নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৪ অক্টোবর, ২০১৯

মিটারে চলছেই না অটোরিকশা

রাজধানীতে একজন অটোরিকশাচালকও মিটারে চলতে রাজি হন না। যাত্রীরা বলছেন, ঢাকায় অটোরিকশা চলছে প্রায় ১৫ বছর ধরে। কিন্তু এই দীর্ঘ সময়েও এটিকে যাত্রীবান্ধব করা যায়নি। পরিস্থিতি এমন অবস্থায় পৌঁছায় যে, তারা নৈরাজ্যের বিষয়টি অনেকটা মেনে নিয়েছেন। সংশ্লিষ্ট বিভাগের কাছে অভিযোগ করলেও প্রতিকার মেলে না। তাই তারা এখন আর অভিযোগও করেন না।

এদিকে, রাইড শেয়ারিং অ্যাপ সেবার কারণে অটোরিকশার চাহিদা কমেছে, তাই এখন ১৩ থেকে ১৪ লাখ টাকাতেই মিলছে এটি। কিন্তু এই অটোরিকশাই দুই বছর আগেও বিক্রি হয়েছে ১৮ লাখ টাকায়।

সম্প্রতি গাবতলীতে গিয়ে দেখা যায় বেশির ভাগ ক্ষেত্রে যাত্রীরাই চালকের কাছে ভাড়া জানতে চাইছেন। তাদেরই একজন রাশিদুল আলম। তিনি বলেন, গত দুই বছরে তিনি একবারও মিটারে যেতে পারেননি। মিটারে যাওয়া নিয়ে চালকদের সঙ্গে বাগ্বিত-া করতে হয়। কিন্তু কাজের কাজ কিছু হয় না। ত্যক্ত-বিরক্ত হয়ে এখন আর চালককে মিটারের কথা বলেন না। নিজেই ভাড়া জানতে চান। তবে কেবল গাবতলী নয়, সম্প্রতি কল্যাণপুর, মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ, ফার্মগেটসহ কোনো জায়গাতেই কেউ মিটারে যেতে রাজি হননি। চালক বশির মিয়া বলেন, মিটারে পোষায় না। অটোরিকশার জমা, দৈনন্দিন খরচ ও গ্যাসের দাম যে হারে বেড়েছে, তাতে মিটারে চলা সম্ভব নয়। তা ছাড়া অ্যাপভিত্তিক পরিবহনের কারণে অটোরিকশার যাত্রীর সংখ্যাও আগের চেয়ে কমে গেছে। তাই তিনি মিটারে চলেন না।

২০০২ সালের শেষ দিক থেকে রাজধানীতে অটোরিকশা চলাচল শুরু হয়। এরপর এই খাতটিকে শৃঙ্খলার মধ্যে আনতে একটি নীতিমালা করা হয়। নীতিমালাটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ)। তাই অটোরিকশায় চলাচল করতে গিয়ে কেউ হয়রানির শিকার হলে অভিযোগ করা যায় সংস্থাটিতে। সংস্থাটির কর্মকর্তাদের দাবি, অভিযোগ পেলে তারা যথাযথ ব্যবস্থাও নেন।

অন্যদিকে, অটোরিকশার দাম নিয়েও চলছে নৈরাজ্য। পৌনে ৪ লাখ টাকার গাড়ির কাগজের দাম অন্তত ১০ থেকে ১২ লাখ টাকা। বিআরটিএ যেহেতু নতুন করে অটোরিকশার রেজিস্ট্রেশন দিচ্ছে না তাই আগের মালিকরাই চালাচ্ছেন এই নম্বর বাণিজ্য। অভিযোগ আছে সবকিছু জেনে বুঝেও চুপ করে আছে বিআরটিও।

২০০১ সালে বেবিট্যাক্সি ও টেম্পু তুলে দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ওই মালিকদের নামেই অটোরিকশা বরাদ্দ করে সরকার। রাজধানীতে চলছে ১৫ হাজার অটোরিকশা যার মালিক দুই থেকে আড়াই হাজার। আর এদের হাতেই নম্বর বাণিজ্য। চালকদের দাবি, ন্যায্য দামে গাড়ি পাওয়া যায় না বলেই যাত্রী হয়রানি বন্ধ হচ্ছে না।

তারা বলেন, এত টাকা দিয়ে অটোরিকশা কিনে মালিকরা ড্রাইভারদের ওপর সে টাকার তুলে আনার জন্য চাপ দেন। সে কারণে ড্রাইভাররা যাত্রীর কাছ থেকেই সে টাকা তুলে আনতে চান। চালকরা আরো বলেন, বিআরটিএ’র সহায়তা পেলে তারা মিটারে ভাড়া খাটতেই রাজি আছেন। এই খাতে যে ধরনের দুর্বৃত্তায়ন চলছে তা বন্ধে বিআরটিএ’কে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তা না হলে যাত্রী হয়রানি তো কমবেই না বরং এই নৈরাজ্য নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়বে। কোম্পানিভিত্তিক সমন্বিত সিএনজি অটোরিকশা সেবা চালুই হতে পারে এই নৈরাজ্য বন্ধের অন্যতম উপায়।

পরিবহন বিশেষজ্ঞ ড. সামছুল হক বলেন, একটা কোম্পানিকে ৫ হাজার অটোরিকশা দেওয়া গেলে চালকের সঙ্গে কথা বলার প্রয়োজন পড়ত না। মালিককে তারা বলতে পারত, নিয়ম না মানলে রুট পারমিট বাতিল করে দেব। যদিও বিআরটিএ বলছে, তাদের কাছে এই বিষয়ে কোনো অভিযোগ আসেনি।

বিআরটিএ’র রোড সেফটি পরিচালক শেখ মোহাম্মদ মাহবুব-ই-রব্বানী বলেন, ক্রেতা-বিক্রেতা ইন্টারনালি যদি কেউ বিক্রি করে থাকে, আমাদের কাছে অভিযোগ দিলে অবশ্যই আমরা তার রেজিস্ট্রেশন বাতিল করে দেব।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close