এস আর শাহ আলম

  ২৭ জুন, ২০২০

সাত রাজার ধন

এক.

অনেককাল আগের কথা। এক গ্রামে বাস করতেন এক কৃষক। সারা দিন মাঠেঘাটে কাজ করে কৃষক এবং তার বউয়ের দিন কেটে যেত বেশ সুখে। কিন্তু মনের দিক থেকে তাদের মতো দুঃখী সেই গ্রামে অন্য কেউ ছিল না। প্রায় দেড় যুগ হয়ে গেছে তাদের বিয়ের বয়স, তবু কোনো সন্তানের মুখ দেখতে পারেননি। সেজন্য পাড়াপড়শি কত কটুবাক্যই না শোনায় তাদের। নিরুপায় হয়ে দুজন নীরবে চোখের জল ফেলে তা সহ্য করে। এক দিন দুজনে ফজরের নামাজ পড়ে প্রাণ খুলে প্রার্থনা করে, হে আল্লাহ আমাদের যদি একটা সন্তান দিতে, তাহলে আমাদের শেষ সম্বল গোয়ালের বলদটা গ্রামবাসীকে দাওয়াত করে খাওয়াতাম।

দুই.

এক রাতে কৃষক ঘুমের মধ্যে স্বপ্ন দেখলেন। বাড়ির নিকটে যে নদী আছে মাঝরাতে সেই নদীতে গিয়ে দুজনকে ¯œান করতে হবে এবং নদীর মাঝখান থেকে এক ডুব দিয়ে কাদা মাটি এনে খেলে তবেই তারা সন্তানের মুখ দেখতে পারবেন। পরদিন সকালে কৃষক তার বউকে স্বপ্নের কথা খুলে বললেন। তা শুনে বউ গম্ভীর হয়ে বললেন, এই অসাধ্যকে সাধ্য করা কি সম্ভব? উত্তরে কৃষক বললেন, যত কষ্টই হোক এই কাজ আমাদের সম্ভব করতেই হবে। বাবা ডাক শোনার জন্য আমার বুকটা খাঁ খাঁ করে।

তিন.

বহু ব্রতের পর কৃষক এবং তার বউ সেই অসাধ্যকে জয় করেন। দেখতে দেখতে একসময় কৃষকের বউয়ের কোলজুড়ে এলো এক ফুটফুটে পুত্রসন্তান। পুত্র পাওয়ার আনন্দে কৃষক তার কথামতো গোয়ালের বলদ গরুটা জবাই করে গ্রামবাসীকে দাওয়াত করে খাওয়াল। সেই সঙ্গে পুত্রের নাম রাখল ‘সাত বাজার ধন’। দিন যায়, মাস যায় এভাবে বছর কেটে যায়। পুত্রও বড় হতে লাগল। তার মুখে বাবা-মা ডাক শুনে কৃষক এবং তার বউ খুশিতে উম্মাদ হয়ে যায়।

চার

হঠাৎ এক দিন এক ডাকাত দল জানতে পারে কৃষকের ঘরে সাত রাজার ধন আছে। কবে তা ছিনিয়ে আনবে ডাকাত দল, সেই দিনক্ষণ ঠিক করল। মাঝরাতে সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে। পুত্রকে জড়িয়ে ধরে কৃষক ও তার বউও ঘুমিয়ে পড়েছে। হঠাৎ ডাকাত দলের সর্দারের গর্জনে তাদের ঘুম ভেঙে যায়। ডাকাত সর্দার হুঙ্কার ছেড়ে কৃষককে বলল, কোথায় লুকিয়ে রেখেছিস সেই সাত রাজার ধন। জলদি বের করে দে, নইলে দেহ থেকে মুন্ড আলাদা করে ফেলব। পুত্রকে বুকে জড়িয়ে ধরে কৃষক এবং তার বউ ভয়ে থর থর করে কাঁপতে লাগল। বুকে সাহস সঞ্চয় করে বিনয়ের সুরে কৃষক বললেন, দেখ ভাই আমি চাষাভুষা মানুষ অন্যের খেতখামারে কাজ করে দিন কেটে যায়। বহু সাধনার পর এই সন্তান আল্লাহ আমাদের দিয়েছে, একে নিয়ে গেলে আমরা বাঁচব না। উত্তরে ডাকাত সর্দার বলল, এই গর্দভ তোর সন্তান দিয়ে আমরা কী করব। আমরা সাত রাজার ধন হিরা, মণি-মুক্তা চাই। হাস্যকর হয়ে কৃষক বললেন, কেন মিছে ঠাট্টা করছ ভাই! আমার বাপের জনমেও ওইসব দামি রতœ চোখে দেখিনি। ডাকাত সর্দার কৌতূহল হয়ে বলল, তাহলে লোকে যে বলে তোর বাড়ি সাত রাজার ধন আছে। এবার কৃষক বুঝতে পারল ডাকাতরা কেন তার ওপর হামলা করেছে। তারপর কৃষক সবকিছু খুলে বললেন। কৃষকের মুখে সব কথা শুনে ডাকাত দল অনুতপ্ত হয়ে চলে যায়।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close