শব্দের ফাঁদ
ফটোগ্রাফার
ধরো, পাহাড়টাকে তুলে এনে রাখলাম তোমার জানলার ধারে
ঝরনাটা বসিয়ে দিলাম ঠিক বাথটাবের পাশে-
তুমি কলকলিয়ে ছলছলিয়ে পাহাড় বেয়ে যাও
বন্যহাতির পালে মিশে মুঘলি বনে যাও
আমার জানলার পাহাড় সরে গেছে
বাথটাবে নাই পানি,
চক্ষুজুড়ে বসে আছে ধূ-ধূ বালুভূমি;
মেঘের কণা, নামো পাহাড় থেকে
বৃষ্টিতে আজ ভিজে ভিজে বাঁধাবো সর্দি-কাশি
ধরো, সাগরটাকে তুলে এনে রাখলাম তোমার বারান্দায়
প্রবাল দ্বীপটা বসিয়ে দিলাম ড্রয়িংরুমের সোফায়
তুমি হেলেদুলে গুনগুনিয়ে সাগর দেখো মেয়েÑ
ঝিনুক কুড়ানি বালিকা তোমার সখী বনে যাক
মেঘের কণা, সাগর থেকে উঠে আসো ধেয়ে
জানলার পাশের পাহাড় থেকে নামো থেমে থেমে
শেষ বিকেলে তোমার বেডরুমের দেয়ালে আঁকলাম রংধনু
দেয়ালের সাথে আজ তোমার একটু কথা হোকÑ
ফটোটার ফ্রেমে ধুলো জমে আছে
পাহাড়ের চূড়ায় দাঁড়িয়ে আছো মেয়ে
পেছনে সহস্র নটিক্যাল মাইল আটকে গেছে মাকড়ের জালে
নদীর ঢেউ
কাজল গলে পড়ল ঢলে
চিবুক হলো নদীÑ
নদীর জলে সাঁতরে চলে
শুশুক নিরবধি।
কাহার লাগি কান্দো আঁখি
কষ্ট নিলা কার?
সুখের আশা করলা মিছা
সুখ যে নিরাকার!
শুশুক মনে দুঃখ ঘনে
রাখোনি তার খোঁজ
নদীর ঢেউ, নদীর ঢেউ
জোয়ার-ভাটা রোজ
চৌধুরী বাড়ির মেয়ে
চৌধুরী বাড়ির মেয়ে তুমি চাইলে
স্কুলটা তোমার ঘরে চলে আসে
বদরাগী হেডমাস্টার চক-ডাস্টার নিয়ে
চলে আসে তোমায় অংক শিখাতে
তবু কৃপা করে তুমি প্রতিদিন
কলাবেণী দুলিয়ে দুলিয়ে স্কুলে আসো
তোমাকে দেখার জন্য পথের ধারে
এলাকার সব ড্রপআউট রোমিও দাঁড়িয়ে থাকে
চৌধুরী বাড়ির মেয়ে, তুমি বললে
একে একে সবকটা বখাটে আবার স্কুলে যাবে
তুমি বললে
চিরতরে বন্ধ হবে বেতের ব্যবহার
তুমি বললে
সবগুলো ক্লাস হবে স্বরচিত কবিতার,
তুমি বললে
স্কুলব্যাগ ভরে লাল গোলাপ আনবে সবাই,
তুমি বললে
দফতরি এখনই ঘণ্টা বাজাবে,
তুমি বললে
আম-কাঁঠালের ছুটি ফুরবে না আর কোনো দিন
তুমি চাইলে
থাকবেই না কোনো স্কুলÑ
আমরা ঘুড়ি উড়াব
লাটিম ঘোরাব সারা দুপুর
রঙিন মার্বেল নিয়ে হবে মারামারি,
বাঁশি বাজানোর শিক্ষা নেবো রাখালের কাছে,
শিস কেটে পাখিকে ভরকে দেবো
শেয়ালের মতো ডাক দিয়ে ভাঙাব গৃহস্থের ঘুম
আমাদের পিটি ক্লাস হবে শুধু ফসলের মাঠে
পাগল
লেনদেনের এ দুনিয়ায় তুমি তোমার বদল করে
হাসির বদলে হেসে, কান্নার বদলে চোখের কোঠরে
জলের চিহ্ন এঁকে, শরীরের বদলে শরীর নিলে যেন!
কার খোঁজে পথে পথে ঘোরো, তবে পাগল ছাড়লে কেন?
একবার পাগল ছাড়লে পরে, আর যায় না পাগল ধরা
তোমার পাগল চলে গেছে, এই পাগলের ধারা!
২
কার পাগলের খোঁজ রাখে কে, পাগল সাজে সবাই
কোন হৃদয়ের প্রেম নিবে গো, হৃদয় কারো নাই
শরীরের বদলে শরীর নাও, এ শহরে প্রেম মরীচিকা
আজ ভুলে যাওয়ার দিনে মুছে ফেল তারে মন থেকাÑ
প্রেম মানে তুমি আমি শেষ, এই কথা সাধু কয়Ñ
পাগল কখনো যায় না চলে, পাগল যদি সে হয়!
কেউ একা নয়
নিঃসঙ্গতা মানে একা নয়
স্মৃতির জাহাজ ভিড় করে মাথায়
দীর্ঘ ভ্রমণের পর একে একে নেমে আসে
হারানো প্রেমিক, হারানো স্বজন
নিঃসঙ্গতার অপর নাম কোলাহল
দৃশ্যত একাকী, তবু একা নই কেউ
স্মৃতির মানুষ হাত ধরে বসে থাকে
তারা কথা কয়, হাসে, কাঁদে;
একা থাকা যায় পথে, মিছিলে
একা থাকা যায় বাসে, ট্রেনে
একা থাকা যায় কারো বুকে মাথা ঠুকেÑ
কেউ না থাকলে পাশে
প্রিয় মানুষের ভূত কাছে আসে
নিঃসঙ্গতা মানে স্মৃতির ভাগাড়
"