ফারুক হোসেন সজীব

  ১২ অক্টোবর, ২০১৯

অন্ত ও বোকা বিড়াল

আজকাল অন্ত খুব ভোরেই ঘুম থেকে ওঠে। ঘুম থেকে উঠেই ফ্রেশ হয়ে নামাজ পড়ে। অন্তর আব্বু নামাজ পড়েন মসজিদে গিয়ে। কিন্তু অন্ত বাসাতেই পড়ে। এক দিন অন্তর আব্বু ফজর নামাজ শেষ করে হঠাৎ কোত্থেকে ধরে নিয়ে এলেন একটা বিড়ালছানা। বিড়ালছানাটি যেন আসতেই চাচ্ছিল না। তারপর নাকি অন্তর আব্বু বিড়ালছানাটিকে বলেছিলেন, বাসায় চলো তোমাকে খেতে দেব!

কী আশ্চর্য! বিড়ালছানাটি এই কথা শুনে নাকি অন্তর বাবার হাতের মুঠোয় চুপটি মেরে ছিল। তারপর থেকে অন্ত বিড়ালছানাটিকে নিয়েই দিন-রাত ব্যস্ত ভীষণ। আর বিড়ালছানাটিও যেন অন্তর মতো সুন্দর একটা বন্ধু পেয়ে ভীষণ খুশি। দিন-রাত অন্তর পেছনেই ঘুরঘুর করে। অন্ত বিড়ালছানাটির একটা নামও দিয়েছে, কিটি। প্রথম প্রথম অবশ্য এই নামে বিড়ালছানাটিকে ডাকলেও কোনো সাড়া পাওয়া যেত না। কিন্ত বারবার একই নামে ডাকাতে বিড়ালছানাটি এখন কিটি বললেই ম্যাও ম্যাও করে ডাকে। অন্ত বুঝতে পারে তারপর মানে বিড়ালছানাটি তার পোষা হয়ে গেছে!

কিন্তু শুধু পোষা হলেই তো হবে না। ওকে আচ্ছামতো শিকার ধরারও ট্রেনিং দিতে হবে। না হলে ঘরে বসে খেয়ে দেয়ে ও ভীষণ নাদুসনুদুস হয়ে যাবে। শেষমেশ লেজি ক্যাট হয়ে যাবে। তাই অন্ত ভেতরে ভেতরে একটা মিশন চালাল। মিশন মানে! ওকে যে করেই হোক শিকার ধরার ট্রেনিং দিতে হবে। আর এজন্য অন্ত দোকান থেকে কিনে আনল একটা টেনিস বল। বলটি মাটিতে ছুড়ে মারলে আবার কেমন অদ্ভুত বাউন্স করে নিজের মুখের কাছে চলে আসে। অন্তর বিড়ালটিকে দেখিয়ে বলটি ছুড়ে মারল। বিড়ালটিও ভীষণ অবাক হয়ে বলটির দিকে ছুটে গেল। কী ভাবল কে জানে!

তারপর বিড়ালটি ওর ছোট্ট দুটি পা দিয়ে মারল একটু-গুঁতো। বল গড়িয়ে যেতে লাগল আর বিড়ালছানাটিও ছুটে গেল বলের পেছন পেছন। তাপর আবার মারল গুঁতো বলটি গড়িয়ে গড়িয়ে চলতে লাগল। বিড়ালছানাটি মনে মনে হয়তো ভাবল, পেয়ে গেছি একটা গোল শিকারকে। তারপর দিন রাত বিড়ালছানাটি বলের পেছনে ছুটে ছুটে ক্লান্ত হয়ে হাফাতে লাগল। অন্ত বিড়ালছানাটির অমন কান্ডকারখানা দেখে তো হেসেই কুটিকুটি। অন্ত ভাবল, কী বোকা বিড়ালছানা!

অন্ত মনে মনে ভীষণ খুশি হলো, কারণ বিড়ালছানাটির দারুণ ব্যায়াম হচ্ছে। এতে করে বিড়ালছানাটির শরীরও সুস্থ থাকবে। শুধু কী তাই? মাঝে মাঝে বিড়ালছানাটি আশপাশের ঝুলন্ত দড়ি, বাতাসে নড়াচড়া করা দেখলেও সেটাকে শিকার ভেবে পেছনে লাগত। দড়িটি যতই নড়াচড়া করত, বিড়ালছানাটিও দড়ির সঙ্গেই নড়ত। মাঝে মাঝে আবার লুটিয়েও পড়ত মেঝেতে। অন্তর ঘরে একটি ঝুলন্ত ঘড়ি ছিল। অন্ত নিজের পড়াশোনার টাইম টেবিলটা ঠিক রাখার জন্য ঘড়িটি কিনেছিল। সেই ঘড়ির কাঁটা যখন টিকটিক করে ঘুরতে থাকে। বিড়ালছানাটি তখন অবাক হয়ে ঘড়ির কাঁটার দিকে তাকাত। কিন্তু ঘড়িটি যে ওর নাগালের বাইরে! কী করে ও ঘড়িটিকে শিকার করবে? অবাক হয়ে তাই বুঝি ভাবত! কিন্তু কোনো চিন্তা করেও বাগে আনতে পারছিল না। শেষমেশ চোখ দুটি ছোট করে চুপটি মেরে বসে থাকত। অন্ত বিড়ালছানাটির মতিগতি কিন্তু ঠিকই বুঝতে পারত।

