নিজস্ব প্রতিবেদক
বিমা খাত বিকাশে কমিশন বাণিজ্য বড় সমস্যা
বিমাশিল্পের গোলটেবিল আলোচনা সভায় বক্তারা
বিমা খাতের বিকাশে কমিশন বাণিজ্য এবং গ্রাহকদের অনাস্থা বড় সমস্যা বলে মনে করেন এ খাতের সংশ্লিষ্টরা। এসব সমস্যার সমাধান করে গ্রাহকদের কাছে বিমার নতুন নতুন পণ্য তুলে ধরতে পারলে দেশের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধিতে বড় অবদান রাখা সম্ভব বলে মনে করেন তারা।
গতকাল মঙ্গলবার ‘বাংলাদেশের বিমাশিল্পের বর্তমান : বিরাজমান সমস্যা ও সম্ভাব্য সমাধান’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনা সভায় এমন কথা বলেন বক্তারা। অনুষ্ঠানটি আয়োজন করে বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশন (বিআইএ)। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বিআইয়ের চেয়ারম্যান ও সোনার বাংলা ইন্স্যুরেন্সের চেয়ারম্যান শেখ কবির হোসেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে আইডিআরএর চেয়ারম্যান মো. শফিকুর রহমান পাটোয়ারী বলেন, কয়েকটি সমস্যা বিমা খাতের বিশাল সম্ভাবনাকে বাধাগ্রস্ত করছে। এর মধ্যে অন্যতম বিমা খাতে গ্রাহকদের অনাস্থা ও কমিশন বাণিজ্য। ফলে তৈরি হচ্ছে ইমেজ সংকট। এগুলো দূর করার উদ্যোগ নিয়েছি। সবাইকে মিলে অনৈতিক প্রতিযোগিতা বন্ধ করতে হবে। ২০১৮ সালেই এই সমস্যার সমাধান করতে হবে বলে জানান তিনি।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মানিক চন্দ্র দে বলেন, আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে বড় সমস্যা হলো একটি আইনের খসড়া করে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর পরে অনেক ক্ষেত্রে বড় ধরনের পরিবর্তন আসে। সেগুলো আইডিআরএ পাঠানোর পর স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা করে মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে অনেক সময় নষ্ট হয়। এতে সঠিক সময়ে সঠিক আইন করে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয় না।
সব কিছু মিলিয়ে বিমা খাতে যে সম্ভাবনা রয়েছে তার সুফল পেতে হলে গতানুগতিক পণ্যের বাইরে নতুনভাবে চিন্তা করতে হবে। তিনি আরো জানান, মানুষের প্রয়োজনীয় বিষয়গুলোর ওপর যদি বিমার পণ্য ডিজাইন করা যায় তাহলে বিমা প্রচারে অনেক সহজ হবে।
আইডিআরএ সদস্য গকুল চাঁদ দাস বলেন, কমিশন নিয়ে সমস্যা সমাধান না করলে নতুন করে বাজার সৃষ্টি করে কোনো লাভ হবে না। এটা লাইফ আর নন-লাইফ হোক। তিনি বলেন, বিমানীতি বাস্তবায়ন করা হয়নি। বিমানীতি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হবে। প্রয়োজনে মন্ত্রণালয়ে নতুন করে সময় বৃদ্ধির জন্য আবেদন করতে হবে। পাশাপাশি বেশ কিছু আইনের পরিবর্তন করা যেতে পারে।
এসবিসির চেয়ারম্যান শিবলী রুবায়েত-উল-ইসলাম বলেন, বিমা খাতের আস্থার অভাব রয়েছে। তার কারণ একই ব্যক্তির কাছে পলিসির জন্য সব কোম্পানির লোকেরাই যান। কিন্তু কোনো নতুন প্রডাক্ট ডিজাইনে কোম্পানিগুলো গুরুত্ব দেয় না। কোম্পানিগুলোকে ইনোভেটিভ প্রডাক্ট, ই-প্রডাক্টসহ নতুন ও আকর্ষণীয় প্রডাক্ট বাজারে আনতে হবে।
তিনি বলেন, ইসলামী ব্যাংকিং বিষয়ে দেশে প্রচার রয়েছে। কিন্তু ইসলামী বিমার সেক্ষেত্রে প্রচার নেই। এটা প্রচার করতে হবে। পাশাপাশি স্বাস্থ্য বিমা চালু করতে হবে। এ ছাড়াও পুনঃবিমা দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে। এটা বন্ধ করা দরকার।
মেঘনা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দিন বলেন, লাইফ ইন্স্যুরেন্সগুলোকে দেখার কেউ নেই। বিমা কোম্পানিতে নিয়মিত অডিট হচ্ছে না। আইডিআরএকে অন্তত দুই বছর পর পর অডিট করতে হবে। পাশাপাশি বিমা কোম্পানির এমডিকে গ্রাহকদের টাকা সঠিকভাবে দেখভালের জন্য আইডিআরএকে তদারকি হবে।
সানলাইফ ইন্স্যুরেন্সের চেয়ারম্যান রুবিনা হামিদ বলেন, জীবন বিমা কোম্পানির উন্নয়নে এজেন্ট দিয়ে বিমা পলিসি বিক্রির পাশাপাশি অনলাইনে পলিসি বিক্রি করতে হবে। ব্যাংক ইন্স্যুরেন্স (ব্যাংক গ্যারান্টিতে বিমা) বিমা বাধ্যতামূলক করা দরকার। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক ও মন্ত্রণালয়ের সঠিক নির্দেশনা আসা দরকার। এ ছাড়াও নতুন করে স্কুল ব্যাংকিংকে বিমার আওতায় আনার পাশাপাশি ব্যাংক ও গামেন্টসহ প্রতিষ্ঠানগুলো গ্রæপ বিমায় অনীহা প্রকাশ করছে। সবার জন্য বাধ্যতামূলক করা দরকার।
সাধারণ বিমা নিয়ে সেমিনারে এ কে এম মনিরুল হক বলেন, দেশের অর্থনীতির তুলনায় বেশি বিমা কোম্পানিকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ফলে বিমা খাতে অসুস্থ প্রতিযোগিতা সৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়া দেশে দক্ষ বিমা বিক্রিয় কর্মী নেই। দেশের স্কুল কলেজের বিমা সম্পর্কে পড়াশোনার সুযোগ নেই।
বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স ফোরামের সভাপতি এমডি বিএম ইউসুফ আলী বলেন, বিমা কোম্পানির এমডি নিয়োগে সর্বনিম্ন বয়সসীমা ৪০ রয়েছে। এটা আরো কমানোর পাশাপাশি বিমা সম্পর্কে প্রচারণা বাড়ানো দরকার।
"