সুফিয়ান আহমদ চৌধুরী
ঈদের আনন্দ
ঈদের নামাজ পড়ে বাসার পথে পা বাড়ায় জীবন। তার চোখে খুশির দীপ্তি ছড়িয়ে পড়ছে। হৃদয়ে বেলুন যেন উড়ছে। আকাশ পরিষ্কার। সোনালি রোদ হাসছে। রাতে অবশ্য খু-উ-ব বৃষ্টি হয়েছে। যার জন্য রাস্তায় মাঝে মাঝে বৃষ্টির পানি জমে আছে, তা চোখে দেখে সামনে হাঁটছে জীবন। কনকনে হাওয়া তার গায়ে পরশ দিয়ে যাচ্ছে। তার দৃষ্টি পড়ে পাশের একটি ফুলগাছে। একটি প্রজাপতি উড়ছে রঙিন ডানা মেলে। গাছের পাতাগুলো বাতাসের সঙ্গে নৃত্য করছে। প্রজাপতিটি জীবনের মনকে রাঙিয়ে দেয়। রঙিন ভাবনা ভিড় জমায় তার বুকে। ইচ্ছে হয় প্রজাপতি হয়ে ঘুরে বেড়াতে।
প্রজাপতি ফুলে ফুলে বসে। মধু আহরণ করে। জীবনের কাছে সে দৃশ্য অত্যন্ত মধুর লাগে।
: ও স্যার!
হঠাৎ তার ভাবনায় ছেদ পড়ে। রঙিন ভাবনার ঘটে যবনিকা। চোখ ফেরাতেই দেখে পথ আগলে একটি ছেলে দাঁড়িয়ে আছে। তার হাতে একটি থালা। এতে কিছু ভাংতি পয়সা ও এক টুকরো রুটি রয়েছে। ছেলেটি জীবনের দিকে চেয়ে বললো : সাব; একটি টাকা-দেউকা। আল্লা আফনারে বড় লোক করবো।
: বড় লোক!
ছেলেটির কথাগলো জীবনকে আন্দোলিত করে। একটু পর দৃষ্টিটা ছেলেটির গায়ে পড়তেই একরাশ বেদনা জীবনের বুককে আঁকড়ে ধরে। আহত একটি পাখিকে দেখে অন্য পাখিটি যেমন ব্যথিত হয়। জীবন ছেলেটিকে আপাদমস্তক দেখে নেয়ে এক নজর। ছেলেটি একখানা ছেঁড়া লুঙ্গির টুকরো দিয়ে কোন রকমে লজ্জা ঢেকে রেখেছে। মাথার চুল রুক্ষ, জট পাকানো। মনে হলো অনেক দিন চুলে সাবান তেলতো দূরের কথা জলের ছোঁয়াও লাগেনি।
: তোর নাম কী? জীবন জানতে চায়।
: রাজা।
: থাকিস কোথায়?
: যেখানে যখন জাগা পাই?
: তোর বাবা-মা আছে?
: জ্বী না, কেউ নাই।
জীবন লক্ষ্য করে রাজার চোখে অশ্রু জমে উঠেছে। সে সান্ত¦না দেয়- ছিঃ রাজা কাঁদতে নেই। তাতে তোমার বাবা, মার আত্মা কষ্ট পাবে। রাজা কোনো কথা বলে না। শুধু আঙ্গুল দিয়ে দু’চোখ মুছে নেয়।
জীবন কিছুক্ষণ পর আবার জিজ্ঞেস করে : কোনো কাজ করিস না কেনো?
: আমারে কাম দিতে কে যাবে?
জীবনের মনটা জুড়ে এখন রাজা। তাই এভাবে ছেড়ে যেতে তার মনে চায় না। ঝটপট সিদ্ধান্ত নেয়, রাজাকে বাসায় নিয়ে যাবে। প্রস্তাবটা দিতেই প্রথমে অবাক হয় রাজা। পরে জীবনের পিছু পিছু হাঁটতে শুরু করে। এক সময় রাজাকে নিয়ে বাসায় পৌঁছে জীবন। মাকে সব খুলে বলে। জীবন মায়ের কাছ থেকে শার্ট-প্যান্ট নিয়ে রাজার হাতে দিলো। রাজার চোখ খুশিতে টগবগ করে ওঠে। আকাশের চাঁদ যেন হাতে পেয়েছে। গায়ে পরে নেয় সে ঝটপট।
জীবন তাকে মায়ের কাছে নিয়ে যায়। জীবনের মাকে রাজা দেখে অবাক দৃষ্টিতে। মনে পড়ে তার মায়ের কথা। চোখের পাতায় ভেসে ওঠে মায়ের ছবি। স্মৃতি উঁকি দেয় মনের পর্দায়। প্রতি ঈদে মা তাকে আদর করে বুকে জড়িয়ে ধরত। নিজ হাতে তার মুখে ঈদের খাবার তুলে দিত।
জীবনের মাকে সালাম করে রাজা। তারপর উঠে দাঁড়াতেই ক’ফোটা অশ্রু ঝরে পড়ে। জীবনের মা রাজার বুকের ব্যথা বুঝতে পারেন। তিনি তাকে সান্ত¦না দেন- ছি বাবা। অমন করে কাঁদতে নেই। শুনো, আজ তুমি আমাদের এখানে থাকবে।
রাজার মুখ খুশিতে উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। যেনো পূর্ণিমার চাঁদের আলোয় ঝলসে যায়।
রাজাকে নিয়ে জীবন ঈদের খাবার খেতে বসে। জীবনের মনে খুশির বান বইছে। মা নিজ হাতে খাবার তুলে দেন। জীবনের চোখাচোখি হতেই মিষ্টি হাসি হাসে রাজা। আর রাজার ঠোঁটের হাসির ঝিলিক সার্থক করে তোলে জীবনের ঈদের আনন্দ।
"