নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২৩ মার্চ, ২০২৩

গরুর মাংস ও মুরগির দাম কমানো না হলে আমদানির পরামর্শ

ছবি : সংগৃহীত

এযাবৎকালের সবচেয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে ব্রয়লার মুরগি। জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তর বলছে, মুরগির খাবারসহ অন্যান্য ব্যয় বৃদ্ধির পরও এক কেজি ব্রয়লার মুরগির উৎপাদন ব্যয় করপোরেট প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা। অন্যদিকে, প্রান্তিক খামারি পর্যায়ে খরচ ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা। তাতে বর্তমানে উৎপাদনসহ অন্য খরচ মিলিয়ে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগির দাম সর্বোচ্চ ২০০ টাকা হতে পারে। কিন্তু সেই ব্রয়লার মুরগিও বিক্রি হচ্ছে ২৯০ টাকা কেজি দরে। গরুর মাংসের দামও সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। এই পরিস্থিতিতে ব্যবসায়ীদের সর্বোচ্চ সংগঠনের নেতারা বলেছেন, গরুর মাংস ও মুরগির দাম কমানো না হলে তা আমদানি করা হবে।

রাজধানীর হাতিরপুল বাজারে বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয়েছে ২৯০ টাকা দরে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করা আল আমিন বলেন, ‘মাংস কিনি না অনেক দিন। রমজানের কারণে একটা ফার্মের মুরগি কিনতে চেয়েছিলাম। গত সপ্তাহেও দাম ছিল ২৫০ টাকা। কিন্তু দোকানি বলছে ২৯০ টাকা। কীভাবে কিনব?’

কাঁঠালবাগানের বাসিন্দা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মিজান হাওলাদার বলেন, ‘মাসের শেষ এখন। হাতে টাকা-পয়সা নেই। অথচ সব জিনিসের দাম বেশি। দেখার কেউ নেই।’ এ বিষয়ে ব্রয়লার মুরগি বিক্রেতা শামীম আহমেদ বলেন, ‘গত সপ্তাহেও ২৫০ বা ২৬০ টাকায় বিক্রি করেছি। বুধবার থেকে ২৮৫ টাকা ছাড়িয়ে গেছে। দাম যতই বাড়ুক বা কমুক, আমাদের কেজিপ্রতি লাভ ১০ থেকে ১৫ টাকা। যারা দাম বাড়ায়, তারা একটা সিন্ডিকেট। তাদের ধরুন।’

বনশ্রীর একজন স্কুল শিক্ষক ফারহানা বলেন, ‘সীমিত আয়ে কোনোমতে চলছি। রোজার বাহানায় বাজারে সব জিনিসের দাম বেড়েছে। দাম বেশি হওয়ায় গরু-খাসির মাংস অনেক দিন কিনি না, এবার মুরগির মাংসও খাওয়া বন্ধ করতে হবে।’

হাতিরপুল বাজারে ব্রয়লার মুরগির বিক্রেতা বাবুল মিয়া বলেন, আমরা পাইকারি বাজার থেকেই বেশি দামে কিনছি। বাজারে সরবরাহ কম থাকায় দাম বেড়েছে। তা ছাড়া ব্রয়লারের বাচ্চা আর ফিডের দাম বাড়তি থাকায় দামও বেড়েছে। টিসিবির সহকারী পরিচালক (বাজার তথ্য) নাসির উদ্দিন তালুকদার বলেন, ‘মঙ্গলবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে ২৭০ থেকে ২৮০ টাকায়। যা এক মাস আগেও ছিল ২১০ থেকে ২৩০ টাকা। সেই হিসাবে এক বছর আগে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয়েছে ১৬০ থেকে ১৭০ টাকায়। সব মিলিয়ে এক বছরে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগির দাম ১২০ টাকারও বেশি।’

এই অবস্থায় দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেন, পোলট্রিশিল্প যদি সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে, তাহলে তাদের সুরক্ষা দেওয়া বন্ধ করে দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে প্রয়োজনে উন্মুক্ত করে দিতে হবে মাংস ও ডিম আমদানি। এ বিষয়ে পোলট্রি শিল্পের উদ্যোক্তাদের সঙ্গে আমরা কথা বলব। তাদের যদি উৎপাদন খরচ বেড়ে যায়, তাহলে আমরা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে কয়েক মাসের জন্য মাংস ও ডিম আমদানির সুযোগ দেওয়ার অনুরোধ করব। তত দিনে দেশে দাম কমে আসবে।

