‘প্রগতি’ সংকলন : ফিদেল ও বাংলাদেশ
এবারের বইমেলায় হাজির হয়েছিল ‘প্রগতি’ নামক একটি সংকলন-পুস্তিকা। এতে সংকলিত হয়েছেন কিউবা বিপ্লবের স্থপতি ফিদেল কাস্ত্রো। কাস্ত্রোর জীবন ও রাজনীতি, তত্ত্ব ও চর্চাকে সম্পাদকগণ (সাখাওয়াত টিপু, দীপংকর গৌতম, অভিনু কিবরিয়া ইসলাম, হাবীব ইমন, মীর মোশাররফ হোসেন, প্রশান্ত মণ্ডল ও রাহাত মোস্তাফিজ) হাজির করেছেন তরজমার মধ্যস্থতায়।
বাংলাদেশ প্রগতি লেখক সংঘ তাদের ‘প্রগতি’ সংকলনে কাস্ত্রোকে দুই মলাটে পরিবেশন কেন করেছেন? হয়তো তারা এ দেশে কাস্ত্রোর জীবনের সঙ্গে একটি বুদ্ধিবৃত্তিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ামূলক সংলাপশীল ভূমিকা সৃষ্টির তাগিদ নিজেদের মর্মস্থলে অনুভব করেছেন।
বাংলা ভাষার মৌলিক লেখালেখি নয়, বরং রুশ, স্প্যানিশ ও ইংরেজিতে লেখালেখির ভিত্তিতে এই বইয়ে খোঁজ করা হয়েছে ফিদেল কাস্ত্রো আসলেই কে? কাস্ত্রো কীভাবে হয়ে উঠেছেন। সাক্ষাৎকার, বক্তৃতা, প্রবন্ধ, নিবেদিত কবিতা আর জীবনালেখ্য মিলিয়ে এই সংকলনের কাঠামো তৈয়ার হয়েছে।
যদিও এ বইয়ের একটিই সারাৎসার—বাংলাদেশে কাস্ত্রো কেন প্রাসঙ্গিক এই প্রশ্নের জবাব খোঁজা। ‘যাদের পা দুর্বল চেতনা সংশয়ী তারা পিছিয়ে পড়বে’ নামে ফিদেলের একটি ভাষণ আছে এই সংকলনে। সম্ভবত সংকলিত এই রচনাটিই এই প্রশ্নের উত্তর অনেকখানি নির্দেশ করে। বাংলাদেশে আধুনিকতার অনুপ্রবেশ ঘটেছে উপনিবেশিক ইতিহাসের রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক দরজা দিয়ে। এ দেশে এন্তার বিরোধসমেত আধুনিকতার কোনো আস্ত প্রকল্প নেই, যা আছে তা বিস্তর ভগ্নাংশ মাত্র। এমনকি এখানকার ভাবান্দোলনের রাজনৈতিক তাৎপর্য, যা প্রাগাধুনিক একেও রাজনৈতিক ভিশন নিয়ে মোকাবিলা করা হয়নি।
বাংলাদেশে বিপ্লবী ফিদেল কাস্ত্রোর সংকলন পাঠ করে মনে পড়ছে মার্কসবাদী নাট্যকার বার্টল্ট ব্রেখটের লেখা ‘লাইফ অব গ্যালিলিও’ নাটকে গ্যালিলিও এবং তাঁর ছাত্র আন্দ্রিয়ার বিখ্যাত দ্বান্দ্বিক সংলাপ। আন্দ্রিয়া বললেন, ‘দুর্ভাগা সেই দেশ যার বীরপুত্র নেই’। গ্যালিলিও প্রত্যুত্তর করলেন, ‘দুর্ভাগা সেই দেশ যার বীরপুত্রের প্রয়োজন আছে’। ফিদেল কাস্ত্রোর বৈপ্লবিক জীবন আমাদের শিক্ষা দেয় জনগণই ইতিহাসের ভাগ্যবিধাতা।
পিডিএসও/রানা