পার্থ মুখোপাধ্যায়, কলকাতা থেকে

  ১৬ জুন, ২০১৯

ডাক্তারদের আন্দোলন নরমে-গরমে হুমকি মমতার

জুনিয়র ডাক্তারদের কাজে যোগ দেওয়ার আবেদন জানিয়ে এবার নরমে -গরমে হুমকি দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গতকাল শনিবার রাতে কলকাতায় রাজ্য সচিবালয়ে এক সংবাদ বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, এর আগে ডাক্তার-নার্সদের কর্মবিরতি বন্ধ করতে দিল্লি, ওড়িশা, পাঞ্জাব, উত্তরপ্রদেশ, গুজরাটÑ এমনকি জম্মু-কাশ্মীর সরকার, দমননীতি, এসমা জারি করলেও তার সরকার এখনই সে পথে হাঁটছে না। তিনি আবেদন করছেন, জনসাধারণ-রোগীদের অবস্থা বিবেচনায় দ্রুত কাজে ফিরুন ডাক্তাররা। গত দুদিন প্রায় এক হাজার ডাক্তার ইস্তফা দিলেও আইনের চোখে তার কোনো মূল্য নেয় জানিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযোগ তুলেছেন, আন্দোলনকারীদের পেছনে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর মদদ রয়েছে। কলকাতার সব মেডিকেল কলেজ এবং হাসপাতালে নিরাপত্তার যথেষ্ট ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে বলেও দাবি করেছেন তিনি। আর জুনিয়র ডাক্তাররা মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার কথা জানিয়ে দিয়েছেন। এর মধ্যেই রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা নিয়ে চলতি সপ্তাহের মধ্যে দ্বিতীয়বার কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে অ্যাডভাইজরি নোট পাঠানোয় বেজায় চটেছেন মমতা।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রেস কনফারেন্সের পর জুনিয়র ডাক্তারের তরফে বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়েছে, শুধু জুনিয়র ডাক্তারদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। এ লড়াই ডাক্তার সম্মানের লড়াই। মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য আমরা অস্বীকার করছি। নীলরতন মেডিকেল কলেজ থেকে কোনো প্রতিনিধিদল মুখ্যমন্ত্রীর কাছে যায়নি। আমরা যা দাবি রেখেছি, সেই দাবি নিয়ে এখনো পর্যন্ত আলোচনা করেননি মুখ্যমন্ত্রী। আমরা কথা বলতে চাই না, মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, এই বক্তব্য ভুল। গুরুত্বপূর্ণ এই সমস্যা সমাজের জন্য আপনি আলোচনায় বসুন। সুষ্ঠুভাবে পরিষেবা সমাধান চাইলেও মুখ্যমন্ত্রী মূল প্রসঙ্গ থেকে বাদ দিয়ে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্তি করার সৃষ্টি করতে চাইছেন। মুখ্যমন্ত্রী সঠিক পদক্ষেপ নেওয়ার আগে দুঃখের সঙ্গে আমরা জানাচ্ছি, আমরা এ আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি।

মুখ্যমন্ত্রী ডেকে পাঠিয়েছিলেন বৈঠকের মাধ্যমে সমাধানসূত্র খুঁজতে, কিন্তু তাতে সাড়া দেননি কলকাতার এনআরএসের জুনিয়র ডাক্তাররা। স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রীকে আসতে হবে এনআরএসে, তারা যাবেন না নবান্নে, যা নিয়ে চরম আক্ষেপ ধরা পড়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গলায়। নবান্নে সাংবাদিক বৈঠক করে তিনি বলেছেন, আমাকে পছন্দ নাই হতে পারে, রাজ্যপালের সঙ্গে কথা বলুন। কিন্তু গরিব মানুষের কথা ভেবে আগে আউটডোর চালু করুন। তিনি জানান, ঘটনার পরদিন সকালেই স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যের ফোন থেকে জুনিয়র ডাক্তারদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেন তিনি। কিন্তু তাতে রাজি হননি তারা, যা নিয়ে মমতা বলেছেন, আন্দোলনকারীদের বৈঠকে না আসা, কথা না বলা দুর্ভাগ্যের। অন্য রাজ্য হলে বিষয়টা অন্যরকম হতো। আর এ বিষয়েই তিনি বিভিন্ন রাজ্যে এসমা জারি করার প্রসঙ্গও তুলে ধরেছেন। বলেছেন, আমরা ধৈর্য রেখেছি। আমরা এসমা জারি করব না। তিনি অভিযোগ করেছেন, আন্দোলনে প্ররোচনা দিচ্ছেন কেউ কেউ। কিন্তু ডাক্তারদের অনুরোধ করব সেই প্ররোচনায় পা দেবেন না। সরকার যে দোষীদের শাস্তি দিয়েই ছাড়বে, সেই প্রসঙ্গও তুলে ধরেন মুখ্যমন্ত্রী। জানিয়েছেন, পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। জামিন অযোগ্য করছে ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে।

