বিনোদন প্রতিবেদক

  ২৪ জানুয়ারি, ২০১৯

বাংলা সংগীতপ্রেমীরা যুগে যুগে খুঁজবেন তাকে

অসংখ্য জনপ্রিয় দেশাত্মবোধক ও চলচ্চিত্রের গানের স্রষ্টা আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল। যিনি সুরের মূর্ছনায় বাঙালিকে শেকড়ের সঙ্গে পরিচয় করিয়েছিলেন হাজারবার। তার এই চলে যাওয়া যেন মানতে পারছেন না তার দীর্ঘদিনের সহকর্মীরা। গতকাল সকালে তার মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। এ সময় বুলবুলের দীর্ঘদিনের সহকর্মীরা শেষবারের মতো শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। সর্বস্তরের জনগণের শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে বাদ জোহর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে বুলবুলের প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এতে অংশ নেয় সাংস্কৃতিক অঙ্গনসহ সর্বস্তরের মানুষ। জানাজা শেষে বেলা ২টায় আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের মরদেহ নিয়ে আসা হয় এফডিসিতে। এফডিসির জানাজা শেষে বুলবুলের লাশবাহী গাড়িটি বিকেল নাগাদ পৌঁছায় মিরপুরের শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে। সেখানে চিরনিন্দ্রায় শায়িত করা হয় এ মুক্তিযোদ্ধা ও বাংলা গানের কিংবদন্তি পুরুষ আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলকে।

বর্ণাঢ্য জীবনে আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ সম্মাননা একুশে পদক, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার এবং রাষ্ট্রপতির পুরস্কারসহ অসংখ্য পুরস্কারে ভূষিত হন। তিনি ১৯৭১ সালে মাত্র ১৫ বছর বয়সে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তখনকার মুক্তিযুদ্ধের সময়টা বেশ দুরন্তপনার মধ্য দিয়ে কেটেছে বুলবুলের। ঢাকার আজিমপুরের ওয়েস্টটেন্ট হাইস্কুলে পড়া বুলবুল ২৫ মার্চের ঘটনা নিজ চোখে দেখেছিলেন। এ রাতকে সবাই ‘কালরাত্রি’ বললেও তিনি সেই রাতকে ‘লাল রাত’ বলতেন। কারণ এ রাতে মানুষের রক্তে বাংলার মাটি লাল হয়েছিল। ২৭ মার্চ কারফিউ শিথিল হলে তার বন্ধুরা মিলে সাইকেল চড়ে এসএম হল, জহুরুল হক হল, রোকেয়া হলসহ বিভিন্ন রাস্তার অলিগলিতে ছুটে গিয়েছিলেন। শত শত মানুষের লাশ আর তাজা রক্তের ছড়াছাড়ি দেখে সেদিন আঁতকে উঠেছিলেন। পাক হানাদারদের ধ্বংস করতে তখনই যুদ্ধে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। বন্ধু সজীবের নেতৃত্বে বিহারিদের অস্ত্র ছিনতাইয়ের মধ্য দিয়ে তাদের যুদ্ধ শুরু হয়। সেই অস্ত্রের সহায়তায় তারা মুক্তি বাহিনী গঠন করেন। পাশাপাশি তারা ক্র্যাক প্লাটুনের বীর মুক্তিযোদ্ধা ইফতেখার উদ্দিন আহমেদ টুলটুলের সঙ্গেও বেশ কিছু গেরিলা অপারেশনে অংশ নেন।

অবশেষে মুক্তিযুদ্ধের ট্রেনিং নেওয়ার জন্য আগস্টের প্রথম সপ্তাহে ভারতে চলে যান। দেশে ফিরে সজীবের নেতৃত্বে আবার রাইফেল হাতে বীরত্বের সঙ্গে লড়াই করেন বুলবুল। পাকিস্তানি সেনা ও রাজাকারদের হাতে আটক হয়ে একসময় পাশবিক ও রোমহর্ষক নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন তিনি। তবে ‘একাত্তরে’র মতোই তিনি আরেক সংগীতযুদ্ধ অব্যাহত রেখেছিলেন জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত। মৃত্যুর আগে আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল সংগীতবিষয়ক একটি বই লিখে অবসর সময়টা পার করছিলেন। বইয়ের নাম রেখেছিলেন ‘সার্কল অব সিক্সটিন্থ’। বইটি তিনটি খন্ডে প্রকাশ করার ইচ্ছে ছিল বুলবুলের। এটি একটি গবেষণাধর্মী বই। তাই লিখতে একটু সময় লাগছিল তার। বইটির প্রথম খন্ডে ৬২৫ পৃষ্ঠা, দ্বিতীয় খন্ডে ৩০০ আর শেষ খন্ডে ৩৫০ পৃষ্ঠা। প্রায় সাড়ে আট বছরের পরিশ্রমের ফসল তার এ বই। সংগীত অঙ্গনকে বইটি উপহার দিতে চেয়েছিলেন বুলবুল। কিন্তু সেটি আর নিজের মতো করে প্রকাশ করে যেতে পারলেন না। তবে তার এই প্রস্থানের পরও সুরের নেপথ্যে থাকা বাংলার সংগীতপ্রেমীরা যুগে যুগে খুঁজবেন প্রয়াত এই বীর মুক্তিযোদ্ধা, গীতিকার ও সংগীত পরিচালককে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close