কাজী আবুল মনসুর, চট্টগ্রাম ব্যুরো

  ০৯ জুলাই, ২০২০

চট্টগ্রামে আইসোলেশন সেন্টারই এখন ভরসা

চট্টগ্রামে বাড়ছে আইসোলেশন সেন্টারের সংখ্যা। করোনা রোগীদের আশা-ভরসার স্থান এখন নগরীর কয়েকটি আইসোলেশন সেন্টার। এ সেন্টারগুলো অসহায় মানুষদের মাঝে হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। প্রয়োজনীয় অক্সিজেন সেবা থেকে শুরু করে অনেকে জোগান দিচ্ছে খাদ্যও। ফলে আগে নগরীর মানুষ যেভাবে দিশাহারা ছিল বর্তমানে তা কাটিয়ে উঠতে শুরু করেছে। আইসোলেশন সেন্টারে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে অনেকে ভালো হয়ে যাচ্ছেন। আবার অনেকে যাচ্ছেন উন্নত চিকিৎসার খোঁজে। সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে চট্টগ্রামের একদল তরুণ।

নগরীতে অক্সিজেন সিলিন্ডারের স্বল্পতা কাটিয়ে উঠা সম্ভব হয়েছে। এ ক্ষেত্রে তরুণ যুবক গরিবের বন্ধু বলে খ্যাত মোহাম্মদ নেছারের উদ্যোগ প্রশংসা পেয়েছে। বিভিন্ন স্থান থেকে নেছারের নেতৃত্বে অক্সিজেন সিলিন্ডার সংগ্রহ করে মানুষের দুয়ারে দুয়ারে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। চট্টগ্রামে অজ্ঞাত রোগীর সেবায় দীর্ঘ সময় ধরে যুক্ত আছেন নেছার। দুর্দিনে অক্সিজেন নিয়ে যখন হাহাকার চলছিল তখন নেছারের উদ্যোগে অক্সিজেন সিলিন্ডার সংগ্রহ করে সে সিলিন্ডারে অক্সিজেন রিফিল করে নেছার মানুষের কাছে পৌঁছানো শুরু করে। তার দেখাদেখি অনেকে এগিয়ে এলে নগরজুড়ে অক্সিজেন সিলিন্ডার সংকট দূর হতে থাকে।

সূত্র জানায়, গত এক মাসেরও কম সময়ে চট্টগ্রামে গড়ে উঠেছে অন্তত ৯টি আইসোলেশন সেন্টার। এর মধ্যে আটটিতে রোগী ভর্তি করানো হচ্ছে বলে জানা গেছে। বিজিএমইএ আইসোলেশন সেন্টার উদ্বোধন করার পরও এখনো রোগী ভর্তি করা হচ্ছে না। চট্টগ্রামে ৯টি আইসোলেশন সেন্টার মধ্যে সবচেয়ে বড় আইসোলেশন সেন্টারটি গড়ে তোলে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। করোনার চিকিৎসায় নগরীর আগ্রাবাদে ২৫০ শয্যার গত মাসের ২১ জুন আইসোলেশন সেন্টারে যাত্রা শুরু করেছে। নগর ছাত্রলীগের নেতা সাজ্জাত হোসেনের নেতৃত্বে কিছু তরুণ-যুবকের প্রচেষ্টায় হালিশহর এলাকায় গড়ে উঠেছে ১০০ শয্যার আইসোলেশন সেন্টার। চান্দগাঁও হামিদচর এলাকায় গড়ে উঠা মিনি আইসোলেশন সেন্টারটি নিয়ে চট্টগ্রামে সাড়া জাগিয়েছে। তরুণ ব্যবসায়ী ইকবাল হোসেন একাই আইসোলেশন সেন্টারটি গড়েছেন। হামিদচর এলাকার পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য পাঁচ শয্যার এ চিকিৎসাকেন্দ্রে অক্সিজেন সিলিন্ডার, পালস অক্সিমিটার, নেবুলাইজারের পাশাপাশি সার্বক্ষণিক চিকিৎসকরা সেবা দিচ্ছেন। বাকলিয়ায় আওয়ামী লীগ নেতা রেজাউল করিম ৭০ শয্যার আইসোলেশন সেন্টার গড়ে তোলেন। চট্টগ্রাম বিমানবন্দর সংলগ্ন বাটারফ্লাই পার্কের বিকে কনভেনশনে ১০০ শয্যার আইসোলেশন সেন্টার গড়ে উঠছে। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বিদ্যানন্দের অর্থায়নে সেন্টারটিতে এরই মধ্যে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ আইসোলেশন সেন্টারটির নিরাপত্তার দায়িত্বসহ যাবতীয় সহায়তা করছে। ইপিজেড পতেঙ্গা করোনা আইসোলেশনে এরই মধ্যে করোনা চিকিৎসায় এলাকায় সাড়া ফেলেছে। নগরী হালিশহরে আল মানাহিল নার্চার জেনারেল হাসপাতালে স্থাপিত আইসোলেশন সেন্টারের চালু হয়েছে গত মঙ্গলবার। সিএমপি ও আল মানাহিল ফাউন্ডেশনের যৌথ উদ্যোগে স্থাপিত ৮০ শয্যা এ আইসোলেশন সেন্টারে কোভিড-১৯ আক্রান্তরা সার্বক্ষণিক চিকিৎসা সুবিধা পাবেন। সেন্ট্রাল অক্সিজেন সিস্টেম সংযুক্ত থাকবে প্রতিটি শয্যার। এরই মধ্যে আউটডোর ও ইনডোরে চিকিৎসা চলছে। বিজিএমইএ আইশোলেশন সেন্টার উদ্বোধন হলেও রোগী ভর্তি করা হচ্ছে না। চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলায়ও ব্যক্তি উদ্যোগে আইসোলেশন সেন্টার তৈরি করা হচ্ছে। এরই মধ্যে বাঁশখালী উপজেলায় ৭০ শয্যার আইসোলেশন সেন্টার চালু হয়েছে। এছাড়া নগরীর বাকলিয়া ফুলকলি সংলগ্ন কুইন্স কমিউনিটি সেন্টারে ১০০ শয্যার আইসোলেশন সেন্টার গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছেন চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন। নগরীর ও জেলার পাশাপাশি চট্টগ্রামেরও করোনা ও উপসর্গ রোগীদের ভরসাস্থল এখন এসব আইসোলেশন সেন্টার। বিভিন্ন সংস্থার পাশাপাশি তরুণদের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত আইসোলেশন সেন্টারও রোগীদের সেবায় কাজ করে যাচ্ছে।

