নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২৭ জানুয়ারি, ২০২০

এডিপি বাস্তবায়ন হার নিয়ে বিতর্ক

বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) বাস্তবায়ন হার নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের মধ্যে বিতর্ক রয়েছে। সরকারের দুই মন্ত্রণালয়ের দুই ধরনের তথ্য। অর্থ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, গত পাঁচ অর্থবছরে সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (আরএডিপি) গড় বাস্তবায়ন হার ৮১ শতাংশ। অন্যদিকে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় বলছে, এই হার ৯১ শতাংশ। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, সংশোধিত এডিপি বাস্তবায়ন হার নিয়ে অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের মধ্যে ভিন্ন চিত্র পাওয়া গেছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, গত পাঁচ অর্থবছরে সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (আরএডিপি) গড় বাস্তবায়ন হার ৮১ শতাংশ। অন্যদিকে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় বলছে, এই হার ৯১ শতাংশ। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের অধীন ‘বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি)’ প্রকল্প বাস্তবায়নের হার প্রকাশ করে। আর অর্থ মন্ত্রণালয়ের ‘হিসাব মহানিয়ন্ত্রকের কার্যালয় (সিজিএ)’ পক্ষ থেকে আরএডিপির প্রকৃত ব্যয় একটি তথ্য, উপাত্ত দেওয়া হয়ে থাকে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের আইএমইডির হিসাবে, গত পাঁচটি অর্থবছরে এডিপি বাস্তবায়নের গড় হার ৯২ শতাংশ। কিন্তু বাজেট উপাত্ত পর্যালোচনায় দেখা যায়, প্রকৃত এডিপি বাস্তবায়নের গড় হার হচ্ছে সংশোধিত এডিপির প্রায় ৮১ শতাংশ। গত পাঁচ অর্থবছরের বাজেট উপাত্ত পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে সংশোধিত এডিপি বাস্তবায়নের হার ছিল সর্বোচ্চ। আলোচ্য অর্থবছরে সংশোধিত এডিপির আকার ছিল ৬০ হাজার কোটি টাকা। এর বিপরীতে প্রকৃত ব্যয় হয়েছে ৫৫ হাজার ৩৩৩ কোটি টাকা। এডিপি বাস্তবায়নের প্রকৃত হার হচ্ছে ৯২ দশমিক ২২ শতাংশ। অন্যদিকে সংশোধিত এডিপি বাস্তবায়নের সর্বনিম্ন হার হচ্ছে গত ২০১৭-১৮ অর্থবছরে। সেই সংশোধিত এডিপির আকার নির্ধারণ করা হয় ১ লাখ ৪৮ হাজার ৩৮১ কোটি টাকা। এর বিপরীতে ‘হিসাব মহানিয়ন্ত্রকের কার্যালয়’র (সিজিএ) হিসাবে প্রকৃত ব্যয় হয়েছে ১ লাখ ৯২ কোটি টাকা। সে বছর এডিপি বাস্তবায়নের প্রকৃত হার হচ্ছে সংশোধিত এডিপির ৬৭ দশমিক ৫ শতাংশ। তবে ‘আইএমইডি’র হিসাবে, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে এডিপি বাস্তবায়নের হার হচ্ছে ৯৪ শতাংশ।

অন্যদিকে এর আগে, তিনটি অর্থবছরের মধ্যে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে সংশোধিত এডিপির আকার ছিল ৭৫ হাজার কোটি টাকা। এর বিপরীতে প্রকৃত ব্যয় হয়েছে ৬০ হাজার ৩৭৭ কোটি টাকা। বাস্তবায়নের হার ৮০ দশমিক ৫ শতাংশ। অন্যদিকে, আইএমইডি বলছে, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে সংশোধিত এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে ৯১ দশমিক ৪০ শতাংশ। পরের বছর ২০১৫-১৬ অর্থবছরে সংশোধিত এডিপির আকার ছিল ৯১ হাজার কোটি টাকা। এর বিপরীতে প্রকৃত ব্যয় হয়েছে ৭৯ হাজার ৩৫১ কোটি টাকা। বাস্তবায়নের হার ৮৭ দশমিক ২০ শতাংশ। আইএমইডির হিসাবে এই হার হচ্ছে ৯২ দশমিক ৭২ শতাংশ। এরপরের বছর ২০১৬-১৭ অর্থবছরে সংশোধিত এডিপির আকার ছিল ১ লাখ ১০ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। এর বিপরীতে প্রকৃত ব্যয় হয়েছে ৮৪ হাজার ৯৩ কোটি টাকা। বাস্তবায়নের হার ৭৫ দশমিক ৯৬ শতাংশ। আইএমইডির তথ্য মতে, বাস্তবায়ন হার ৮৯ দশমিক ৭৬ শতাংশ। একইভাবে গেল ২০১৮-১৯ অর্থবছরে আইএমইডি হিসাবে আরএডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে ৯৪ দশমিক ৩৬ শতাংশ। অন্যদিকে, অর্থ মন্ত্রণালয় বলছে, এই হার হতে পারে ৮৪ শতাংশের মতো। প্রকৃত হিসাব এখনো করা হয়নি বলে জানা গেছে। এ বিষয়ে অর্থ বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, আরএডিপি বাস্তবায়ন নিয়ে সিজিএর সঙ্গে আইএমইডির হিসাবে পার্থক্যের পরিমাণ প্রায় ১০ শতাংশের মতো। তবে পার্থক্য থাকাটা স্বাভাবিক। এর কারণ হচ্ছে, আইএমইডি শুধু ব্যয়ের হিসাব করে বাস্তবায়ন হার নির্ণয় করে থাকে। কিন্তু সিজিএর পক্ষ থেকে সেই ব্যয়টি প্রকৃতই হয়েছে কি না, তা চুলচেরা হিসাব করে তারপরই চূড়ান্ত হিসাবটি করে। এ ক্ষেত্রে সিজিএর তথ্যটিই অর্থ বিভাগ ব্যবহার করে এবং তা সঠিক হিসাবেও বিবেচনা করে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close