কক্সবাজার প্রতিনিধি

  ০৭ জুন, ২০১৮

উখিয়ার ৩ শতাধিক ইয়াবা গডফাদার এখনো অধরা

কক্সবাজারের উখিয়ার সীমান্তে তিন শতাধিক ইয়াবা গডফাদার ধরাছোঁয়ার বাইরে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চলমান মাদকবিরোধী অভিযানেও ধরপাকড়ের আওতায় আসেনি এসব রাঘববোয়াল। এখন পর্যন্ত উখিয়ায় র‌্যাব-পুলিশের দৃশ্যমান কোনো অভিযান পরিচালিত হয়নি। ফলে তারা এখন ফুরফুরে মেজাজে রয়েছে। এ ছাড়া ইয়াবা পাচারে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ জড়িত রয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। জানা গেছে, তাদের কাছ থেকে খুবই কমমূল্যে পাওয়া যায় মরণঘাতী নেশাদ্রব্য ইয়াবা। দেশের ইয়াবা কারবারিরা তাদের কাছ থেকেই এসব মাদক কিনে থাকে।

এদিকে গত ২৬ মে টেকনাফে র‌্যাবের গুলিতে কমিশনার একরামুল হকের নিহতের ঘটনায় দেশজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। তাকে নিরাপরাধ হিসেবে জনমত তৈরি হয়। জনমতের চাপে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানা গেছে। এ ঘটনায় উখিয়া এবং টেকনাফের মাদকবিরোধী অভিযান ঝিমিয়ে পড়েছে। গত মঙ্গলবার পর্যন্ত উখিয়া-টেকনাফে উল্লেখযোগ্য কোনো মাদক গডফাদার, চিহ্নিত ইয়াবা কারবারিকে পুলিশ বা র‌্যাব গ্রেফতার করেনি। জনগণের প্রশ্নÑ উখিয়া-টেকনাফের ইয়াবা কারবারিরা কি আইনের হাত থেকে পার পেতে যাচ্ছে?

সূত্র মতে, রমজানের শুরু থেকেই দেশব্যাপী মাদকবিরোধী সাঁড়াশি অভিযান শুরু করে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা। এরই ধারাবাহিকতায় কক্সবাজারের বিভিন্ন উপজেলায় ‘বন্দুকযুদ্ধে’ এক ডজন মাদক ব্যবসায়ী নিহত, অস্ত্র ও মাদক উদ্ধার করা হয়েছে। মাদকের স্বর্গরাজ্য উখিয়ায় উল্লেখযোগ্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারেনি আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা। উখিয়া নাগরিক অধিকার বাস্তবায়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলামের দাবি, এ উপজেলায় তিন শতাধিক মাদক কারবারি রয়েছে। যারা ইয়াবা ও মাদক সেবন, বাজারজাতকরণ ও পাচারকাজে জড়িত।

উখিয়ায় মাদকবিরোধী অভিযানের ১৯ দিনেও আইন প্রয়োগকারী সংস্থা চিহ্নিত ইয়াবা পাচারকারীদের আটক করতে ব্যর্থ হওয়ায় জনমনে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়ছে। অনেকের অভিযোগ, মাদক ব্যবসায়ীদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, গাড়ি, বাড়ি, সহায়-সম্পত্তি বহাল তবিয়তে রয়েছে। এসব মাদক ব্যবসায়ীও নিজ নিজ অবস্থানে নিরাপদে অবস্থান করছে।

উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়নের উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, রোহিঙ্গারা প্রতিনিয়ত ইয়াবা পাচারে ব্যস্ত। তারা অনেকটা প্রকাশ্যে এ ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। আর রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে স্বল্পমূল্যে ইয়াবা কিনে ভালো লাভবান হচ্ছে স্থানীয় ইয়াবা ব্যবসায়ীরা। বিশেষ করে উখিয়া ইয়াবাবিরোধী জোরদার অভিযান না হওয়ায় বহাল তবিয়তেই রয়েছে ইয়াবা ব্যবসায়ীরা।

সরেজমিনে পালংখালী ইউনিয়নের থাইংখালী, তাজনিমারখোলা, রহমতেরবিল, ধামনখালী, আঞ্জুমানপাড়া, বালুখালী পানবাজার, কুতুপালং, উখিয়া সদর, দরগাহ বিল, মৌলভীপাড়া, হাজিরপাড়া, কোটবাজার, খোন্দকারপাড়া, সোনারপাড়া, মরিচ্যাসহ বেশ কয়েকটি ঝুঁকিপূর্ণ মাদক ব্যবসায়ী অধ্যুষিত জনপদ ঘুরে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে তাদের সম্পর্কে নানা তথ্য জানা গেছে।

কক্সবাজার জেলা মুক্তিযোদ্ধা লীগের আহ্বায়ক ও সাবেক উখিয়া উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার জাফর আলম চৌধুরী বলেন, কতিপয় আইন প্রয়োগকারী সংস্থার লোকজনের সঙ্গে ইয়াবা সিন্ডিকেটের আঁতাত রয়েছে। এ কারণে মাদকবিরোধী অভিযানের ১৯ দিনেও উখিয়ায় উল্লেখযোগ্য কোনো ইয়াবা ব্যবসায়ী ধরা পড়েনি। এসব ইয়াবা কারবারি খুবই শক্তিশালী। তাদের রয়েছে শক্তিশালী সিন্ডিকেট।

রাজাপালং ইউনিয়নের জাদিমুরা ঘুরে স্থানীয় কয়েক গ্রামবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, একসময়ের দরিদ্র কবির আহমদের বহুতল ভবনের নির্মাণকাজ করছেন শত শত শ্রমিক। মাত্র ১৫ দিনে ভবনের একটি বিশাল অংশের নির্মাণকাজ শেষ হয়ে গেছে। মাদকবিরোধী অভিযানে গ্রেফতার আতঙ্কে কয়েকদিন আগে সে গা-ঢাকা দিয়েছে।

বালুখালী গ্রামের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী সিরাজুল হক, পেশাদার কৃষক নিয়ামত আলী, বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী গফুর উল্লাহ দাবি করেন, উখিয়ার আনাচে-কানাচে গত পাঁচ বছরে যেসব বহুতল ভবন, আলিশান ইমারত ও বহুমুখী ডিজাইনের ঘরবাড়ি তৈরি হয়েছে, তাদের আইনের আওতায় আনা হলে ইয়াবা বিস্তারের আসল রহস্য বেরিয়ে আসবে।

উখিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আবুল খায়ের জানান, তার থানায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত ৩৫ জন ইয়াবা ও মাদক ব্যবসায়ী রয়েছে। তাদের মধ্যে মো. শফি নামের একজন শ্রমিক নেতাকে ২০০ ইয়াবাসহ আটক করা হয়। একজন ডিএসবি কর্মকর্তা জানিয়েছেন, তাদের কাছে ১৩৫ জন ইয়াবা ব্যবসায়ীর তালিকা রয়েছে। যাদের আইনের আওতায় আনার জন্য তারা দিনরাত পরিশ্রম করছেন।

পিডিএসও/তাজ

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
মাদক কারবারি,উখিয়া,ইয়াবা,গডফাদার
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist