তুহিন আহমদ, মহানগর (সিলেট) প্রতিনিধি

  ২৪ জানুয়ারি, ২০২০

সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলা

মানসম্মত স্যানিটেশন পাচ্ছে না আমতৈল গ্রামের জনগোষ্ঠী

সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার আমতৈল গ্রামের জনগোষ্ঠী মানসম্মত স্যানিটেশন সুবিধা পাচ্ছে না। এই গ্রামের বেশিরভাগ মানুষই হতদরিদ্র হওয়ায় অন্ন সংস্থান হলেও মানসম্মত মল-মূত্র ত্যাগের ব্যবস্থা নেই। যেখানে সেখানে খোলা পায়খানা, ছালা বা পলিথিনের বেড়া দিয়ে আড়াল করে রাখা হয়েছে সেগুলো। তবে সে আড়াল ভেদ করে ময়লা ছড়িয়ে পড়ছে সড়কের পাশে। আবার কোনো কোনো স্থানে ময়লা ছড়িয়ে পড়ছে পুকুরে। সেই পুকুরের পানিও ব্যবহার করছেন তারা। সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার রামপাশা ইউনিয়নের আমতৈল গ্রাম। তিনটি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত এই গ্রাম। প্রায় ৫ হাজার মানুষের বসবাস এই গ্রামে। বিশ্বনাথ উপজেলা শহর থেকে ৬ কিলোমিটার দূরে এই গ্রামটির অবস্থান। এই গ্রামের অধিকাংশ মানুষই মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে দিনাতিপাত করছেন তারা।

প্রবাসী অধ্যুষিত বিশ্বনাথ উপজেলার এই গ্রামটিতে শিক্ষার আলোও তেমন পৌঁছায়নি। ফলে মানসম্মত স্যানিটেশনের বিষয়ে কোনো ধারণাও নেই তাদের। এতে করে গ্রামের অধিকাংশ মানুষই ব্যবহার করেন খোলা টয়লেট। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, ডায়রিয়া, কলেরা, আমাশয়, পেটের পীড়া, জন্ডিস, হেপাটাইটিস, টাইফয়েডের মতো ৮০ ভাগ সংক্রামক রোগ মানসম্মত স্যানিটেশন ব্যবহার না করার কারণেই হয়ে থাকে। তাদের মতে, উন্নত স্যানিটেশন ব্যবস্থা ও বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ এবং স্বাস্থ্যসম্মতভাবে হাত ধোয়ার অভ্যাস নিশ্চিত করা গেলে প্রায় সব ধরনের মারাত্মক সংক্রামন রোগ থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব।

এদিকে, বিশ্বনাথের এই আমতৈল গ্রামটির চার শতাধিক মানুষ প্রতিবন্ধী। অনেকে মনে করেন নোংরা পরিবেশ, স্বাস্থ্য সচেতনতা না থাকার কারণে গ্রামটিতে রোগের পাশাপাশি প্রতিবন্ধী মানুষের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শহরবাসীর যেকোনো বস্তি থেকে নোংরা পরিবেশে বাস করছেন তারা। হাতেগোনা কয়েকটি বাড়িতে মানসম্মত স্যানিটেশন ব্যবস্থা থাকলেও অন্যগুলোতে খোলা টয়লেট। কোনো কোনো স্থানে দেখা গেছে কয়েকটি পরিবার মিলে একটি ছালা দিয়ে ঘেরাও করা টয়লেট ব্যবহার করছেন। দুর্গন্ধও ছড়াচ্ছে চারদিকে।

নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের মতে, গ্রামটিতে সরকারি দলের কোনো তদারকি না থাকায় এসব সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। এসব সমস্যা ওই গ্রামের দেখার মতো কেউ নেই। সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, এই গ্রামের সরকারি দলের কোনো মন্ত্রী নেই। সরকারি দলের সঠিক কোনো তদারকি নেই। যার কারণেই এই গ্রামটির এত দুর্দশা। এনজিও সংস্থাগুলোও যদি একটি গ্রামকে নিয়ে পরিকল্পনা করে মানসম্মত স্যানিটশেন ব্যবস্থা নিশ্চিত করত তাহলে সেটি মডেল হয়ে থাকত। কিন্তু এই ক্ষেত্রে তারা ব্যর্থ। সংস্থাগুলোরও আর্থিক সহায়তা হয়তো কমে গেছে।

সিলেট সিভিল সার্জন ডা. প্রেমানন্দ মন্ডল বলেন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও বসবাসের যোগ্য যে অবস্থা থাকার কথা তার সবকিছুরই অভাব রয়েছে এই গ্রামে। সবমিলিয়ে এটা একটি স্পর্শকাতর বিষয়। আমাদের যে কর্মী বাহিনী রয়েছে তাদের নিয়ে আমরা গ্রামটিতে স্বাস্থ্য সচেতনতা বিষয়ক কর্মশালা করব।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close