সাহিদ রহমান অরিন

  ১৩ জুন, ২০১৯

পাকিস্তানকে হারিয়ে কক্ষপথে অস্ট্রেলিয়া

ডেভিড ওয়ার্নারের ইনিংসটাই শেষ পর্যন্ত পার্থক্য গড়ে দিল। অজি ইনিংসের শুরুটা স্বপ্নের চেয়েও সুন্দর হয়েছিল দলপতি ফিঞ্চের সঙ্গে ওয়ার্নারের গড়া দুর্দান্ত জুটির কারণেই। যেখানে পাকিস্তানি ওপেনার ইমাম-উল-হককে ইনিংস মেরামতের কাজ করতে হয়েছে তৃতীয় ওভার থেকেই। মিডল ওভারে ইমামকে যোগ্য সঙ্গ দিচ্ছিলেন মোহাম্মদ হাফিজ। পাকিস্তান তখন ভালোভাবেই ম্যাচে ছিল। কিন্তু আচমকাই দায়িত্বহীনতার পরিচয় দেন অভিজ্ঞ হাফিজ। আর সেটাই ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট হয়ে দাঁড়ায়।

দুদলেরই ব্যাটিং লাইন-আপ দুই নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যানকে হারানোর পর আশাহত করলেও সূচনালগ্নের জৌলুসে শেষ হাসি হেসেছে অস্ট্রেলিয়া। বিরূপ প্রকৃতির কাছে টানা দুদিন মাথা নোয়ানোর পর অবশেষে পূর্ণাঙ্গ এক ম্যাচ উপহার দিয়েছে বিশ্বকাপ। যে ম্যাচে ‘আনপ্রেডিক্টেবল’ পাকিস্তানকে ৪১ রানে হারিয়েছে বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা।

গতকাল বুধবার টন্টনের কাউন্টি গ্রাউন্ডের পেস সহায়ক উইকেটে অস্ট্রেলিয়ার ছুড়ে দেওয়া ৩০৭ রানের জবাবে ২৬৬ রানে গুটিয়ে গেছে সরফরাজ বাহিনী। এ জয়ে পাকিস্তানের চিরশত্রু ভারতের কাছে পরাজয়ের জ্বালা মিটিয়ে ফের সেমির কক্ষপথে ফিরল অজিরা। ৪ ম্যাচে ৬ পয়েন্ট নিয়ে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নরা এখন পয়েন্ট তালিকার দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। আর সমানসংখ্যক ম্যাচে অজিদের অর্ধেক পয়েন্ট নিয়ে আটেই রয়ে গেছে পাকিস্তান।

পাকিস্তানের পক্ষে সর্বোচ্চ ৫৬ রান করেন ওপেনার ইমাম-উল-হক। ৪৬ রান এসেছে হাফিজের ব্যাট থেকে। চল্লিশ ছুঁয়েছেন আরো দুজন। হঠাৎ ব্যাটসম্যান হয়ে ওঠা ওয়াহাব রিয়াজের ৪৫ রান তো ভীতিই ছড়িয়ে দিয়েছিল অজি শিবিরে। আর শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে রানআউটে কাটা পড়ার আগে অধিনায়ক সরফরাজ আহমেদ করেছেন ৪০ রান।

এর আগে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে অস্ট্রেলিয়াকে উড়ন্ত সূচনা এনে দেন অধিনায়ক ফিঞ্চ ও সঙ্গী ডেভিড ওয়ার্নার। ২৩তম ওভারে দলীয় ১৪৬ রানের মাথায় তাদের আলাদা করেন মোহাম্মদ আমির। ৬টি চার আর ৪টি ছক্কায় ফিঞ্চ করেন ৮২ রান। ফিঞ্চ ফিরলেও এদিন যেন বড় ইনিংস খেলার পণ করে মাঠে নেমেছিলেন ওয়ার্নার। পেয়ে যান সেঞ্চুরিও। তিন অঙ্ক ছোঁয়ার পর শূন্যে লাফিয়ে উদ্যাপন করেন ওয়ার্নার। অবশ্য এটাকে অনেক আগেই ট্রেডমার্ক বানিয়ে ফেলেছেন তিনি। কিন্তু কাল যেন আরো কয়েক মিটার উঁচুতে উঠে গিয়েছিলেন ওয়ার্নার। কে জানে, শতকের পর ফের ব্যাটিং চালিয়ে যেতে না হলে হয়তো আকাশের পথে উড়াল দিতেন বিধ্বংসী অজি ওপেনার। সে যাই হোক, কালকের শতকের মাহাত্ম্য বোঝাতেই হয়তো স্বাভাবিকের চেয়ে একটু লম্বা লাফ দিয়েছিলেন তিনি। নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে ফেরার পর দেশের জার্সিতে এটাই যে তার প্রথম সেঞ্চুরি!

