় লোকজন মশকরাও করছেন।

এর বাইরে উত্তরা ১২ নং সেক্টরের বাসিন্দা অ্যাড. আমান উল্লার ছেলে রাহিক ইবনে আমান প্রায় শতাধিক পরিবারের মাঝে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করে বিত্তবানদের এ কাজে এগিয়ে আসার উৎসাহ যোগাচ্ছেন।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আওয়ামী লীগ,করোনা,অসহায়,উত্তরা
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close