এক দিন অন্ত স্কুল থেকে বাসায় এসে দেখে। কী আশ্চর্য! ঘড়িটি মেঝেতে পরে রয়েছে। ঘড়িটি ভেঙে একেবারে গুঁড়িয়ে গেছে। আর ঘড়ির টিকটিক করা কাঁটাটিও নেই। অন্তর বুঝতে বাকি রইল না। কাজটি কার? অন্ত দেখল বিছানার এক কোণে বিড়ালটি আয়েশ করে ঘুমাচ্ছে। আর বিড়ালটির মুখের কাছেও পড়ে রয়েছে সেই টিকটিক করা ঘড়ির কাঁটাটি। অন্ত ঘড়ির কাঁটাটি হাতে তুলে নিয়ে দেখল, প্লাস্টিকের কাঁটাটি কামড়ে একেবারে যাচ্ছেতাই করে ফেলেছে। অন্তর ভীষণ আফসোস হচ্ছে। আহা! কত শখের ঘড়ি ছিল তার! শেষমেশ ঘড়িটির কাঁটাকেও শিকারে পরিণত করল বিড়ালছানাটি?

বিড়ালছানাটি তো ভীষণ বোকা! না জানি ঘরের আরো কত জিনিসপাতি ওর নজরে আছে, কে জানে?

ফ্যানের বাতাসে মাঝে মাঝে নড়ে ওঠে ক্যালেন্ডারের পাতা। সেদিকেও নজর দিচ্ছে বোকা বিড়ালছানাটি! বাতাসে বইয়ের পাতাগুলো নড়চড়া করছে। বিড়ালছানাটি আড়চোখে তাকাচ্ছে।

অন্তর ভাবল, এ তো দেখছি মহাবিপদ! বিড়ালছানাটি কখন কী শিকার করে ফেলে, কে জানে? জানালার পর্দার দিকেও বিড়ালছানাটির কড়া নজর রয়েছে। কদিন আগে পর্দার কাপড়গুলোও কামড়ে কামড়ে আর নখের আঁচড় দিয়ে সুতোগুলোও বের করে ফেলেছে। বিড়ালছানাটি কী বুঝতে পারছে না! এগুলো ওর শিকার না। ওর শিকার তো ইঁদুর তেলাপাকা, মাকড়সা, টিকটিকি, ব্যাঙÑ এগুলো। এক দিন বিড়ালছানাটি একটি ছোট্ট ইঁদুরের ছানা ধরে ফেলল। অন্তর সামনে এসে আবার গোঙ্গাতেও লাগল। তার মানে অন্তকে বোঝাতে চাইছে, দেখো দেখো! আমি কী শিকার করেছি? অন্ত ভীষণ খুশি হলো। কিন্তু দিন দিন যে আরো অনেক কিছু শিকার করে তার সর্বনাশ করছে? সে খেয়াল কী বিড়ালছানাটির আছে?

অন্ত আবার রাতে মশারি না টাঙিয়ে কিছুতেই ঘুমাতে পারে না। চারদিকে মশার যা উৎপাত। সব সময় মুখের কাছে ভো-ভো-কো-কো করতে থাকে। কিন্তু সেই মশারিটারও কোনো নিস্তার নেই। বিড়ালছানাটি সেই মশারিকেও কামড়ে ছিঁড়ে ফেলেছে। এখন মশারির ফুটো দিয়ে অনায়াসেই মশা ঢুকে পড়ে। শেষমেশ বিড়ালছানাটি কি না মশারিকে নিজের শিকার ভাবল? বোকা বিড়াল কোথাকার! অন্ত মশারি বিষয়ে কিছুক্ষণ ভাবল, কেন বিড়ালটি মশারি শিকার করেছে? হঠাৎ তার মনে পড়ল আরে! মশারিকে শিকার করার পেছনে বিড়ালটির যথেষ্ট কারণও রয়েছে? তা হলো মশারি টানালে বিড়ালছানাটি রাতে শোবার জন্য তার ধারে কাছেও আসতে পারে না! এজন্যই বিড়ালছানাটির মশারির ওপর এত রাগ! প্রচন্ড গরমের কারণে অন্ত ফ্যান দিল। ফ্যানের বাতাসে তার বইয়ের পাতাগুলো ফড়ফড় করে শব্দ হচ্ছে।

আর যায় কোথায়? বিড়ালছানাটি এক লাফে টেবিলে উঠল। তারপর বইয়ের পৃষ্ঠাগুলো আচ্ছামতো কামড়ে মুছড়ে একেবারে যাচ্ছেতাই করে ফেলল। অন্ত হেই হেই করেও কোনো কাজ হলো না। এই কয়েক মুহূর্তেই যা হওয়ার হয়ে গেছে। পুরো বইটিই নষ্ট করে ফেলেছে ও। অন্ত বইয়ের পাতাগুলো আস্তে করে সব গুছিয়ে রাখল। আর বিড়ারছানাটির মাথায় হাত বুলাতে লাগল! আর বলল, হায়রে আমার কিটি! তোর কবে বুদ্ধিজ্ঞান হবে বলত দেখি? তুই কি না বইয়ের পৃষ্ঠাগুলোকেও নিজের শিকার ভাবলি? ওগুলো যে আমার পড়ার বই? এখন আবার আমাকে একটি নতুন বই সংগ্রহ করতে হবে? অন্ত বিড়ালের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে অনেকক্ষণ বকবক করল! কিন্ত বোকা বিড়ালছানাটি কিছু বুঝল কি না, কে জানে?

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close