এমন উদ্যাপনের বিশেষত্ব ছিল আরেকটি জায়গায়। ভারতের বিপক্ষে আগের ম্যাচে ৩৫৩ রানের ইমারত তাড়ায় ‘স্বভাববিরোধী’ ইনিংস খেলেন ওয়ার্নার। ৫৬ রান করলেও বল গিলে ফেলেন ৮৪টি! তার এই মন্থর ইনিংসটাই শেষে কি না কাল হয়ে দাঁড়ায়। তার ওপর দারুণ খেলতে থাকা অধিনায়ক অ্যারোন ফিঞ্চকে রানআউটের শিকার হতে হয়েছে ওয়ার্নারের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝির কারণেই। সব মিলিয়ে হাইভোল্টেজ ম্যাচে অজিরা পরাজিত হওয়ায় বলির পাঁঠা বানানো হয়েছিল ওয়ার্নারকেই।

তবে কাল সবকিছুর জবাব ব্যাট হাতেই দিয়েছেন এই হার্ড হিটার। ১১ চার ও বিশাল এক ছক্কায় ১০৭ রানের দুর্দান্ত ইনিংস উপহার দিয়েছেন তিনি। এবার আর বল নষ্ট করেননি। সামলেছেন ১১১টি ডেলিভারি। ওয়ানডেতে এটি তার পঞ্চদশ শতক। ওয়ার্নারের এই ইনিংসটা যে কতটা মূল্যবান, সেটা তার আউটের পর হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছে অস্ট্রেলিয়া। একটা সময় মাত্র ২ উইকেট হারিয়ে ২২৩ রান তুলে ফেলেছিল বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। তখন বাকি ছিল ১৬ ওভারেরও বেশি। সে সময় মনে হচ্ছিল, সাড়ে তিনশোর গ-ি অনায়াসেই পেরিয়ে যাবে জাস্টিন ল্যাঙ্গারের শিষ্যরা।

অথচ ওয়ার্নার প্যাভিলিয়নে ফিরতেই বদলে যায় দৃশ্যপট। ৩২ বছর বয়সি ব্যাটসম্যানের গড়ে দেওয়া শক্ত ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে দ্রুত রান তোলার মঞ্চ তৈরিই ছিল। অথচ সেটা করতে গিয়ে উল্টো হুমড়ি খেয়ে পড়েন ওয়ার্নারের সতীর্থরা। ক্যারিয়ার সেরা বোলিংয়ে ডেথ ওভারে অজিদের ব্যাটিংয়ে ধস নামান মোহাম্মদ আমির। ১০ ওভারে ২ মেডেনসহ মাত্র ৩০ রান খরচায় ৫ উইকেট শিকার করেছেন এই স্পিডস্টার। এদিন ফিঞ্চকে দিয়ে শুরু করেন আমির, শেষ করেন মিচেল স্টার্ককে দিয়ে। তারপর সৃষ্টিকর্তাকে স্মরণ করে সিজদাহ দেন মাঠে। মাঝে তিন বাঁ-হাতি মার্শ-খাজা-ক্যারিকেও ড্রেসিং রুমের পথ দেখান আমির। তার গতির তোপে এক ওভার বাকি থাকতেই প্যাকেট হয় অস্ট্রেলিয়া।

মূলত আমিরের দুর্ধর্ষ স্পেলটাই ম্যাচে রাখে পাকিস্তানকে। নয়তো অজিদের সংগ্রহটা যে অনায়াসেই সাড়ে তিন শ পেরিয়ে যেত। কিন্তু পেস স্বর্গে স্টার্ক-কামিন্সরাই বা হাত গুটিয়ে বসে থাকবেন কেন? দাঁতভাঙা জবাব দিয়েছেন তারও। আমিরের মতো ‘একাই একশ’ না হলেও ‘সবে মিলে করি কাজ’ নীতিতে চলেছে অস্ট্রেলিয়ার পেস ব্যাটারি। স্টার্ক (২), কামিন্স (৩), রিচার্ডসন (২), কুল্টার নাইল (১) চার পেসারই পেয়েছেন উইকেটের দেখা। তাতে পাকিস্তানি টেলএন্ডারদের চোখ রাঙানি উপেক্ষা করে প্রত্যাশিত জয়ই তুলে নিয়েছে অস্ট্রেলিয়া।

সংক্ষিপ্ত স্কোর

অস্ট্রেলিয়া : ৩০৭ অলআউট, ৪৯.০ ওভার

ওয়ার্নার ১০৭, ফিঞ্চ ৮২, শন মার্শ ২৩, ম্যাক্সওয়েল ২০

আমির ৩০/৫, শাহিন আফ্রিদি ৭০/২, ওয়াহাব ৪৪/১, হাফিজ ৬০/১

পাকিস্তান : ২৬৬ অলআউট, ৪৫.৪ ওভার

ইমাম ৫৩, হাফিজ ৪৬, ওয়াহাব ৪৫, সরফরাজ ৪০

কামিন্স ৩৩/৩, স্টার্ক ৪৩/২, রিচার্ডসন ৬২/২, ফিঞ্চ ১৩/১

ফল : অস্ট্রেলিয়া ৪১ রানে জয়ী

ম্যাচসেরা : ডেভিড ওয়ার্নার (অস্ট্রেলিয়া)

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close