ইউনুস আহমেদ

  ১৩ জানুয়ারি, ২০১৮

টোনাটুনির পিঠা উৎসব

এক যে ছিল টোনা আর টুনি। বনের ভেতর এক বাবলাগাছ। বাবলাগাছের ঢাউস এক পাতায় ওদের বাসা। টোনা আর টুনি সারাদিন ফুড়–ৎ ফাড়–ৎ করে ওড়ে। খড়কুটো খুঁজে আনে। মনের মতো করে বাসা বানায়। গুনগুন করে গান গায়। ওদের মনে অনেক সুখ। পাশ থেকে ছোট্ট এক খয়েরি কাঠবিড়ালি হঠাৎ বলে ওঠে, ও টোনা ভাই, খুব খুশি খুশি মনে হচ্ছে। ব্যাপার কী? বল দিকিনি একটু। টোনা বলে, বাসা তৈরির কাজ প্রায় শেষ, তাই এতো খুশি। কাঠবিড়ালি বলে, তাই! এতো খুব খুশির খবর। এ উপলক্ষে তো আমাদের দাওয়াত করে খাওয়াতে পার, তাই না? শুনেছি তোমরা নাকি মজার মজার পিঠা বানাতে পার। আর এদিকে শীত তো এসেই গেল। এ কথা বলে কাঠবিড়ালি তরতর করে গাছের মগডালে ওঠে যায়। ওদিকে সেখানে হাজির হয় এক কাঠশালিক। বলল, ‘পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম, পিঠার কথা শুনে দাঁড়ালুম। হ্যাঁ, এবার বলো তো ভায়া পিঠার কথা কে বলল? টুনি বলল, আমাদের বাসা তৈরি উপলক্ষে খয়েরি কাঠবিড়ালি পিঠা খেতে চেয়েছে। ‘পিঠা তো আমিও অনেক পছন্দ করি। তা বাপু, পিঠা যদি বানাও তো আমিও যেন দাওয়াতটা পাইÑবলেই কাঠশালিক ওড়াল দিল। এবার নাচতে নাচতে সেখানে হাজির হলো এক দোয়েল। ‘কাঠশালিকের মুখে দাওয়াত শব্দটা শুনতে পেলাম মনে হচ্ছে, ব্যাপার কী? কে কাকে দাওয়াত দিচ্ছে? অনেক দিন হলো কোনো দাওয়াত পাই নাÑভণিতা না করে কাঠশালিক সোজাসুজি বলে ফেলল। টোনা তখন কাঠশালিকের সঙ্গে যা যা কথা হয়েছে সবই খুলে বলল। শুনে দোয়েল ঘুরে ঘুরে নাচতে লাগল আর বলল, ভালোই তো হয়, অনেক দিন পিঠা খাই না। এবার অনেক মজা করে খাওয়া হবে। বলেই দোয়েল যে রকম নাচতে নাচতে এসেছিল সে রকম নাচতে নাচতে চলে গেল। ‘কে যেন খাওয়ার কথা বলল? কী খাওয়া হবে? মিষ্টি সুরে বুলবুলি পাখিটা বলল। খড়কুটো খুঁজতে এসেছিলাম বাসাটা মেরামতের জন্য। খাওয়ার কথা শুনে থমকে দাঁড়ালুম। তা অনেক দিন পর একটু খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা হলে তো ভালোই হয়। একটু পেট পুরে খাওয়া যাবে।’ টোনাটুনির মুখে কথা আর সরে না। শুধু একে অপরের দিকে তাকিয়ে থাকে। কী করে যেন আশপাশের সব পাখির মধ্যে খবরটা রটে যায়। এমনকি একটা গেছো ব্যাঙও এসে হাজির হয়। সেও অতিথি হতে চায়। পিঠার দাওয়াত খেতে চায়।

ওদিকে সেই খয়েরি কাঠবিড়ালি আবার এসে হাজির। টুনি বলল, দেখ তো বাপু কী বিপদেই না পড়লুম। তোমরা সবাই একদিনই পিঠার দাওয়াত চেয়েছ। তো সেটা ব্যাপার না। কিন্তু পিঠা বানানোর এসব জোগাড়যন্ত কে করবে? টোনা একা তো আর পারবে না। কাঠবিড়ালি লাফিয়ে ওঠল, ‘ও সেই কথা। টোনার কিছুই করতে হবে না। আমরা আছি না?’ খয়েরি কাঠবিড়ালি এগাছ থেকে ওগাছে লাফিয়ে লাফিয়ে সবাইকে খবরটা দিতে লাগল। একটু পরেই পিঠা বানানোর বিভিন্ন জিনিসপত্র আসতে শুরু করল। কেউ আনল গুড়, কেউ আনল চিনি, কেউ বা আনল চাল। কেউ নিয়ে এলো শুকনো লাকড়ি, কেউ আনল দুধ। ছোট্ট এক চড়–ই দূরের এক কৃষাণীর রান্নাঘর থেকে নিয়ে এলো আগুন। অগত্যা কী আর করা! টুনি পিঠা বানাতে শুরু করল। টোনাও হাত লাগাল। অন্যরা আর বসে থাকবে কেন? তারাও এসে হাত লাগাল। মিলেমিশে কাজ করার মজাই আলাদা। দুপুর নাগাদ পিঠে বানানোর কাজ শেষ হলো। কত্ত রকম যে পিঠা বানালো টুনি তা বলে শেষ করা যাবে না। পাশেই ফেলে রাখা ছিল আমগাছের প্রকা- এক গুঁড়ি। সেখানেই সবাই বসে পড়ল। টোনা সবাইকে আপ্যায়ন করতে লেগে গেল। পিঠা খেয়ে তো সবাই খুবই খুশি। এ রকম পিঠা উৎসব সেই বনের পাখপাখালি এর আগে কখনো দেখেনি। এলেই যে টুনি এতো ভালো পিঠা বানাতে পারেÑএ বিষয়ে কারুরই সন্দেহ রইল না। টোনাটুনির প্রশংসা করতে লাগল সবাই।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist