আন্তর্জাতিক ডেস্ক

  ২৪ এপ্রিল, ২০১৯

হামলার পেছনে বিদেশি গোষ্ঠী : শ্রীলঙ্কা

শ্রীলঙ্কায় ভয়াবহ বোমা হামলার দায় কেউ স্বীকার না করলেও এজন্য দায়ী করা হচ্ছে দেশটির প্রায় অপরিচিত একটি ইসলামী দলকে; এর সঙ্গে বিদেশিগোষ্ঠীর যোগসূত্র রয়েছে বলেও সন্দেহ করা হচ্ছে।

ইস্টার সানডের দিন কয়েকটি চার্চ ও হোটেলে একযোগে চালানো এই হামলায় বিমূঢ় হয়ে পড়ে শ্রীলঙ্কার নাগরিকরা। এতে ৩৫ বিদেশিসহ ২৯০ জন নিহত এবং ৫০০ জন আহত হন।

বিচ্ছিন্নতাবাদী তামিল টাইগাররা এক দশক আগে উৎখাত হওয়ার পর এমন ভয়াবহ হামলা আর দেখা যায়নি শ্রীলঙ্কায়। এই পরিস্থিতিতে গত সোমবার মধ্যরাত থেকে জরুরি অবস্থা জারি হয়েছে ভারত লাগোয়া দ্বীপরাষ্ট্রটিতে। হামলার পর অভিযানে সন্দেহভাজন অন্তত ২৪ জনকে আটকের খবর দিয়েছে শ্রীলঙ্কা পুলিশ; তবে তাদের কারো পরিচয় জানা যায়নি।

একসঙ্গে আটটি স্থানে আত্মঘাতী এই বোমা হামলা চালানোর জন্য শ্রীলঙ্কা সরকার ন্যাশনাল তাওহীদ জামায়াত নামে একটি ইসলামী সংগঠনকে দায়ী করছে। শ্রীলঙ্কা সরকারের মুখপাত্রমন্ত্রী রাজিথা সেনারতেœ সন্দেহভাজন হিসেবে এই দলটির নাম বলার আগে শ্রীলঙ্কার খুব মানুষই দলটির নাম জানত বলে বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়। ধারণা করা হয়, শ্রীলঙ্কা তাওহিদ জামায়াত নামে উগ্রবাদী মুসলিমদের দল ভেঙে ন্যাশনাল তাওহিদ জামায়াত দলটি গঠিত হয়েছে। শ্রীলঙ্কা তাওহিদ জামায়াতটি মোটামুটি পরিচিত হলেও দলটির নেতা আবদুল রাজিক ২০১৬ সালে বৌদ্ধবিদ্বেষ ছড়ানোর অভিযোগে গ্রেফতার হন, পরে ক্ষমাও চান তিনি।

এই ধরনের হামলার আশঙ্কার তথ্য এপ্রিলের শুরুতে বিদেশি একটি গোয়েন্দা সংস্থা দিয়েছিল বলে সেনারতেœ জানিয়েছেন। ওই গোয়েন্দা তথ্যে ন্যাশনাল তাওহীদ জামায়াতকে নিয়ে ইঙ্গিতও করা হয়েছিল। তবে তা তখন আমলে নেয়নি কর্তৃপক্ষ।

প্রায় অপরিচিত এই দলটিকে সন্দেহ করলেও তাদের সক্ষমতা নিয়ে অনেকের সংশয়ের প্রেক্ষাপটে শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট মাইথ্রিপালা সিরিসেনা এই হামলার পেছনে আন্তর্জাতিক চক্রের যোগসূত্র থাকার ইঙ্গিত করেন।

তার কার্যালয় থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, গোয়েন্দা প্রতিবেদন ইঙ্গিত করছে যে, এই হামলার ঘটনায় স্থানীয় সন্ত্রাসীদের পেছনে বিদেশি সন্ত্রাসীগোষ্ঠী রয়েছে। মন্ত্রী রাজিথা সেনারতেœও বলেন, আমরা মনে করি না যে এই হামলাগুলোতে শুধু আমাদের দেশের একটি গোষ্ঠীই জড়িত। আন্তর্জাতিক একটি চক্র রয়েছে, যাদের সহায়তা ছাড়া তারা (স্থানীয় সন্ত্রাসী) সফল হতো না। কলম্বোর সাংরি-লা হোটেলে দুজন আত্মঘাতী হামলা চালিয়েছিল বলে শ্রীলঙ্কার ফরেনসিক বিভাগের কর্মকর্তা আর্যনন্দ বেলিয়াংগা জানান। আত্মঘাতী অন্যরা হামলা চালায় তিনটি গির্জা ও অন্য দুটি হোটেলে। এর মধ্যে একটি গির্জা দেশটির অন্য প্রান্তে।

বিবিসির সাংবাদিক আনবারাসান এথিরাজন বলেন, এই হামলার মাত্রা, এর ধরন, সময় নির্ধারণ সবকিছু এর সঙ্গে বিদেশি যোগসূত্রের ইঙ্গিত দেয়। ন্যাশনাল তাওহিদ জামায়াত জড়িত কি-না, তা এখনো স্পষ্ট নয়, তবে তারা যদি জড়িত থাকেও তাদের সঙ্গে আন্তর্জাতিক জিহাদি কোনো গোষ্ঠী ছিল। শ্রীলঙ্কার মোট জনসংখ্যার মাত্র ৯ শতাংশ মুসলিম, খ্রিস্টান ৭ শতাংশ।

দেশটির ৭০ শতাংশই বৌদ্ধ, হিন্দু আছে ১২ শতাংশ। তামিল টাইগাররা নির্মূল হওয়ার পর আত্মঘাতী হামলা আর না দেখার কথা উল্লেখ করে এথিয়ারাজন বলেন, এই হামলার পর মুসলিমরাও হতভম্ব; তারা ভয়ের মধ্যেও রয়েছে। বিদেশি যোগসূত্রের কথা এলেও কোন সেই গোষ্ঠী, সেই ধরনের কোনো ইঙ্গিত আসেনি শ্রীলঙ্কা সরকারের কাছ থেকে। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, আল কায়দা কিংবা আইএসের মতো জঙ্গিগোষ্ঠী এই হামলার পেছনে থাকতে পারে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close