ডা. এম এম সরদার
ক্যানসার প্রতিরোধে গৃহিণীর ভূমিকা
ইংরেজিতে একটি কথা আছে চৎবাবহঃরড়হ রং নবঃঃবৎ ঃযধহ ঈঁৎব. অর্থাৎ রোগারোগের চেয়ে প্রতিরোধ করা উত্তম। আর রোগ প্রতিরোধে সাধারণ জ্ঞান থাকা উত্তম। সে আদি থেকেই রোগ বিজ্ঞানী ও গবেষকরা দীর্ঘ গবেষণা করে দেখেছেন, ক্যানসার, ব্লাড ক্যানসারসহ নানা জটিল রোগ নিয়মিত ফলমূল, শাকসবজি ও তরিতরকারি গ্রহণের মাধ্যমে প্রতিরোধ করা সম্ভব। পরিবারের গৃহিণী, যারা সংসারের ঘরোয়া কাজকর্ম যেমন রান্নাবান্না, খাওয়া-দাওয়ার দায়িত্বে থাকেন তারা একটু সচেতন ও তাদের একটু জ্ঞান থাকলে ক্যানসার প্রতিরোধ করা সম্ভব। তাই একজন গৃহিণী পারেন ক্যানসার প্রতিরোধে যথাযথ ভূমিকা রাখতে। চর্বিযুক্ত চতুষ্পদ জন্তুর গোশত, ভাজাপোড়া দ্রব্য, পুরোনো বা বাসি খাদ্য ভক্ষণ, নেশাজাতীয় পানীয় পান বা ধূমপান উল্লিখিত রোগ সৃষ্টির অন্যতম কারণ। অনেক পরিবারের গৃহিণীর যথাযথ ভূমিকা ও দায়িত্বের কারণে তাদের পরিবার ক্যানসারের আশঙ্কা থেকে মুক্ত থাকে। পরিবারের একজন আদর্শ গৃহিণী হিসেবে বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্য যা ক্যানসার প্রতিরোধে সহায়ক সে সম্পর্কে ধারণা থাকা প্রয়োজন।
কাঁচা রসুন ও পেঁয়াজ : বিশেষজ্ঞদের মতে, ক্যানসার সৃষ্টিকারী কারসিনোজেনগুলোকে রসুন ও পেঁয়াজের রাসায়নিক পদার্থ সহজেই ধ্বংস করে দেয়। রসুন দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বহু গুণে বাড়ায় এবং ক্যানসারসহ নানা রোগের বিস্তার প্রতিরোধ করে। লোমা লিন্ডার ইউনিভার্সিটি স্কুল অব মেডিসিনের গবেষণা রিপোর্টে জানা গেছে, রসুনের উপাদানগুলো ক্যানসার কোষের জন্য ভয়ানক বিষাক্ত। এটা ক্যানসার প্রতিরোধ করে এবং টিউমার সেলকে ধ্বংস করে দেয়। হার্ভার্ডের বিজ্ঞানীরা কিছুসংখ্যক ক্যানসার প্রতিরোধ করেছেন খাদ্যের সঙ্গে কাঁচা পেঁয়াজ যোগ করে।
রং চা : বাটগার বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণা থেকে জানা যায়, যেকোনো ধরনের রং চা, সবুজ চা বা কালো চায়ে ক্যানসার-বিধ্বংসী রাসায়নিক পদার্থ ক্যাটোচিনস উপাদান আছে, যা আশ্চর্যজনকভাবে ক্যানসারকে প্রতিরোধ করে। অতএব যারা চা পছন্দ করেন তাদের উচিত দুধ চা বেশি পান না করে বেশি করে রং চা পান করা। রং চাকে লেবুর রস, তেজপাতা, আদা, চিনি ইত্যাদির সমন্ব^য়ে প্রতিদিন ৪-৫ কাপ চা পান করে ক্যানসার প্রতিরোধ করুন।
দুধ : দুধের ভেতর সব ধরনের ভিটামিন, প্রোটিন ও ধাতব লবণ বিদ্যমান থাকায় একে আদর্শ খাদ্য বলা হয়। এটা যেমনি পুষ্টিকর, তেমনি সুস্বাদু ও সুপাচ্য বটে। দুধ শারীরিক গঠনকে ঠিক রাখে। দুধে ক্যালসিয়াম, রাইবোপাবিন, ফসফরাস, সোডিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, স্নেহ পদার্থ, শ্বেতসার (ল্যাকটোজ), প্রোটিনসহ সব ধরনের ভিটামিন আছে বলে এর ক্যানসারবিরোধী ভূমিকা অত্যন্ত জোরালো। অতএব সব বয়সের মানুষের জন্য প্রতিদিন পরিমিত দুধ পান অপরিহার্য।
গমের আটা : আমাদের দৈনন্দিন খাদ্য তালিকার মধ্যে গমের আটার রুটি থাকা অত্যাবশ্যক। এর দ্বারা শরীর ভালো থাকবে এবং ক্যানসার প্রতিরোধও হবে। আমেরিকান হেলথ ফাউন্ডেশনের এক রিপোর্ট থেকে জানা যায়, গমের আটা ক্যানসার সৃষ্টিকারী হরমোন ইস্ট্রোজনের পরিমাণ অনেক কমিয়ে দিয়ে ক্যানসারবিরোধী ভূমিকা পালন করে।
ফলমূল, শাকসবজি ও তরিতরকারি : পালংশাক, পুঁইশাক, কচুশাক, লালশাক, ডাঁটাশাকসহ সর্ববিধ শাকসবজি, টমেটো, গাজর, মিষ্টি আলু, কুমড়া, শিম, শালগম, বরবটি, ফুলকপি, বাঁধাকপি, মূলা প্রভৃতি তরিতরকারি; আম, জাম, কাঁঠাল, লিচু, আনারস, কলা, পেয়ারা, পেঁপেসহ নানা ফলফলাদি এবং জাম্বুরা, কমলালেবু, কদবেল, বাতাবি-কাগজি লেবু, কামরাঙা, জলপাই, আমড়া, কুলসহ সর্ববিধ টকজাতীয় খাদ্যগুলোয় রয়েছে প্রচুর ক্যানসারবিরোধী উপাদান।
লেখক : হোমিও চিকিৎসক ও ক্যানসার গবেষক
সরদার হোমিও হল, গ্রিন রোড, ঢাকা
"