সংশ্লিষ্টরা বলেন, অনেকটা সীমিত সুযোগ-সুবিধা নিয়েই আইসোলেশন সেন্টারগুলোতে রোগী সেবা দিতে হচ্ছে। বিশেষ করে জরুরি প্রয়োজনে অক্সিজেন ও চিকিৎসকের জন্য হিমশিম খেতে হয় তাদের।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন আইসোলেশন সেন্টার পরিচালক ডা. সুশান্ত বড়ুয়া জানান, শয্যা না পাওয়ার আতঙ্ক অনেকখানি কমে গেছে। আমাদের ৫০টির অধিক বোতলজাত অক্সিজেন সিলিন্ডার রয়েছে। ১৫ চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী স্টাফসহ ৫৫ জন রয়েছেন। এখন পর্যন্ত করোনার ৭৫ রোগী এ আইসোলেশন সেন্টারে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে ৪০ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। বর্তমানে ২৫ রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছে।

কিছু তরুণ-যুবকের প্রচেষ্টায় মাত্র ১২ দিনে হালিশহর এলাকায় গড়ে ওঠা ১০০ শয্যার আইসোলেশন সেন্টার উদ্যোক্তা ছাত্রলীগের নেতা সাজ্জাত হোসেন জানান, আমাদের আইসোলেশন সেন্টারে করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) ও উপসর্গ রোগীদের চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে। আমাদের আইসোলেশন সেন্টারে বর্তমানে ৩৭ জন রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছে। তার মধ্যে ৩১ জন করোনায় আক্রান্ত বাকি ৬ জনের উপসর্গ রয়েছে। তিনি আরো জানান, এখন পর্যন্ত ৫৭ রোগী এ আইসোলেশন সেন্টার থেকে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। আমাদের আউটডোর থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন প্রায় ১৫০ জনের মতো।

বাকলিয়ায় আওয়ামী লীগ নেতা রেজাউল করিম ৭০ শয্যার আইসোলেশন সেন্টার দায়িত্বে থাকা ইফতেখার কামাল জানান, আমাদের আইসোলেশন সেন্টারে রোগীদের সম্পূর্ণ ফ্রিতে রোগীদের চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয়। আমাদের আইসোলেশন সেন্টারে বর্তমানে দুজন রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছে।

চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি জানান, আমাদের জেলায় প্রায় ১১ হাজারে মতো করোনা রোগী আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছে। আমাদের সীমাবদ্ধতার কারণে আমরা অনেক মানুষকে চিকিৎসার আওতায় আনতে পারছি না। বেসরকারিভাবে প্রতিষ্ঠিত আইসোলেশন সেন্টার গড়ে উঠাতে চাপ অনেকটা কমেছে। চট্টগ্রামে সংক্রমণ ঠেকাতে আরো আইসোলেশন সেন্টার প্রয়োজন।

উল্লেখ্য, গতকাল পর্যন্ত চট্টগ্রামে করোনাভাইরাসের আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ১১ হাজার। তার মধ্যে নগরীতেই প্রায় ৮ হাজারের কাছাকাছি। জেলার বিভিন্ন উপজেলায় রয়েছেন বাকিরা। মারা গেছেন ২০৪ জন। সুস্থ হয়েছেন ১ হাজার ২৪৯ জন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close