খালেকুজ্জামান পান্নু, পাবনা
পাবনায় পাটের বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা, দাম নিয়ে শঙ্কায় চাষীরা
পাবনায় এবছর পাটের বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে। তবে দাম নিয়ে শঙ্কায় আছে পাট চাষীরা। পাট আবাদের সময় প্রথম দিকে আবহাওয়া অনুকুলে না থাকলেও পরবর্তীতে সময়মতো বৃষ্টিপাত হওয়ায় পাটের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্ট কৃষি বিভাগ। ইতোমধ্যে পাট কাটা, পানিতে পচানি দেওয়া শুরু করেছেন কৃষকেরা। শ্রমিকের অভাবে ও জমির আশেপাশে পানি না থাকায় পাট পচাতে গিয়ে বিপাকেও পড়ছেন অনেকে।
পাবনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সুত্রে জানা যায়, এ বছর পাবনা জেলায় মোট ৩৬ হাজার ৬শ’ ২০ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সাঁথিয়া উপজেলায় ৭ হাজার ৪শ’ ২০, সুজানগর ৮ হাজার ৫’, ভাঙ্গুরা ৩শত ৫৫, বেড়া ২ হাজার ৬শ’ ২০, আটঘরিয়া ৩ হাজার ৮শ’ ৭০, ফরিদপুর ৬শ ৫, চাটমোহর ৬ হাজার ৮ শ’ ৭৫ ও ঈশ্বরদি উপজেলায় ১শ’ ৯০ হেক্টর জমিতে পাট আবাদের লক্ষ্য মাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ।
এ বছর সবচেয়ে বেশি পাটের আবাদ হয়েছে সুজানগর ও সাঁথিয়াতে। জেলার অনেক উপজেলাতে পাটের দাম সঠিক না পাওয়ায় পাটের আবাদ গতবছর ৪৫ হাজার হেক্টর থেকে কমে এ বছর আবাদ হয়েছে ৩৬ হাজার ৬শ’ হেক্টর জমিতে।
জেলার বিভিন্ন উপজেলার পাট চাষীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, এক বিঘা জমি চাষ, বীজ, সার, কীটনাশক ক্রয়, পরিচর্যা, পচানি দিতে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গা নেওয়ার পরিবহন খরচ থেকে শুরু করে পাট ছিলা ও রোদে শুকিয়ে ঘরে তোলা পর্যন্ত প্রায় ১৬ থেকে ১৮ হাজার টাকা ব্যয় হয়। এর মধ্যে পাট কাটতে এবং জাগ দেওয়ার জন্য নদীতে পৌঁছাতে পরিবহনসহ বিঘা প্রতি প্রায় ১০ হাজার টাকা লেগে যায়।
তারা জানায়, এবছর পাটের বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা থাকলেও দাম নিয়ে শঙ্কায় আছি । পাটের ন্যায্যমুল্য না পেলে তাদের আর্থিকভাবে লোকসান গুনতে হবে। প্রান্তিক কৃষকেরা জানায়, সরকারিভাবে বরাদ্দকৃত বীজসহ কৃষি উপকরণ সমূহ থেকে তারা বঞ্চিত থাকেন। তাদের অভিযোগ কৃষি বিভাগ জমি যাদের বেশি তাদের মধ্যে সরকারি উপকরণ সমূহ বিতরণ করে।
অপরদিকে জেলার বিভিন্ন উপজেলা কৃষি অফিস ও পাট অধিদপ্তর যৌথভাবে পাটের উৎপাদন ও ফলন বেশি করার জন্য এ বছর কৃষকদের মাঝে প্রয়োজনীয় উদ্বুদ্বকরণ, প্রশিক্ষণ, তথ্য প্রদানসহ মাঠ পর্যায়ে কাজ না করার একাধিক অভিযোগ রয়েছে।
এ অভিযোগ অস্বীকার করে পাবনা জেলা কৃষি বিভাগের প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা লোকমান হোসেন জানান, প্রয়োজনীয় উদ্বুদ্বকরণ, প্রশিক্ষণ, তথ্য প্রদানসহ মাঠ পর্যায়ে কাজ করছে কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা। পাবনা সুজানগরের কয়া গ্রামের মামুন, রানী নগরের সন্জুসহ অনেক পাট চাষী জানান, আশা রাখছি এ বছর পাটের ফলন ভালো হবে তবে আঁশ মোটা হবে কিনা তা নিয়ে শঙ্কায় আছি। তারা জানায় জমিতে পাট আবাদ করতে যে ব্যয় হচ্ছে ন্যায্য দাম না পেলে উৎপাদন খরচ নিয়েও শঙ্কায় রয়েছি আমরা।
সাঁথিয়ার কালাইচারা গ্রামের ফোরকান আলী জানান, প্রায় তিন বিঘা জমিতে পাট আবাদ করেছি। শুরুতে বৃষ্টিপাত না হওয়ায় পাট বড় হতে বিলম্ব হয়েছিল। পরে যখন বৃষ্টি হয়েছে তখন শুধু পাট গাছ বড় হয়েছে আঁশ মোটা হয়নি। তিনি আরও বলেন, পানির অভাবে পাট জাগ দিতে পারছিনা। আমরা বন্যার পানি থেকে বঞ্চিত। তিনি বলেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের সেচ খালে যদি নিয়মিত পানি থাকতো তাহলে আমাদের পরিবহনে করে নদীতে জাগ দিতে হত না। এতে করে লোকসানের পরিমানও কম হত । কারণ ১ বিঘা জমির পাট শুধু ইছামতি নদীতে পৌঁছানো ৫ হাজার টাকা লাগছে আর কাটতে লাগছে ৫ হাজার টাকা। কিভাবে যে খরচ উঠবে সেই চিন্তায় আছি।
এ বিষয়ে সাঁথিয়া উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ রঞ্জন কুমার প্রাং জানান, পানি হচ্ছে প্রকৃতির দান। সেচ খালে পানি থাকা না থাকা সেটা পানি উন্নয়ন বোর্ডের দায়িত্ব। আমাদের কিছু করার নেই। পাটের ফলন কম হওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, জমিতে রাসায়নিক সার সঠিক ব্যবহার না করায় আঁশ মোটা ও ফলন কম হতে পারে।
পিডিএসও/রিহাব