মাহফুজ রিপন
সাঁইকাব্য
সাঁইকাব্য চিত্রকল্পের কবিতা। এই কবিতায় আছে গভীর দেশপ্রেম আর প্রগতির তাড়না। আধুনিকতা বা উত্তরাধুনিকতা যাই বলেন না কেন সাঁইকাব্য কোনো ফ্রেমে বাঁধা নেই। স্বীকার করতে হবে এ কাব্যে ভাব-বাদের প্রত্যক্ষ প্রভাব রয়েছে। কবিতায় বেজে উঠেছে মানবমুক্তির গোপন মন্ত্র। বিচিত্র অভিজ্ঞতা অর্জনের মধ্য দিয়ে এই কাব্যধারা নির্মাণ করেছেন মাহফুজ রিপন
তেরশত নদীর দোহাই
ভোরবেলা নদীর পাড়ে শঙ্খচিলটাকে দেখতে পেয়েছিলাম খুব। তার পালক থেকে আদি রস ছড়িয়ে পড়ছে জেলেদের সংসারে, শোঁ শোঁ বাতাসের শব্দ বটপাতার নাচন যেন বৃষ্টি বৃষ্টি খেলা। ঝড় আসে তীব্র বাতাসে দুলতে থাকে বাবুইপাখির বাসা, বর্ষা এলে জেলেরা গুন গুন গান ধরে কাঁধেতে ঝাঁকিজাল।
ফিলিপ নগর থেকে ছুটে আসা বাগাড় ধরা পড়ে পাথরঘাটায়-
সাঁই তুমি না থাকলে সুগন্ধি টোপেও মাছেরা আসে না বড়শিতলায়।
তোমার নাম জপলেই কী যেন কিলবিল করে নদীতে অবিরাম। টিটিপঙ্খী দিন চলে যায় মাছেদের বন্দনায়; অন্ধকার হয়ে আসে অতঃপর জেলে মনে মনে ভাবে নদীতে বাঁধ দিয়েছি ভীষণ, তাই মাছেদের অনশন ভাঙছে না মাঝ দরিয়ায়। ভোরবেলা ঘর ছেড়ে বেরিয়ে পড়ে জালুয়া পাখির তালাশে; শঙ্খচিল ছোঁ দিয়ে ছোট্ট পুঁটিমাছ ধরতে গিয়ে এক নিঃশ্বাসে জলের মধ্যদিয়ে দ্রুত পাতালপুরে গিয়ে পৌঁছায়। গুরুবার পাতালপুরে মাছেদের জলসাÑ তারা সেখানে তেরশত নদীর নামকীর্তন করে; পাখিটার ঘোর লাগে খুব, পাতালপুরী জমে উঠলে মাছের চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ে।
মনীষার মন্দিরা
সূর্যের মৃত্যুক্ষণে দুয়ারে দাঁড়িয়ে বাউলÑ
প্রতিদিন সে নয় বাড়ি যায় ভিক্ষার গান গায়।
বিষাদ সুরে খুলে যায় শত বছরের বন্ধ কপাট
গোর থেকে ভেসে আসে কর্পুরের ঘ্রাণ
মনীষার স্মৃতিগুলো মায়ার সুর তোলে।
পূর্ণিমার চাঁদ গাঢ় হলে পৃথিবী ধবল আলো পায়
ঠিক সে রাতেই সাঁই আমার উখিয়ার পথ ধরে।
গভীর অরণ্যে বনদেবীর পশরা পাহাড়িয়া সবুজে
বাউল অতি গোপনে একাকী ঢুকে যায় গুহার ভেতর।
একতারায় টুং টাং সুর তুলে গীত আরম্ভ হয়
রাত বাড়তেই থাকে কানপাতলে শোনা যায়
মনীষার মন্দিরা আর দোহারের গান।
এক দৌড়ে চলে যাই পাহাড় থেকে পাহাড়ে
কাছে গেলে কেউ নাই সব যেন হাওয়াই মিঠাই
শুধু একলা আসনে বসে আছেন পরাণ সাঁই।
দানের পয়সা
কারেন্ট তার নিশানা করে ছুটছো বাউল
দিগন্তরেখা ভেদ করে কীসের তালাশে।
তোমার বসন থেকে খসে পড়ছে আলো
তড়িৎ শক্তি চলে এসেছে খমকে খমকে।
বাজপাখি বায়ুমানচিত্র ভাঙছে আকাশে
মনবাউল সীমানারেখা ভাঙতে পারে না।
বর্ডারে সাদা আর খাকি রঙের বড়াই চলছে
ফুল পাখি প্রজাপতি ডাকলে বাউল শুধু কাঁদে-
দলাধরা মানুষের যাওয়া আসা লাইনে লাইনে।
মড়া পড়ে থাকে কাঁটাতারের ওপারে
বিষাদসুরে মাঝরাতে বিরাট তুফান
নড়বড়ে কেন রাতের সীমানা পিলার!
ঝাঁ ঝাঁ রোদে পঙ্খী উড়াল দিল,
নোম্যান্সল্যান্ডে বেওয়ারিশ একতারা।
দুদেশের পতাকা বৈঠক, লাল নিশান
বট বৃক্ষরোপণ, ধূপকাঠি জ্বেলে-
দানের পয়সায় রঙিন ভোর।
মায়াজাল
মায়াকে সুখের খবর জানানোই আমার শান্তি-
আমার ভুলগুলো আড়াল করা মায়ার প্রশান্তি।
জলের হাওয়া ঠান্ডা ছাওয়া বরফগলা জল
আজ মনোরথ উড়াল দিলো বাউল জীবন।
লাটাই ছেঁড়া ঘুড়ি যেমন এতি উতি করে-
শরতের আকাশ থেকে স্বপ্নসুধা ঝরে।
রোজ আসনে বসি আমি ধ্যানের খেলায়
ছবিগুলো নামতে থাকে মেঘের ভেলায়।
হঠাৎ কে নাড়িয়ে দিলো ছায়ার মনিটর
দুই তার এক হয়েছে জ্বলে হৃদমাঝার।
পড়ে থাকলো জরির জীবন রেশমজলের ক্যান-
একতারা হাতে নিলাম এবার মায়া মন্দিরাটা আন।
"