নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৫ ডিসেম্বর, ২০১৯

দেশে ৪ বছরে এইডস রোগীর সংখ্যা দ্বিগুণ

সংক্রমণ ঠেকাতে সচেতনতাই জরুরি

মাত্র চার বছরের ব্যবধানে এইচআইভি শনাক্তের সংখ্যা হয়েছে দ্বিগুণ। সেবাকেন্দ্রের সংখ্যা বাড়লেও উল্টো বাড়ছে মৃত্যুসংখ্যাও। বিদেশফেরত কর্মীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষায় কড়াকড়ি না থাকায় আক্রান্তরা বহু গুণে আক্রান্ত করছে পরিবার প্রিয়জনদের। সর্বোপরি ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীসহ সর্বসাধারণের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমেই এইচআইভি সংক্রমণ ঠেকানো সম্ভব বলে মত বিশেষজ্ঞদের। তবে সমস্যা সমাধানে কয়েকটি মন্ত্রণালয় সমন্বিতভাবে কাজ করছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।

গত এক বছরে সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে ৪০০ জনের রক্ত পরীক্ষা করে ৮৪ জনকে শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এদের ৮০ শতাংশই বিদেশফেরত কর্মী। তাই বিদেশফেরত প্রত্যেক কর্মীর এইচআইভি পরীক্ষা বাধ্যতামূলক বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

জানা গেছে, ১৯৮৯ সালে বাংলাদেশে প্রথম এইচআইভিতে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। এরপর থেকে ১০, ২০, ১০০ বা ২০০ জন করে নতুন রোগী প্রতি বছর শনাক্ত হয়েছে। ২০১৮ সালে নতুন রোগী বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮৬৯ জনে। এইচআইভিতে আক্রান্ত হয়ে প্রথম এক রোগী মারা যায় ২০০০ সালে। ২০১৮ সালে একই রোগে মৃতের সংখ্যা ১৪৮। এ বছর নতুন আক্রান্তের সংখ্যা এক হাজার ছাড়িয়েছে। তবে মৃত্যু কিছু কমেছে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে।

জাতিসংঘের এইচআইভি/এইডসবিষয়ক প্রতিষ্ঠান ইউএনএইডসের গত বছরের প্রাক্কলন বলছে, বাংলাদেশে এইচআইভিতে আক্রান্তদের অনুমিত সংখ্যা ১৩ হাজার। এর মধ্যে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে পরীক্ষার মাধ্যমে ৬ হাজার ৪৫৫ জন শনাক্ত করা হয়েছে। শনাক্তের বাইরে থাকা মানুষ চিকিৎসাও নিচ্ছে না, অন্যদিকে সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়িয়ে চলেছে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের জাতীয় এইডস/এসটিডি কর্মসূচির জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপক মো. আখতারুজ্জামান বলেন, ধারাবাহিকভাবে এইচআইভিতে আক্রান্ত নতুন রোগী এবং মৃতের সংখ্যা বেড়েছে। আগে ঝুঁকিপূর্ণ গোষ্ঠীর মধ্যে নতুন রোগী বেশি পাওয়া যেত। কিন্তু এ বছর সাধারণ মানুষের মধ্যে সংক্রমণ বেশি দেখা গেছে। দেশে এইচআইভি সংক্রমণের হার কম, মাত্র শূন্য দশমিক শূন্য ১ শতাংশ। সংক্রমণের হার কম হলেও ঘনবসতি, অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক অভিবাসন এবং অসচেতনতার কারণে এইচআইভির ঝুঁকি রয়েছে। পাশাপাশি পাশের দেশ ভারত, পাকিস্তান, মিয়ানমারসহ থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়ায় এইচআইভি সংক্রমণের হার অনেক বেশি হওয়ায় বাংলাদেশের ঝুঁকি রয়েছে।

ইতোমধ্যে সারা দেশে ১২টি কেন্দ্রে সেবা দেওয়া হলেও পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসার আশায় ঢাকাতেই ছুটে আসেন অধিকাংশরা। তবে সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালের সেবায় সন্তুষ্ট নন রোগীরা। এক রোগী বলেন, চোখের সামনে আমরা মারা যাচ্ছি, আমাদের জন্য আইসিইউর ব্যবস্থা করা দরকার।

সরকারি তথ্য মতে, দীর্ঘ ২৮ বছরে শনাক্ত হয়েছে আক্রান্তের অর্ধেক জনগোষ্ঠী। যৌনকর্মী, শিরায় মাদক গ্রহণকারীসহ লুকিয়ে থাকা আক্রান্তদের দ্রুত খুঁজে বের করতে না পারলে পরিস্থিতি ভয়াবহ হওয়ার আশঙ্কা বিশ্লেষকদের।

বিএসএমএমইউর ভাইরোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সাইফ উল্লাহ মুন্সী বলেন, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে এ ধরনের রোগী বেশি আসছে। আমরা তাদের উৎসাহিত করতে পারি, আপনারা আসেন, বিনামূল্যে এইচআইভি পরীক্ষা করা হচ্ছে।

এইচআইভি বিশেষজ্ঞ ডা. সৈয়দ আহসান তৌহিদ বলেন, রোগ শনাক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আমরা চিকিৎসা দিচ্ছি সম্পূর্ণ বিনামূল্যে এবং সারাজীবনের জন্য।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close