সেই সঙ্গে তিনি বলেছেন, বারবার কথা বলতে চেয়েছেন। দুবার চিঠি দিয়েছেন। কথা বলতে চেয়েছেন, তাও এনআরএসের জুনিয়র ডাক্তাররা কোনো কথাই মানতে রাজি নন। প্লিজ, গরিব মানুষদের কথা ভেবে কাজে যোগ দিন। সব দাবি নিয়ে আলোচনা করব। সব দেখা হবে, কিন্তু আগে চিকিৎসা শুরু করুন।

এদিকে, বোমা ফাটিয়েছেন রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠি। তিনি বলেছেন, স্বাস্থ্যব্যবস্থায় টানা অচলাবস্থা চলছে। মুখ্যমন্ত্রীকে ফোন করে কথা বলতে চাইলেও, সে সুযোগ হয়নি। এবার ফের একবার তাই মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছেন রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠি। চিঠি পাওয়ার পর, রাজ্যপালের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী ফোনে কথা বলেছেন বলে জানা গেছে। খবর, আন্দোলনরত চিকিৎসকদের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী যাতে আলোচনা করেন, সেই পরামর্শ দিয়েছেন রাজ্যপাল ত্রিপাঠী। এ ছাড়া আন্দোলনকারী চিকিৎসকদের দাবি খতিয়ে দেখতে এবং হামলায় অভিযুক্তদের তদন্ত প্রক্রিয়া দ্রুত শেষ করার পরামর্শও দিয়েছেন রাজ্যপাল। এদিকে, নবান্নে সাংবাদিক বৈঠকের সময় মুখ্যমন্ত্রীকে এই নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, রাজ্যপালের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। মিডিয়া বেশি জলঘোলা করার চেষ্টা করছে।

এর মধ্যে এনআরএস কা-ের জেরে রাজ্যের ওপর ক্রমেই চাপ বাড়াচ্ছে কেন্দ্র। আর সে জন্য ফের রাজ্যের কাছে ফের অ্যাডভাইজরি পাঠিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এর আগেও রাজ্যের কাছে এ বিষয়ে রিপোর্ট তলব করেছিল কেন্দ্রীয় সরকার। তবে শুধু এনআরএস কা-ের জেরে উদ্ভূত পরিস্থিতিই নয়, বরং রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা বিষয়েও বিস্তারিত রিপোর্ট তলব করা হয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে। বলাবাহুল্য, এনআরএস কা-ের পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অভিযোগও জানিয়েছিলেন ডাক্তাররা। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে যে দ্বিতীয় অ্যাডভাইজরি পাঠানো হয়েছে, তাতে বলা হয়েছে, ডাক্তারদের কর্মবিরতি নিয়ে এবং ২০১৬ সাল থেকে ২০১৯ পর্যন্ত রাজ্যের রাজনৈতিক অশান্তির বিস্তারিত রিপোর্ট পাঠাতে। আর এ জন্য অপরাধ দমনে রাজ্য সরকার কী ব্যবস্থা নিয়েছে, তা নিয়েও জানাতে বলা হয়েছে। উল্লেখ্য, এনআরএসসহ সাম্প্রতিক নানা ইস্যুতে রাজ্যে যেমন বিজেপি ক্রমেই তৃণমূলের সঙ্গে টক্কর দিচ্ছে, তেমনি প্রশাসনিক স্তরেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারকে বারবার রিপোর্ট পাঠাতে বলছে কেন্দ্রীয় সরকার।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close