রবিউল আলম ইভান, কুষ্টিয়া

  ১৫ জুলাই, ২০২০

পশু নিয়ে বিপাকে খামারিরা শঙ্কায় অর্থলগ্নিকারী প্রতিষ্ঠান

দেশীয় পদ্ধতিতে গরু-ছাগল পালনের পরিচিত জেলা কুষ্টিয়া। বছর শেষে কিছু আর্থিক সঞ্চয়ের লক্ষ্যে প্রতি বছরই ধারদেনা করে খাইয়ে গবাদি পশু পালন করেন এখানের তৃণমূলের চাষি ও খামারিরা। কিন্তু এবার করোনা সংকটে আটকে গেছে তাদের গরু-ছাগল বিক্রয়। এতে হতাশা ও শঙ্কার মধ্যে দিন কাটছে তাদের। এমনকি এখাতে অর্থলগ্নিকারী ব্যাংক কর্তৃপক্ষও চিন্তিত তাদের ঋণ আদায় হবে কি না।

জেলার প্রাণিসম্পদ বিভাগের তথ্য মতে, কোরবানির বাজারে বিক্রয়ের জন্য কুষ্টিয়ায় এ বছর ১ লাখ ৫ হাজার গরু-মহিষ এবং ৭০ হাজার ছাগল-ভেড়া উৎপাদন হয়েছে। বাজার মূল্য যার দাম প্রায় ১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা।

ভেড়ামারা উপজেলার সলক মন্ডল জানান, ‘গুড় তো গুড়, গুড়ের বাটি শুদ্ধি গায়েব হওয়ার দশা। গত কোরবানির পর ৬ ডা গরু কিনিচি সাড়ে ৪ লাখ টাকায়। প্রতিটা গরুর জন্যি দিনে খাওয়া খরচ হয় ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা। তাতি বছরে একটা গরু বড় করতি খরচই হয়ে যায় ৮০-৯০ হাজার টাকা। এজন্য সমিতির ঋণ করতি হচে, সেই টাকা সুদসহ দিতি হবি। একন এই গরুর দাম ১ লাখ বা ৯০ হাজার কয়! তালি তো ঘড়বাড়ি বেচি সব টাকা শোধ করা লাগবিনি!’ একই অভিজ্ঞতা বলেন মিরপুর উপজেলার সদরপুর গ্রামের কৃষক শহিদুলের স্ত্রী হাফিজা খাতুন। এবারেও ৩টি দেশীয় জাতের ষাঁড় প্রস্তুত করেছেন তিনি।

একদিকে খামারিরা ব্যাংক ও এনজিও থেকে ঋণ নিয়েছেন। অন্যদিকে প্রান্তিক চাষিরা ২-৩টা করে গরু পালন করেছেন নিজের সুখ সাচ্ছন্দ ত্যাগ করে। তারা বলছেন, একটি গরুর খাওয়া বাবদ প্রতিদিন খরচ হয় ২০০ থেকে ৩০০ টাকা। অন্যান্য বছর ঈদের ১৫-২০ দিন পূর্বেই জেলার বাইরে থেকে আগত ক্রেতা বা ব্যাপারীরা বাজার দরে সিংহভাগ গরু কিনে নিয়ে চলে যান। কিন্তু এ বছর অর্ধেক দামেও বিক্রয়ের কোন লক্ষণ দেখছেন না তারা।

মিরপুর উপজেলায় এ বছর সাড়ে ২১ হাজার গরু-মহিষ এবং প্রায় সাড়ে ৪ হাজার ছাগল-ভেড়া আছে বিক্রয়যোগ্য। এজন্য অনেক খামারি ব্যাংক বা এনজিও থেকে ঋণও নিয়েছেন। উপজেলা পশুসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. সোহাগ রানা বলেন, ‘এ বছর স্বাভাবিক পদ্ধতিতে গরু-ছাগল বিক্রয়ের সুযোগ সীমিত হওয়ার কারণে প্রান্তিক চাষিরা সব পশু বিক্রয় করতে পারবে কিনা সেই শঙ্কায় আছে প্রাণি সম্পদ বিভাগও।’

জেলা পশুসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. সিদ্দিকুর রহমান। তিনি বলেন, কুষ্টিয়ার ছয়টি উপজেলায় সব মিলিয়ে মোট পৌনে ২ লাখ গবাদি পশু মোটাতাজা করা হয়েছে, যার বাজার মূল্য প্রায় ১৬শ কোটি টাকা। স্বাভাবিক সময়ের হিসেবে এর মাত্র ৩০ ভাগ পশুতেই জেলা চাহিদা মিটে যায়। বাকি ৭০ ভাগ পশুই ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ হয়ে থাকে। এবার করোনায় স্বাস্থ্যবিধির বাধ্যবাধকতা থাকায় পশু বিক্রয় চিন্তিত চাষিরা। তবে সরকারি উদ্যোগে অনলাইন পশু বিক্রয় সহযোগিতার আয়োজন থাকলেও প্রযুক্তিগত অজ্ঞতার কারণে খুব কম সংখ্যক খামারি বা চাষি এ সুযোগ কাজে লাগাতে পারছেন।’

বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক কুষ্টিয়ার মুখ্য আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক মুনসুরুর রহমান। প্রতিদিনের সংবাদকে তিনি জানান, ‘পশু মোটাতাজাকরণে কুষ্টিয়ার খ্যাতি থাকায় লাভজনক এখাতে বিভিন্ন ব্যাংক স্বল্পমেয়াদি ঋণ দিয়ে থাকেন। আমরাও দিয়েছি। এখাতে প্রায় ৬০ কোটি টাকা খামারিদের ঋণ দেওয়া আছে। এছাড়া অন্যান্য ব্যাংক, এনজিও এবং অর্থলগ্নিকারী প্রতিষ্ঠানও ঋণ দিয়েছেন।’

এই ব্যাংক কর্মকর্তা বলেন, ‘প্রতি বছর ঈদের পরদিন এসব অর্থলগ্নিকারী প্রতিষ্ঠান প্রান্তিক পর্যায়ে কালেকশন বুথ স্থাপনে মাধ্যমে প্রদত্ত ঋণের টাকা সংগ্রহ করেন। কিন্তু এ বছর অনেক গ্রহিতা ঋণ পরিশোধের অনিশ্চয়তার কথা জানিয়েছে। তবে তারা ইচ্ছা করলে সরকার ঘোষিত শতকরা ৪ ভাগ হারে সুদে সহায়তা নিয়ে ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করতে পারবেন।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close