কে এইচ মাহাবুব

  ১৯ আগস্ট, ২০১৭

কুকুরের পাহারায় পুকুর

শহরের অদূরে নির্জন ঘন বন। চারপাশে পিচঢালা পাকা রাস্তা। প্রধান সড়ক থেকে গাড়ি অনায়াসেই যাতায়াত করতে পারে সেখানে। দেখতে ঠিক অনেকটা বাগান বাড়ির মতোই। আবার কখনো কখনো দেখে মনে হয়, এটি কোনো একটি সুন্দর পার্ক। আবার কেউ কেউ খান সাহেবের বাগান বাড়ি বলেও এর পরিচয় দেন। চারদিক বড় বড় গাছপালায় ভরা। সূর্যের আলোটা এখানে খুব কমই পড়ে। নারিকেল গাছের দিকে সবাই তো একেবারে হাঁ করে তাকিয়ে থাকেন। এখানে যারা-ই আসেন তারা নারিকেল গাছের দিকে না তাকিয়ে থাকতেই পারেন না! খান সাহেবের এখানকার নারিকেল গাছে প্রচুর নারিকেল ধরে। সবার নজর কাড়ে এই নারিকেল গাছগুলো। তিনি অনেক টাকা পান নারিকেল বিক্রি করে। বিশাল আকৃতির পুকুরের চারপাশে তারকাঁটা দিয়ে ঘেরা। তারকাঁটার পাশ দিয়ে চারদিকে রয়েছে সরু ইটের রাস্তা। খান সাহেব যখন সপরিবারে এখানে ঘুরতে আসেন তখন তিনি তাদেরকে নিয়ে এই ইটের রাস্তা দিয়েই ঘুরে বেড়ান। কোথাও কোথাও আবার ইটের রাস্তার পাশ দিয়ে রয়েছে অসংখ্য ফুলের বাগান। কী যে অপরূপ দৃশ্য- তা বলা বাহুল্য। পুকুরে ঢোকার জন্য একটিমাত্র গেট। দুই পাশে ছোট ওয়ালে লোহার গেট। গেটের ওপর রয়েছে বড় করে একটি সাইনবোর্ড, সেখানে বড় করে লেখা রয়েছে সর্ব সাধারণের প্রবেশ নিষেধ। খান সাহেব এখানকার এই পুকুরটিকেই তার প্রধান আয়ের উৎস হিসেবে দেখেন। তার পূর্ব পুরুষরাও মাছ চাষ করে সংসার চালাতেন। ভালোই কেটেছে তাদের জীবন । খান সাহেবও তার পূর্বপুরুষদের রীতিনীতি ধরে রাখার জন্য এ পুকুরে অনেক আগে থেকেই মাছ চাষ করে আসছেন। বছরের পর বছর চলে গেলেও তিনি এ পুকুরের মাছ চাষে তেমন একটা সফলতা আনতে পারেননি। জেলেরা এখানে যে ক’বারই মাছ ধরতে এসেছে তখনই বলেছে, হুজুর আপনাকে দিয়ে এসব হবে না। আপনার এই পুকুরের মাছ আপনি ধরার আগেই কেউ না কেউ ধরে নিয়ে যাচ্ছে। পুকুরে যতটা মাছ থাকার কথা ততটা মাছ থাকে না। জেলেদের কথা শুনে খান সাহেব তখন বলেন, কিন্তু কিভাবে সেটা? অতীতে গেট ছিল না তাই হয়তো যে কেউ রাতে ঢুকে মাছ ধরতে পারছে, চুরি করতে পারছে। এখন তো গেট দিয়ে আটকানো। এখন তো আর কোনো ফাঁকা নেই। খান সাহেব খুব চিন্তায় পড়ে গেলেন। তাহলে কি বাপ-দাদা পূর্বপুরুষদের কাজ আমি করব না? আমি কি তাদের সে পেশা ছেড়ে দেব? আমি যদি পাহারাদার হিসেবে কোনো মানুষ রাখতে চাই তাতে তো আমাকে আরো বাড়তি ৭-৮ হাজার টাকা প্রতিমাসে গুণতে হবে, যদি তাতেও কোনো কাজ না হয়, তবে লাভ কী? কী করব তখন? ভাবতে ভাবতে খান সাহেবের মাথায় এক নতুন ভাবনা এসে দাঁড়াল। কুকুর তো রাতে ঘুমায় না, ঘুমায় দিনে। আমি পুকুর পাহারা দিতে বিদেশি কুকুর কিনব। তাকে দিয়ে চলবে আমার পুকুর পাহারা দেওয়ার কাজ। যেমন ভাবনা তেমন কাজ। খান সাহেব তখন অনেক টাকা খরচ করে কালো রংয়ের একটি বিদেশি কুকুর কিনে আনলেন। বেশ কিছুদিন বাসায় রেখে তার পরিচর্যা করলেন পোষ মানানোর জন্য। যখন বুঝতে পারলেন ঠিক আছে, তখন তিনি কুকুরটাকে খাবারদাবার দিয়ে সেই গেটে রেখে আসলেন। গেটের সামনে সব সময়ই শুয়ে থাকে কুকুর কই কেউ তো আসছে না।

