মামুন আহম্মেদ, বাগেরহাট
হুমকীর মুখে পড়ছে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ও কুমির
সুন্দরবনে বিষ দিয়ে চলছে মাছ শিকার
বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবনের বিভিন্ন খালে একশ্রেণীর অসাধু জেলেদের বিষ দিয়ে মাছ শিকারের ফলে হুমকীর মখে পড়ছে বিভিন্ন প্রজাতির মাছসহ লবন পানির কুমির। হাত বাড়ালেই মাছ শিকারের ওষুদের সহজ লভ্যতার কারনে এসব কীটনাশক বা বিষরে ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রেহাই পাচ্ছে না সুন্দরবনের জীব-বৈচিত্রও। সুন্দরবনে র্যাব, কোস্টগার্ড, বনরক্ষীসহ আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠর নজরদারীর পরও থেমে নেই বিষ দিয়ে মাছ শিকারের এই ধ্বংসজ্ঞ। বেশি মুনাফার আশায় সুন্দরবনের বিভিন্ন নিষিদ্ধ খালে বিষ দিয়ে মাছ শিকার করার জন্য বন সংলগ্ন বাজার গুলোর কীটনাশকের দোকান থেকে সহজে এ বিষ সংগ্রহ করছে অসাধু এক শ্রেনীর জেলেরা। সুন্দরবনের ৩১ দশমিক এক ৫ ভাগ এলাকা জুড়ে রয়েছে বিশাল জলভাগ। এখানকার অসংখ্য খালে আছে প্রায় তিন শতাধিক প্রজাতির মাছ। সুন্দরবন পূর্ব ও পশ্চিম বিভাগের চারটি রেঞ্জের আওতাধীন ১৮টি খালে সব ধরনের মাছ ধরার জন্য নিষেধাজ্ঞা থাকলেও এসকল খাল গুলোকেই বিষ দিয়ে মাছ শিকারের জন্য বেছে নেয় জেলেরা। বিভিন্ন সময় এসব খালে বিষ দিয়ে মাছ শিকারের অপরাধে একাধিক জেলে আইন শৃংখলা বাহিনীর হাতে আটক হলেও আইনের ফাক-ফোকর দিয়ে বেড়িয়ে এসে পুনরায় তারা একই অপরাধে জড়িয়ে পরছে।
এদিকে বিষ দিয়ে মাছ শিকারের ফলে শুধু সুন্দরবনের মাছ বা জীব-বৈচিত্র নয় হুমকীর পুখে পড়েছে লবন পানির কুমিরও। সম্প্রতি বেসরকারি সংস্থা সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড রিসার্চ ইন ন্যাচারাল রিসোর্সেস অ্যান্ড ম্যানেজমেন্টের (কারিনাম) সুন্দরবনের কুমির সমীক্ষায় বিষ দিয়ে মাছ শিকারের ফলে কুমিরের জন্য হুমকীর বিষয়টি উঠে এসেছে। কারিনামের এ প্রতিবেদনে সুন্দরবনের লবন পানির কুমিরের জন্য হুমকী যে বিষয় গুলো উল্লেখ করা হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে, আটকা পড়ে কুমিরের বাচ্চার মৃত্যু। জেলেদের মাধ্যমে পাচারকারীদের কাছে কুমিরের বাচ্চা বিক্রি। মধু আহরণ মৌসুমে বনের মধ্যে মৌয়ালদের চলাফেরায় কুমির ডিমে ঠিকমতো 'তা' দিতে পারে না। বিষ দিয়ে মাছ ধরা, তেল দূষণ ও শিল্প কারখানার বর্জ্য দূষণের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
বিষ দিয়ে শিকার করা মাছ খেলে মানবদেহের জন্য কি ধরনের ক্ষতি হতে পারে সে বিষয়ে বাগেরহাটের সিভিল সার্জন ডা. অরুন চন্দ্র বলেন, বিষ দিয়ে শিকার করা মাছ মানবদেহের জন্য মারাক্ষতক ক্ষতিকর। বিষাক্ত পানির মাছ খেলে মানুষের কিডনি ও লিভারে জটিলতা দেখা দিতে পারে।
কৃষি কাজে ব্যবহারের কীটনাশক দিয়ে মাছ শিকারের বিষয়ে মংলা উপজেলা কৃষি অফিসার আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘ফাইটার, রিপকর্ড এবং পেসিকল নামের কীটনাশক কৃষিকাজের জন্য চাষীরা ব্যবহার করে। এসকল কীটনাশক দিয়েই অসাধু জেলেরা সুন্দরবনের বিভিন্ন খালে প্রয়োগ করে মাছ শিকার করে থাকে। এই কীটনাশকের অপব্যবহার বন্ধে আমি একাধিকবার আইনশৃংখলা সভায় প্রশাসনকে কঠোর হওয়ার অনুরোধ করেছি।’
এসকল কীটনাশকের যত্রতত্র ব্যবহার বন্ধে করনীয় সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকা গুলোতে যে কয়টি সার বা কিটনাশকের দোকান রয়েছে তাদের মালিকদের এ কীটনাশের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে সচেতন করা যে পারে। পাশাপাশি মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর এ বিষ বা কীটনাশনের ব্যবহারে যাতে খারাপ কাজে না হয় সে জন্য শুধুমাত্র সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকায় এ কীটনাশক ব্যবহারের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের অনুমতিপত্র ব্যবহার করা যায় সেক্ষে এ কীটনাশকের অপব্যবহার অনেকআংশে কমানো সম্ভব।’
এ বিষয়ে কোস্টগার্ড পশ্চিমজোনের অপারেশন কর্মকর্তা লে. কমান্ডার ফরিদুজ্জামান বলেন, ‘সুন্দরবনে বিষ দিয়ে মাছ শিকারের কারনে শুধু অন্য প্রজাতির মাছই ধ্বংস হচ্ছে না, এর সঙ্গে বন ও পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। যেসব মহাজনরা বিষ দিয়ে বনের খালে জেলেদের পাঠাচ্ছে তাদেরকেও চিহ্নিত করে অভিযানের প্রস্তুতি নিচ্ছে কোস্টগার্ড।’
এ বিষয়ে বাগেরহাট পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মোঃ মাহামুদুল হাসান বলেন, ‘সুন্দরবনে বিষ দিয়ে মাছ শিকারের ক্ষেত্রে বনবিভাগ অঠোর অবস্থানে রয়েছে। কোন অসাধু জেলে যদি বিষ দিয়ে মাছ শিকার করে তার বিরুদ্ধে কঠোর আইননুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।’
পিডিএসও/রানা