নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২০ নভেম্বর, ২০১৯

লবণ নিয়ে গুজব ঠেকাতে মাঠে পুলিশ

দাম বেড়ে যাওয়ার কথা ছড়িয়ে ঢাকাসহ সারাদেশে লবণ কেনার হিড়িকের পর এ বিষয়ে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুশিয়ারি দিয়েছে সরকার। সরকারি এক প্রেস নোটে বলা হয়েছে, দেশে লবণের কোনো সংকট নেই বা এমন কোনো সম্ভাবনাও নেই। ‘লবণ নিয়ে কিংবা অন্য কোনো বিষয়ে কোনো ব্যক্তি বা মহল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বা অন্য কোনোভাবে গুজব ছড়ানোর চেষ্টা করলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

পেঁয়াজের পর লবণের সংকটের কথা ছড়িয়ে বাজার অস্থিতিশীল করার চেষ্টার মধ্যে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এই প্রেস নোট দিয়েছে সরকার। বিশেষ পরিস্থিতিতে সরকারের পক্ষ থেকে তথ্য অধিদফতর এই প্রেস নোট জারি করে।

লবণ নিয়ে কারসাজি দমনে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর মাঠে নেমেছে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। তারা বাজার মনিটর করে যাকে জেল দেওয়ার দরকার, তাকে জেল-জরিমানা করবে।

বর্তমানে দেশে সাড়ে ৬ লাখ টন লবণ মজুদ রয়েছে জানিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, এটি একেবারেই একটা অবাস্তব সুযোগ নিচ্ছে শুধুমাত্র একটা গুজব দিয়েই, বাস্তবে এর কোনো কারণ নেই। দেশে লবণের উৎপাদন পর্যাপ্ত হওয়ায় আমদানিও বন্ধ রাখা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, কোনো কারণ নেই দাম বাড়ার।

লবণ ইস্যুতে পুলিশকে মাঠে নামার নির্দেশ : দেশে লবণের কৃত্রিম সংকট তৈরি করে যাতে কেউ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে সেজন্য পুলিশ সদস্যদের দোকানে দোকানে তল্লাশি চালানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার (অপারেশন) মনিরুল ইসলাম ওয়ারলেসে পুলিশ সদস্যদের এই নির্দেশ দেন। নির্দেশনা পেয়ে থানা এলাকার পুলিশ সদস্যরা বিভিন্ন দোকানে গিয়ে লবণের মজুদের খোঁজখবর নিচ্ছেন।

মুগদা এলাকার একজন স্থায়ী বাসিন্দা জানান, বিকালে দোকানে দোকানে পুলিশ অভিযান চালিয়ে বেশি দামে লবণ বিক্রি করায় কয়েকজনকে আটক করে।

ধানমন্ডি থানা পুলিশ জানায়, ঊর্ধ্বতনের নির্দেশ পেয়ে ধানমন্ডি ও হাজারীবাগ এলাকার সুপারশপ এবং দোকানগুলোতে লবণের খোঁজে পুলিশ যায়। গিয়ে দেখে অনেক দোকানে লবণ শেষ। কী কারণে তাদের লবণ নেই, চালানের সঙ্গে মজুদের পরিমাণ দেখা হচ্ছে। তবে বেশির ভাগ দোকানে গিয়ে লবণ পাওয়া যায়নি।

এদিকে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত পুরান ঢাকার নয়াবাজারে অভিযান চালাচ্ছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আবদুল্লাহ আল মামুন। অভিযানের শুরুতে তিনি বাজারের পাইকারি দোকানগুলোতে লবণের মজুদ নজরদারি করছেন। ব্যবসায়ীদের কাছে লবণের দাম বৃদ্ধি ও সংকটের কারণ জানতে চাইছেন। অভিযানের ফলাফলের বিষয়ে পরবর্তী সময়ে সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত জানিয়ে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে ডিএমপি।

লবণের দাম বেড়ে যাচ্ছে বলে সোমবার সন্ধ্যার পর থেকে দেশের নানা স্থানে গুজব ছড়িয়ে পড়লে লবণ কেনার হিড়িক পড়ে যায়। এরই প্রেক্ষাপটে দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছে সরকার। এছাড়া শিল্প মন্ত্রণালয় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে গুজবে কান না দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে জানায়, একটি স্বার্থান্বেষী মহল লবণের সংকট রয়েছে মর্মে গুজব রটনা করে অধিক মুনাফা লাভের আশায় লবণের দাম অস্থিতিশীল করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। এ ধরনের গুজবে বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য শিল্প মন্ত্রণালয় সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করছে।

লবণের মজুদের কোনো সংকট নেই জানিয়ে শিল্প মন্ত্রণালয় বলছে, দেশে প্রতি মাসে ভোজ্য লবণের চাহিদা কম-বেশি ১ লাখ মেট্রিক টন। অন্যদিকে লবণের মজুদ আছে সাড়ে ৬ লাখ মেট্রিক টন। এরই মধ্যে কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের লবণ চাষিদের কাছে ৪ লাখ ৫ হাজার মেট্রিক টন এবং বিভিন্ন লবণ মিলের গুদামে ২ লাখ ৪৫ হাজার মেট্রিক টন রয়েছে বলে জানিয়েছে শিল্প মন্ত্রণালয়।

এছাড়া সারাদেশে বিভিন্ন লবণ কোম্পানির ডিলার, পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতাদের কাছে পর্যাপ্ত পরিমাণে লবণ মজুদ রয়েছে। পাশাপাশি চলতি নভেম্বর মাস থেকে লবণের উৎপাদন মৌসুম শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে কক্সবাজার জেলার কুতুবদিয়া ও মহেশখালী উপজেলায় উৎপাদিত নতুন লবণও বাজারে আসতে শুরু করেছে, বলা হয় বিজ্ঞপ্তিতে।

বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, লবণসংক্রান্ত বিষয়ে তদারকির জন্য শিল্প মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) প্রধান কার্যালয়ে এরই মধ্যে একটি ‘কন্ট্রোল রুম’ খুলেছে। লবণ সংক্রান্ত বিষয়ে সেখানে যোগাযোগ করা যাবে। কন্ট্রোল রুমের নম্বর- ০২-৯৫৭৩৫০৫ এবং ০১৭১৫-২২৩৯৪৯।

এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিসিক জানায়, লবণ উৎপাদনে বাংলাদেশ স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের লবণ মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি রেকর্ড পরিমাণ ১৮ দশমিক ২৪ লাখ মেট্রিক টন লবণ উৎপাদিত হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বর্তমানে দেশে চাহিদার চেয়ে অনেক বেশি লবণ মিলগুলোতে মজুদ রয়েছে।

মঙ্গলবার বিকাল ৩টায় কারওয়ানবাজারের কিচেন মার্কেটের দোকানগুলোয় লবণ কিনতে প্রচুর মানুষের ভিড় দেখা যায়। কেউ দুই কেজি, কেউ পাঁচ কেজি লবণ কিনছিলেন। এমনকি বন্ধ দোকান খুলেও অনেক বিক্রেতা লবণ বিক্রি করেন। এছাড়া দেশের বিভিন্নস্থানে লবন নিয়ে গুজব ছড়ানোর প্রেক্ষাপটে প্রশাসনের তরফ থেকে বাজার মনিটারিং, ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা এবং জনসচেতনার জন্য মাইকিং করা হয়।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
পুলিশ,লবণ,গুজব,প্রেস নোট
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close