খান সাহেবের পুকুরের মাছ ছোট বলে হাবু অনেক দিন পুকুরের মাছ ধরতে যায়নি। আজ মনে মনে ভাবে, অনেক দিন মাছ ধরতে যাইনি। খান সাহেবের পুকুরের মাছগুলো এতদিনে হয়তো অনেক বড় হয়েছে! দেখি ছিপটা নিয়ে গিয়ে আজ কতগুলো মাছ ধরে

আনতে পারি কি না? তা ছাড়া জানাও হবে মাছগুলো এত দিনে কেমন বড় হয়েছে। হাবু বড়শির ছিপ হাতে নিয়ে খান সাহেবের পুকুরের দিকে হাঁটতে লাগল। পাকা রাস্তায় গড়াতে লাগল ছিপের বড়শি। পুকুরের গেটে গিয়ে দেখে একটি বিদেশি কুকুর পুকুর ঘাটে দিব্বি ঘুমাচ্ছে। হাবু কুকুরটাকে ঘুমাতে দেখে আস্তে আস্তে বলল, ঘুমাও বন্ধু ঘুমাও তোমার কাজ তুমি করো আমার কাজ আমি করি। খান সাহেব আমার জন্য তোমাকে রেখেছে আর সেই তুমি আমাকে ধরতে পারলে না? ঘুমাও বন্ধু! বন্ধু দেখ আমি কি করি। এই বলে হাবু ছিপ হাতে নিয়ে লোহার গেট বেয়ে ওপর দিয়ে গিয়ে অপর প্রান্তে নামতেই নিজের অজান্তে বড়শি বিঁধলো কুকুরের বাঁকা লেজে। হাবু বড়শির ছিপ ধরে টানতেই কুকুরের ঘুম ভেঙে গেল। কুকুর তখন ঘেউ ঘেউ করে মাথা উঠিয়ে দেখে তাকে কেউ সুতা দিয়ে বেঁধে টানছে। তখন কুকুর হাবুকে গেটের ভেতর ঢুকে ভীষণভাবে তাড়া করল। তাড়া খেয়ে দৌড়াতে দৌড়াতে বেহুশ হয়ে পড়ল হাবু। অনেক কষ্টে উঠে পরে নিজেকে কুকুর থেকে বাঁচাল। হাবু ভাবে, আজকের এই দিনের কথা আমার সারাজীবন মনে থাকবে। যত দিন ওই কুকুর আছে ততদিন আর খান সাহেবের পুকুরে মাছ ধরতে যাওয়া নয়। এই আমি কান ধরালাম। এই বলে হাবু তখন নিজেকে সান্ত¦না দেয়। যাক কুকুরের কামড় থেকে তো বেঁচে এলাম? কুকুরের ভয়ে হাবু এখন আর খান সাহেবের পুকুরে মাছ ধরতে যায় না। খান সাহেবের পুকুরে দিনে দিনে মাছ বাড়তে লাগল। সাথে সাথে বাড়তে লাগল তার আর্থিক উপার্জন। ফিরে পেতে লাগল তার সফলতা। ফিরে আসতে শুরু করল তার বাপ-দাদাদের পুরনো সেই কর্মের পরিপূর্ণ সফলতা। ধীরে ধীরে সেই কুকুর খান সাহেবের কুকুর হিসেবে সবার কাছে পরিচিতি লাভ করতে লাগল।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist