মোঃ নাজমুল সাঈদ সোহেল, কক্সবাজার

  ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

চকরিয়ায় পাহাড়ের মাটি লুট, নেপথ্যে ইউপি সদস্য ও চেয়ারম্যান

চকরিয়ায় স্কুল, মসজিদের নাম দিয়ে নির্বিচারে পাহাড় কাটায় বিপন্ন পরিবেশ

কক্সবাজারের চকরিয়ায় উত্তর লক্ষ্যারচর নলবিলা বন বিট জেলার একমাত্র বিট কাম চেকপোস্ট। কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের ফাঁসিয়াখালী রেঞ্জের আওতাধীন চকরিয়া উপজেলার নলবিলা বনবিটের বার আউলিয়া নগরে স্কুলের পাশঘেসা পাহাড়ে মাটি কাটার মহোৎসব চালিয়ে যাচ্ছে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা কাইছার ও ইউপি সদস্য এনাম নামক এক সিন্ডিকেট ।

শুধুমাত্র এখানেই সীমাবদ্ধ নেই, চলছে প্রতিনিয়ত স্কুল,মসজিদ, কবরস্থান ভরাটের নামে বনভূমি সমতল ভূমিতে পরিণত হচ্ছে।গত বছর ওই এলাকায় পাহাড় কাটার সময় মাটি চাপা পড়ে কয়েক শ্রমিক আহত হয়।এ সময় ফায়ার সার্ভিস পুলিশ প্রশাসনের সহযোগীতায় মাটির ভেতর থেকে উদ্ধার করতে সক্ষম হন।বছরে ঘুরেই একই পরিস্থিতি বিরাজ করায় মাটি পাচারকারী চক্র ও গ্রামবাসীর মধ্যে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে ওই এলাকায়।

সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ফের পাহাড় কাটায় আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে এলাকার কয়েকশ পরিবার। এ ব্যাপারে এলাকাবাসী চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগও দায়ের করেছেন। গত ১৪/০২/১৯ ইং তারিখে নলবিলা বিট অফিসার আজমল হোসেন সরেজমিন দেখে আসার পরেও থেমে নেই পাহাড় কেটে ও মাটি পাচারের কাজ।

কারণ মাটি কাটার সিন্ডিকেটের সাথে রয়েছে সক্ষতা। পাহাড় কাটার স্থান আর নলবিলা বিটের অফিসের সামনে দাড়ালেই দেখা যায় পাহাড় কাটা এবং মাটি পাচারের বিষয়টি। নিয়মিত শত শত গাড়ি মাটি পাচার কার্যে ব্যাবহৃত হচ্ছে ট্রাক(পিকাপ) ডাম্পার। যার কারণে রক্ষক হয়ে ভক্ষকের আসনে।যার ফলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নিরব দর্শকের ভূমিকায়। তাই অতীব জরুরী ঊর্ধ্বতন কতৃপক্ষের হস্থক্ষেপ।

এলাকাবাসী সুত্রে জানা যায়, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি চেয়ারম্যান ও মেম্বারের যোগসাজশে দীর্ঘদিন যাবত চলছে পাহাড় কাটা ও মাটি পাচারের কাজ। তাদের ক্ষমতার জোর আর দাম্ভিকতার কারণে ভয়ে সহজে কেহ মুখ খুলেছে না। একের পর এক বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের নাম ভেঙে সরকারি পাহাড় কেটে মাটি বিক্রি করে চলছে বিভন্ন জায়গায়। এককথায় জনসেবার নামে ব্যক্তিস্বার্থে ব্যবহৃত হচ্ছে পাহাড়ের কর্তনকৃত মাটি।

উপজেলার লক্ষ্যারচর ও কাকারা ইউনিয়নের মধ্যকার বার আউলিয়া নগর এলাকায় নির্বিচারে পাহাড় কেটে তা ট্রাক ও মিনি ট্রাক যোগে বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করা হচ্ছে। পাশাপাশি মাটি বোঝাই ভারী ট্রাক চলাচলের কারনে কাচা গ্রামীণ সড়কের বিভিন্ন স্থান ভেঙ্গে খানা খন্দকের সৃষ্টি হওয়ায় নিরাপদ সড়ক যোগাযোগে দূর্ভোগে পড়েছে এলাকাবাসী।

সুত্র মতে, দিনে ও রাতে সমান তালে বিভিন্ন লোকজনের বসত বাড়ির উচু পাহাড় কাটা হচ্ছে। এসব মাটি প্রতিনিয়ত অর্ধ ডজন ডাম্পার ট্রাক ( মিনি ট্রাক) দিয়ে পাচার করে যাচ্ছে মাটি পাচারকারী চক্র। কাটা পাহাড়ের মাটিগুলোও বিক্রি করে বিভিন্ন স্থানে বসত ভিটাসহ বিভিন্ন স্থাপনা ভরাট কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। পাহার কেটে মাটি পাচারের ফলে এলাকার সাধারণ মানুষের মাঝে পাহাড় ধসের আতঙ্ক বিরাজ করছে।

