শাহজাহান সাজু

  ২৮ মার্চ, ২০১৯

তৈরির কাজ শুরু করেছেন অর্থমন্ত্রী

বাজেটে অপচয় কমাতে থাকছে নতুন পদ্ধতি

আগামী ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট তৈরির কাজ শুরু করেছেন নতুন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। গত সরকারের পরিকল্পনামন্ত্রী হিসেবে বাজেট তৈরি প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত থাকলেও এটি হবে অর্থমন্ত্রী হিসেবে তার প্রথম বাজেট। আগামী ২০১৯-২০ অর্থবছর থেকে অর্থ মন্ত্রণালয় ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে একক বাজেট পদ্ধতি চালু হচ্ছে।

একক বাজেট পদ্ধতিতে দুই মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন সংস্থার কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হবে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ সম্প্রতি একটি পরিপত্র জারি করে এ পদ্ধতি অনুসরণের প্রক্রিয়া শুরু করেছে। স্বচ্ছ, জবাবদিহি নিশ্চিত ও প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধির বিষয়ে দেওয়া হচ্ছে বিশেষ গুরুত্ব। আগামী অর্থবছরের বাজেটের আকার হতে পারে সৌয়া পাঁচ লাখ কোটি টাকা। অর্থমন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ সম্প্রতি একটি পরিপত্র জারি করে এ পদ্ধতি অনুসরণের প্রক্রিয়া শুরু করেছে। এ-সংক্রান্ত পরিপত্রে বলা হয়েছে, আগামী বাজেট থেকে পরীক্ষামূলকভাবে সংশ্লিষ্ট দফতর ও সংস্থার কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হবে একক বাজেট পদ্ধতিতে। এতে নির্দিষ্ট সময়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা যাবে এবং অর্থের অপচয় রোধ করা সম্ভব হবে। বাজেট প্রণয়ন প্রক্রিয়ায় সমন্বয়হীনতা ও দ্বৈততাও দূর হবে এ পদ্ধতির মাধ্যমে।

একক বাজেট পদ্ধতিতে বাস্তবায়নের জন্য গৃহীত কর্মসূচির আওতায় প্রকল্প চিহ্নিত করা, প্রণয়ন, যাচাই, অনুমোদন, সংশোধন, বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন-সংক্রান্ত একটি বিধিমালা প্রণয়ন করেছে অর্থ বিভাগ। এতে বলা হয়েছে, কর্মসূচি বাস্তবায়নকারী দফতর বা সংস্থা আগে খসড়া প্রকল্প তৈরি করবে। এরপর তা পাঠাবে সমন্বয় ইউনিটে। খসড়া প্রকল্প পরীক্ষা করে চূড়ান্ত করবে ওই ইউনিট। এ ছাড়া প্রকল্প যাচাইয়ে দুটি কমিটি রাখার কথা বলা হয়েছে। কোনো কর্মসূচির আওতায় ব্যয় ১০০ কোটি টাকার বেশি হলেই তা যাচাই করবে অর্থসচিবের নেতৃত্বাধীন একটি প্রকল্প যাচাই কমিটি। আর ব্যয়ের পরিমাণ ১০০ কোটি টাকার মধ্যে হলে তা যাচাই করবে অর্থ বিভাগের একজন অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বাধীন অন্য একটি প্রকল্প যাচাই কমিটি। উভয় ক্ষেত্রেই এগুলোর চূড়ান্ত অনুমোদন দেবেন অর্থমন্ত্রী।

সাধারণভাবে প্রকল্পের সর্বোচ্চ ব্যয়সীমা থাকবে না। তবে প্রকল্প বাস্তবায়নের সময়সীমা হবে সাধারণত পাঁচ বছর। আর প্রকল্প এমনভাবে তৈরি করতে হবে, যাতে নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যেই এর বাস্তবায়ন শেষ করা যায়। এ ছাড়া প্রকল্প ব্যয় ১০০ কোটি টাকার বেশি হলে প্রকল্প গ্রহণের আগে সম্ভাব্য যাচাই করতে হবে। যৌক্তিক ক্ষেত্রে প্রকল্পের আওতায় পরামর্শক নিয়োগ করা যাবে। আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমেও সেবা নেওয়া যাবে। তবে প্রকল্পের আওতায় যানবাহন কেনা যাবে না। একইসঙ্গে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী দফতর বা সংস্থার প্রধানের নেতৃত্বে প্রতিটি কর্মসূচিতে একটি ‘বাস্তবায়ন কমিটি’ গঠন করতে হবে।

সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা বিভাগের বাজেট ব্যবস্থাপনা অনুবিভাগ প্রকল্পের বাস্তবায়ন অগ্রগতি পরীক্ষা করবে। ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে প্রতিবেদন তৈরি করে তা বাজেট ব্যবস্থাপনা কমিটির বৈঠকেও উপস্থাপন করবে ওই অনুবিভাগ। প্রকল্প বাস্তবায়ন শেষ হওয়ার পর প্রকল্প পরিচালক একটি সমাপ্তি প্রতিবেদন তৈরি করে তা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা বিভাগে পাঠাবে। ওই মন্ত্রণালয় বা বিভাগ তা চূড়ান্ত করে পাঠাবে অর্থ বিভাগ এবং বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগে।

সূত্র জানায়, নতুন বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধি প্রাক্কলন করা হতে পারে ৮ শতাংশ। মূল্যস্ফীতির হার ধরা হতে পারে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। মূল্যস্ফীতির হার ২০১৫-১৬ অর্থবছর থেকেই ৬ শতাংশের কম ধরে বাজেট করা হচ্ছে। তবে বাজেটের আগে সরকার অনেকটাই স্বস্তিতে রয়েছে। অর্থবছর ২০১৮-১৯ শেষ না হতেই মাথাপিছু আয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৯০৯ ডলার।

এর আগে, গত ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে মাথাপিছু আয় ছিল ১ হাজার ৭৫১ মার্কিন ডলার। গত ছয় মাসের ব্যবধানে দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় বেড়েছে ১৫৮ মার্কিন ডলার। চলতি অর্থবছরে বেসরকারি বিনিয়োগ কম হয়েছে। তবে আগামী বছর থেকে এটি বাড়বে বলে সরকার আশা করছে। বেসরকারি বিনিয়োগকারীরা যাতে আবার ফিরে আসেন, সে জন্য সরকার সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে।

এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল সম্প্রতি সাংবাদিকদের বলেছেন, অর্থবছর শেষে জিডিপি প্রবৃদ্ধি দাঁড়াবে ৮ দশমিক ১৩ শতাংশে। গত অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির এই হার ছিল ৭ দশমিক ৮ শতাংশ। মূলত শিল্প খাতের হাত ধরে প্রবৃদ্ধির আকার বেড়েছে। চলতি অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির আকার দাঁড়াবে ২৫ লাখ ৩৬ হাজার ১৭৭ কোটি টাকা। গত অর্থবছর এটি ছিল ২২ লাখ ৫০ হাজার ৪৭৯ কোটি টাকা।

প্রসঙ্গত, একটি দেশের ভৌগোলিক সীমারেখার মধ্যে এক বছরে যে পরিমাণ দ্রব্যসামগ্রী উৎপাদন হয় এবং সেবা জোগান দেওয়া হয়, তার বাজার মূল্যই জিডিপি। যাকে বলা হয়, দেশজ উৎপাদন বা (জিডিপি)। গত কয়েক বছরে উৎপাদনের দিক শক্ত অবস্থানে পৌঁছে গেছে বাংলাদেশ। এর ফলে ছয় শতাংশের বৃত্ত ভেঙে বাংলাদেশে এখন গড় প্রবৃদ্ধির হার সাড়ে ৮ শতাংশের কাছাকাছি। চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭ দশমিক ৮ শতাংশ।

পিডিএসও/তাজ

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
বাজেট,অর্থ মন্ত্রণালয়,অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল,২০১৯-২০ অর্থবছর
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close