রাজধানীর মতিঝিলে বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) এফবিসিসিআই কার্যালয়ে বিভিন্ন বাজার কমিটি ও পণ্যভিত্তিক ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন সংগঠনটির সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন। যদিও সভায় পোলট্রি শিল্পের কোনো ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতা উপস্থিত ছিলেন না।

গরুর মাংসের দাম নিয়ে এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, দুবাইয়ে গরুর মাংসের দাম ৫০০ টাকা। তারা ব্রাজিলসহ অন্য দেশ থেকে আমদানি করে। তাদের (দুবাই) নিজের দেশে কোনো গরুর খামার নেই। ভোক্তাদের সুরক্ষা দিতে প্রয়োজনে গরুর মাংসও আমদানি করা যেতে পারে।

এমন অতিরিক্ত দামে য়লার মুরগি বিক্রির কারণ জানতে চারটি প্রতিষ্ঠানকে তলব করেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) দুপুরে তাদের ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরে ডাকা হয়েছে। এই চার প্রতিষ্ঠান হলো কাজী ফার্মস লিমিটেড, আফতাব বহুমুখী ফার্মস লিমিটেড, সিপি বাংলাদেশ ও প্যারাগন পোলট্রি অ্যান্ড হ্যাচারি লিমিটেড।

জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পরিচালক (অতিরিক্তি দায়িত্ব) মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার এ বিষয়ে বলেছেন, অতিরিক্ত দামে মুরগি বিক্রির কারণ জানতে তাদের ডাকা হয়েছে। প্রতি কেজি মুরগির উৎপাদন খরচ তারা বলছে ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা। কিন্তু লাভের তো একটা সীমা থাকা উচিত। আমরা প্রমাণ পেয়েছি তারা ২২০ টাকা করে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি করছে। তবে তলবের পর মুরগির খামার পর্যায়ে দাম ১৯০ থেকে ১৯৫ টাকা নির্ধারণ করেছে চার কোম্পানি। শুক্রবার (২৪ মার্চ) থেকে কাজী ফার্মস, প্যারাগন পোলট্রি অ্যান্ড হ্যাচারি, আফতাব বহুমুখী ফার্মস ও সিপি বাংলাদেশের খামার পর্যায়ে এ দামে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হবে। তবে ভোক্তা পর্যায়ে মুরগির দাম কত হবে সেটা নির্ধারণ হয়নি।

এর আগে কোম্পানিগুলো অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে ব্রয়লার মুরগির অযৌক্তিক মূল্যবৃদ্ধির কারণ ব্যাখ্যা করেছেন। এরপর সভাকক্ষে সংবাদ সম্মেলনে এ নির্ধারিত দামের কথা জানিয়েছেন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান।

এ সময় তিনি বলেন, কোম্পানিগুলো ২৩০ টাকায় খামার পর্যায়ে ব্রয়লার বিক্রি করেছে। কাল থেকে ১৯০-১৯৫ টাকায় বিক্রি করবে। আশা করছি ভোক্তা পর্যায়ে এখন দাম ৩০-৪০ টাকা কমবে। ভোর রাতে গোয়েন্দা সংস্থা ও ভোক্তার কর্মকর্তারা আমাকে জানিয়েছেন সারা দেশে পাইকারিতে ২২০-২৩০ টাকায় ব্রয়লার বিক্রি হচ্ছে। সেটা হাত বদলে ২৬০ হচ্ছে খুচরায়।

সফিউজ্জামান বলেন, প্রতিটি ভোক্তা এখন মুরগির দাম নিয়ে ভুগতে হচ্ছে। আশা করছি এ পদক্ষেপের কারণে দুই-তিন দিনের মধ্যে মুরগির দাম কমে আসবে। কোম্পানিগুলো আমাদের বলছে ফিডের দাম বাড়ার কারণে এখন উৎপাদন খরচ বেড়েছে। তবে আমরা এও বলছি মুরগির দাম কোনোভাবেই ২০০ টাকার বেশি যৌক্তিক নয়। কোনোভাবে ৫০-৬০ টাকা বাড়তি দাম কাম্য নয়।

আমরা কোম্পানিগুলোকে বলেছি, কোনো খাতে সরকার বেশি সমস্যা করলে, আমরা আপনাদের সাপোর্ট দেব। কিন্তু বাড়তি দাম মানব না। তাই তারা দাম কমানোর বিষয়ে রাজি হয়েছে। এখন খামার পর্যায় থেকে দাম নির্ধারিত হবে। এরপর হাত বদলের দাম কত বাড়ছে, সেটা আমরা দেখব। গোয়েন্দা সংস্থা তদারকি করবে।

পিডিএসও/এমএ

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
ব্রয়লার মুরগি,ট্রিপল সেঞ্চুরি
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close