স্থানীয় সুত্রগুলো জানিয়েছে, নির্বিচারে পাহাড় কাটার কারণে প্রতিবছর পাহাড়ের মাটি বৃষ্টির পানির সাথে মিশে সাধারণ মানুষের বসতবাড়িতে প্রবেশ করছে। প্রশাসনের চাপে স্থানীয় মাটি দস্যুরা সাময়িক পাহাড় কাটা বন্ধ রাখলেও গত কয়েকমাস ধরে আবারও পুরোদমে পাহাড় কাটা শুরু করেছে।

চকরিয়া উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পাহাড় কাটার উপর স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা দিলেও তা মানছেন না। স্থানীয় প্রভাবশালী, ভুমিদস্যু চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা কাইছার ও এনাম মেম্বারের ও নের্তৃত্বে পাহাড় কেটে মাটি বিক্রি করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। ফলে ওই এলাকায় পরিবেশের মারাত্মক হুমকি সহ জনজীবনে আতঙ্ক ও বিপন্ন মানুষের আর্তনাদে কেউই এগিয়ে আসছে না বলে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেছেন। প্রকাশ্যে পাহাড় কেটে মাটি পাচার করলেও প্রতিবাদ করার সাহস পাচ্ছে না কেউ।

লক্ষ্যারচর ও কাকারা ইউনিয়নের মধ্যকার বারআউলিয়া এলাকার পাশের সু-বিশাল পাহাড় কেটে দিন ও রাত সমান তালে ৫/৬টি ডাম্পার মিনি ট্রাকে করে দেদারছেই মাটি বিক্রি করে চলেছে। পাহাড় কাটার মুল হোতা প্রভাবশালী ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধি মেম্বার চেয়ারম্যান। নির্বিঘ্নে পাহাড় কেটে পরিবেশ ধ্বংস করে আসছে।

এ ব্যাপারে স্থানীয় চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা কাইছারের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন,গত মাসিক আইন শৃংঙ্খলা সভায় চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট পাহাড় কাটার বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে। স্কুলের ভবন নির্মাণের জন্য পাহাড় কেটে সমতল করার জন্য অন্যত্রে মাটি সরানো হচ্ছে। বিষয়টি বন বিভাগীয় কর্মকর্তা ডিএফও ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ প্রশাসনের সংস্লিষ্ট কর্মকর্তাগণ অবগত আছেন।কিন্তু এ প্রতিবেদক বিষয়টি মানতে মোটেও নারাজ! কারণ সরকারের তরফ থেকে পাহার কাটার ওপর সম্পুর্ণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা রয়েছে।

চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা কাইচারের বক্তব্যের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য সরণাপন্ন হলাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুরুদ্দীন মোঃ শিবলী নোমানের কাছে।প্র তিদিনের সংবাদকে তিনি বলেন, স্কুলের ভবন নির্মাণের জন্য পাহার কাটার বিষয়ে কোন প্রকার নির্দেশনা নেই এবং মাসিক সভায়ও পাহাড় কাটার বিষয়ে কোন আলাপ হয়নি। তিনি আরো বলেন, সরকার কতৃক পাহাড় কাটার বিষয়ে স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে ।সে যেই হোক না কেন আইন বহির্ভুত কার্যে যেই জড়িত হোক না কেন তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যাবস্থা নেয়া হবে।

সরজমিন পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায়, পাহাড়ের চূড়ায় বসবাসকারী প্রায় ১৪/১৫টি পরিবার বর্তমানে চরম ঝুঁকিতে রয়েছে। শতাধিক পরিবার পাহাড় ধসে মাটি চাপায় মৃত্যুর শঙ্কায় ঝুঁকি নিয়েই চলাচল করছে। যে কোন মুহুর্তে এসব পরিবারের বসতবাড়ি ধসে প্রাণহানির আশঙ্কাকে উড়িয়ে দেওয়া যায় না।

এ বিষয়ে নলবিলা বিট কর্মকর্তা আজমল হোসেন বলেন, মাটি কাটার বিষয়ে বেশ কয়েকবার সরজমিনে গিয়ে বাধা প্রদান করা হয়। কিন্তু স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রভাবশালী হওয়ার কারণে নির্দেশনা অমান্য করে মাটিকাটার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। মাটিকাটার বিষয়টি সুরক্ষার জন্যে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট অফিসিয়াল সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য আশ্বস্ত করেন কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের বিভাগীয় বনকর্মকর্তা (ডিএফও) হক মাহাবুব মোর্শেদ।

উপরোক্ত কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের বিভাগীয় বনকর্মকর্তা (ডিএফও) হক মাহাবুব মোর্শেদ বলেন, ইতিমধ্যে বিষয়টি স্থানীয় এলাকাবাসীর মাধ্যমে সামাজিক বনায়ন ধ্বংস করে মাটিকাটার বিষয়টি অবগত হয়েছি। সরকারি কর্তৃক স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা আরোপ রয়েছে মাটি কাটার বিষয়ে। এরই আলোকে সে যেই হোক না কেন তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইতিপূর্বে সামাজিক বনায়নের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও নলবিলা বিটকর্মকর্তাকে বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

পিডিএসও/তাজ

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
পাহাড় কাটা,মাটি,চকরিয়া,মাটি কাটা,পাহাড় ধসের আশঙ্কা
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close