আবদুস সালাম

  ২১ জুলাই, ২০১৮

গল্প

ফুটপাতের খাবার

জারা স্কুল থেকে আসার পর হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে পড়ে। কয়েকদিন ধরে সে ডায়রিয়ায় ভুগছে। ডায়রিয়ার সঙ্গে গায়ে জ্বরও রয়েছে। ডাক্তার বেশ কিছু পরীক্ষা-নীরিক্ষা দিয়েছে। ওদিকে মেয়ের চিন্তায় মা-বাবা সারারাত জেগে থাকেন। ঠিকমতো ঘুমাতে পারেন না। ডাক্তার রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পর তা পরীক্ষা করে বললেন, রোগী ফুড পয়জনে আক্রান্ত। কিন্তু জারার বাবা ডাক্তারের এই কথা কোনোভাবেই বিশ্বাস করতে পারছেন না। কারণ মেয়ের খাদ্য-খাবার নিয়ে তারা বেশ সচেতন। কোনো বাসি-পচা খাবার জারাকে কখনো খেতে দেওয়া হয় না। তাহলে কীভাবে তার ফুড পয়জন হলো? বাবার কৌতূহলÑজারা টিফিনে কী কী খাবার খায় সে বিষয়ে তিনি নিশ্চিত হবেন। স্কুলে যাওয়ার পথে জারা কোনো খোলা খাবার খেয়েছে কিÑনা, সে বিষয়ে বাবা তার কাছে জানতে চান। ঠিক তখনই বাবা-মায়ের সাবধান বাণীর কথা জারার মনে পড়ে গেল। ফুটপাতের খোলা খাবার অস্বাস্থ্যকর। সেসব খাবার না খাওয়ার জন্য আব্বু-আম্মু তাকে অনেকবার নিষেধ করেছেন। মা-বাবার নিষেধ সত্ত্বেও সে প্রায়ই ফুটপাতের খাবার খেত। এসব কথা স্মরণ হওয়ায় সে ভয় পেয়ে গেল। তাই সে বাবার প্রশ্নের উত্তরে মাথা নেড়ে না-সূচক জবাব দেয়। কিন্তু তার চোখে-মুখে আতঙ্কের ছাপ দেখে বাবা ঠিকই বুঝতে পারেন যে জারা মিথ্যা কথা বলছে। বাবা জারার কথার সত্যতা যাচাই করার জন্য তার এক ঘনিষ্ঠ বান্ধবী মুক্তাদের বাড়িতে গেলেন। সেখানে গিয়ে তিনি জানতে পারলেন মুক্তারও একই অবস্থা হয়েছিল। গতকালই সে সুস্থ হয়েছে। জারার বাবা এখন নিশ্চিত হলেন যে ওরা দুজনাই ফুটপাতের খাবার খেয়ে অসুস্থ হয়েছে।

বাড়িতে ফিরে বাবা জারার মাথায় হাত বুলিয়ে বলেন, ‘মামণি তোমার কোনো ভয় নেই। এখন সত্যি করে বলো তো, তুমি স্কুলে যাওয়ার পথে ফুটপাতের খোলা খাবার খেয়েছ কি না?’ বাবার অভয় পেয়ে জারা অবশেষে স্বীকার করল যে সে টিফিনের টাকা দিয়ে মাঝে মাঝে ফুটপাতের মুখরোচক খাবার খায়। এই যেমন : চটপটি, ফুসকা, শিঙাড়া, নুডলস, শরবতসহ নানান ধরনের ভাজাপোড়া খাবার। ওর কথা শুনে বাবা ভীষণ দুশ্চিন্তায় পড়ে গেলেন। তিনি মনে মনে একটা পরিকল্পনা করলেন। আর তা হলোÑফুটপাতের খাবার যে অস্বাস্থ্যকর তা জারার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেবেন। জারা সুস্থ হওয়ার পর তার বাবা একদিন জারাকে স্কুলে নিয়ে গেলেন। সেই সময় স্কুল গেটের বাইরে এক ফেরিওয়ালা চটপটি বিক্রি করছিল। একটু দূরে দাঁড়িয়ে থেকে জারা ও তার বাবা ওই ফেরিওয়ালার কেনাবেচা দেখছিল। জারা স্পষ্ট লক্ষ করল, ফেরিওয়ালা খরিদ্দারদের যে পিরিচে খেতে দিচ্ছে, খাওয়া শেষে সেই এঁটো পিরিচটা ধৌত না করে একটা গামছা দিয়ে মুছে কৌশলে অন্য পিরিচের সঙ্গে রেখে দিচ্ছে। সেই একই পিরিচে অন্য খরিদ্দারকে খেতে দিচ্ছে। এরপর তারা শরবত বিক্রেতার কাছে গেল। সেখানে গিয়ে দেখে শরবত বিক্রেতা খরিদ্দারদের এঁটো গ্লাসগুলো ছোট্ট একটা বালতির মধ্যে ডুবিয়ে রাখছে। নতুন কোনো খরিদ্দার এলে ওই বালতির নোংরা পানি দিয়ে গ্লাস ধুয়ে তাকে শরবত খেতে দিচ্ছে। এরপর হাঁটতে হাঁটতে তারা একজন আখের রস বিক্রেতার কাছে এগিয়ে গেল। আখগুলো একটা মেশিনে পিস্ট করা হচ্ছিল। আর তার রসগুলো একটা বরফখ-ের ওপর পড়ছে। জারার বাবা ওই বিক্রেতার কাছে জানতে চাইলেন, ‘এই বরফখ-টি কোন পানি দিয়ে তৈরি করা হয়েছে, বলতে পারেন?’ ‘বলতে পারব না স্যার।’ রস বিক্রেতা উত্তর দিল। জারার বাবা জারাকে বলেন, ‘শোন জারা, কোন পানি দিয়ে এই বরফখ-টি তৈরি করা হয়েছে, তা জানার কোনো উপায় নেই। এসব বরফ তৈরির ক্ষেত্রে সাধারণত নলকূপের পানির পরিবর্তে ওয়াশার লাইনের পানি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। পানিটা ফুটিয়ে বা ফিল্টারের মাধ্যমে বিশুদ্ধ না করে বরফ করা হলে তা হবে স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। আমরা জানি মানবদেহের ৭৫ শতাংশই পানি। পরিপাক, সংবহন, পুষ্টিকণা পরিবহন, খাদ্য শোষণ ও বিপাক, তাপমাত্রা, ভারসাম্য রক্ষাসহ শরীরের প্রতিটি কাজে পানির প্রয়োজন হয়। আর সেই পানি যদি দূষিত হয়, তাহলে আমাদের ডায়রিয়া, কলেরা, জন্ডিস, টাইফয়েড ইত্যাদি পানিবাহিত রোগ হতে পারে। তাই শতভাগ নিশ্চিত না হয়ে এ বরফের পানি মিশ্রিত শরবত না খাওয়াই উত্তম।’

বাবা জারাকে বুঝিয়ে বলেন, তোমার আম্মু টিফিনের জন্য যে খাবার দেয়, তুমি সেগুলোই খাবে। ক্যান্টিনের ফাস্টফুড বা জাঙ্ক ফুড খাবার খেতে সুস্বাদু হলেও তা পরিহার করাই উত্তম। ‘আব্বু, ক্যান্টিনের খাবার খেলে কী হয়? অনেকেই তো খায় দেখি।’ জারার এ প্রশ্নের উত্তরে বাবা বলেন, ক্যান্টিনের খাবার যে সব সময় অস্বাস্থ্যকর তা কিন্তু নয়। তবে অনেক সময় দেখা যায় ক্যান্টিনের খাবারে অতিরিক্ত লবণযুক্ত থাকে এবং পরিশোধিত শস্য দিয়ে তৈরি করা হয়, যা স্বাস্থ্যের জন্য খুব ক্ষতিকর। ডাক্তার সাহেবরা সব সময় বলেন, লবণাক্ত খাবার ও লবণ হার্টের জন্য অনেক ক্ষতিকর। এসব খাবার চিন্তা করার ক্ষমতা, স্মৃতিশক্তি ও শেখার ইচ্ছাকে নষ্ট করে দেয়। সৃষ্টি করে বিষণœতা ও উদ্বেগ। এসব খাবারে অনেক সময় মনোসোডিয়াম গ্লুটামেট ব্যবহার করা হয়, যা ক্যানসার, টিউমার, নিউরোলজিক্যাল ডিজ-অর্ডারের জন্য দায়ী। তা ছাড়া ফাস্ট ফুডে প্রচুর পরিমাণে ফ্যাট, শর্করা ও চিনি থাকে, যা দেহে মেদ বা কোলেস্টোরেল বাড়িয়ে দেয়। পড়াশোনা করা, কোনো কিছু শেখা বা বোঝার ক্ষেত্রে এগুলো বিরূপ প্রভাব ফেলে। বেশি বেশি ফাস্টফুড খেলে হার্টের রোগ, ওজন বৃদ্ধি, কিডনি রোগ, ক্যানসারসহ নানা ধরনের মরণঘাতী জটিল রোগ হতে পারে। সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হতে হলে, হাড় ও মাংসপেশির গঠন মজবুত করতে হলে এবং মেধাবী হতে হলে আমাদের সবার উচিত পুষ্টিকর খাবার খাওয়া। এদিক থেকে বলা যায়, মায়ের হাতের তৈরি খাবারের কোনো বিকল্প নেই।

বাবার কথাগুলো জারা খুব মনোযোগ দিয়ে শোনে। ফুটপাতের নোংরা খাবারগুলো দেখলে এখন তার গা ঘিন ঘিন করে। সে মনে মনে প্রতিজ্ঞা করল, সে আর কখনো ফুটপাতের খোলা খাবার খাবে না এবং তার বন্ধু-বান্ধবদেরও ফুটপাতের খাবারের বিষয়ে সতর্ক করবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist