মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি

  ২০ মার্চ, ২০১৯

পদ্মা সেতুতে বসল রোডওয়ে স্ল্যাব

* নবম স্প্যান কাল * দশমটিও চলতি মাসে * দৃশ্যমান হবে ১৫০০ মিটার

পদ্মা সেতুতে গাড়ি চলাচলের জন্য রোডওয়ে স্ল্যাব বসানোর কাজ শুরু হয়েছে। জাজিরায় ৪২ ও ৪১নং পিলারের মধ্যবর্তী ৭ এফ স্প্যানে বসানো হয়েছে প্রথম স্ল্যাবটি (আইডি ৭ এফ-ইউ ৩৩)। গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকেই দেশি-বিদেশি প্রকৌশলীদের চেষ্টায় স্প্যানে একটি স্ল্যাব বসানো হয়। এর মাধ্যমেই পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে যানবাহন চলাচল করবে। এর আগে ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে পদ্মা সেতুতে রেলওয়ের স্ল্যাব বসানোর কাজ শুরু হয়। এদিকে বহুল প্রত্যাশিত এই সেতুর জাজিরা প্রান্তে ৩৪ ও ৩৫নং খুঁটির ওপর ‘৬-ডি’ নং নবম স্প্যান বসছে আগামীকাল বৃহস্পতিবার। এ লক্ষ্যে প্রকল্প এলাকায় এখন দেশি-বিদেশি প্রকৌশলী ও শ্রমিকদের ব্যস্ততা। এছাড়া চলতি মাসের মধ্যেই দশম স্প্যানও স্থাপন করা হবে।

পদ্মা বহুমুখী সেতুর প্রকল্প পরিচালক এম শফিকুল ইসলাম জানান, জাজিরা পয়েন্টে ৩০০ মিটার লম্বা দুটি স্প্যান স্থাপনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হচ্ছে। আগামীকাল একটি বসানো হবে। আর চলতি মাসে বসবে দ্বিতীয়টি। এর মাধ্যমে ৬ দশমিক ১৫ মিটার দীর্ঘ এই সুবিশাল সেতুর মূল অবকাঠামোর ১,৫০০ মিটার দৃশ্যমান হবে।

২০১৮ সালের ১৪ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মাওয়া প্রান্তে ‘পদ্মা ব্রিজ টোল প্লাজা’র নামফলক উন্মোচন করেন। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন আনুমানিক ৩০,১৯৩ দশমিক ৩৯ কোটি টাকা ব্যয়ে, এই সেতু নির্মিত হলে জাতীয় অর্থনীতিতে শতকরা ১ দশমিক ২ হারে জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে এবং প্রতি বছর শতকরা শূন্য দশমিক ৮৪ হারে দারিদ্র্য হ্রাস পাবে। পদ্মা সেতুর প্রথম স্প্যানটি ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর স্থাপন করা হয়, এর চার মাস পর ২০১৮ সালে ২৮ জানুয়ারির দ্বিতীয় এবং দেড় মাস পর, ১১ মার্চ তৃতীয় স্প্যানটি স্থাপন করা হয়।

নবম স্প্যানটি চূড়ান্ত রঙের কাজ শেষে মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ের কুমারভোগ কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড থেকে ক্রেন লাইনের মাধ্যমে বের করে মাওয়া প্রান্তের স্টক ইয়ার্ডের জেটিতে রাখা হয়েছে। এখন দুই মিটার প্রস্থ ও প্রায় ২২ মিটার দৈর্ঘ্যরে রোডওয়ে স্ল্যাবগুলো স্প্যানে বসানো হচ্ছে। জাজিরা ও মাওয়া প্রান্তে প্রস্তুত করে রাখা আছে ৫০০টি স্ল্যাব। পুরো পদ্মা সেতুতে ২ হাজার ৯৩১টি স্ল্যাব বসানো হবে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রকৌশলী জানান, এসব স্ল্যাব মূলত প্রি-কাস্ট স্ল্যাব। স্প্যানে বসানোর পর এগুলো টেনশনিং করা হবে। রডের সর্বোচ্চ সীমা পর্যন্ত টেনশনিং করে আটকে দেওয়া হবে। যাতে কোনো নড়াচড়ার সম্ভাবনা না থাকে ভবিষ্যতে। স্ল্যাব বসনোর আরো কয়েকটি ধাপের কাজ শেষে সেতু গাড়ি চলাচলের উপযুক্ত হবে।

এদিকে, গতকাল মঙ্গলবার জাজিরায় প্রথম রোডওয়েতে স্ল্যাব বসানোর কাজ শুরু হয়। সকালে একটি স্ল্যাব কোনো সমস্যা ছাড়াই বসানো সম্ভব হয়েছে। আজ থেকে বাকি স্ল্যাব বসানো হবে স্প্যানগুলোতে। একটি স্প্যানে ৭৪টির মতো রোডওয়ে স্ল্যাব বসানো হবে। স্ল্যাব বহনকারী ক্রেনটিকে নির্ধারিত স্থানে সুবিধাজনক উচ্চতায় রেখে স্ল্যাবটি বসানো হয়।

প্রসঙ্গত, মূল সেতু নির্মাণের জন্য কাজ করছে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি (এমবিইসি) ও নদী শাসনের কাজ করছে চীনেরই আরেকটি প্রতিষ্ঠান সিনো হাইড্রো করপোরেশন। ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এ সেতুতে ৪২টি পিলারের ওপর বসবে ৪১টি স্প্যান। স্প্যান বসানো হয়েছে আটটি, বাকি আছে ৩৩টি।

পদ্মা বহুমুখী সেতুর মূল আকৃতি হবে দোতলা। কংক্রিট ও স্টিল দিয়ে নির্মিত হচ্ছে এ সেতুর কাঠামো। জাজিরা প্রান্তে সেতুর ৩৫, ৩৬, ৩৭, ৩৮, ৩৯, ৪০, ৪১, ৪২নং পিলারে সাতটি স্প্যান ও মাওয়া প্রান্তে ৫ ও ৬নং পিলারে একটি অস্থায়ী স্প্যান বসানো হয়েছে।

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, পদ্মা সেতুর ২৬২টি পাইলের মধ্যে গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত ২০৯টি পাইল স্থাপন হয়ে গেছে। এরই মধ্যে ১৮টি খাঁজকাটা পাইল স্ক্রিন গ্রাউডিং পদ্ধতিতে সফলভাবে স্থাপন করা হয়েছে। বাকি ৫৩টি পাইল স্থাপনের প্রক্রিয়া চলমান রাখা হয়েছে। অন্যদিকে জাজিরা প্রান্তে সেতুর সর্বশেষ ৪২নং খুঁটি থেকে ৩৩নং খুঁটি পর্যন্ত স্প্যান বসানোর ধারাবাহিকতা রাখার সঙ্গে রেলওয়ে বক্স বসানোর কাজও চলছে। এরই মধ্যে স্থাপন হওয়া স্প্যানের মধ্যে ১১৫টি রেলওয়ে সø্যাব বসে গেছে।

৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে দ্বিতল পদ্মা সেতু ৪২টি খুঁটির ওপর নির্মিত হবে। এর মধ্যে মাওয়া প্রান্তে ২১টি ও জাজিরা প্রান্তে ২১টি। আর ৪২টি খুঁটির ওপর বসবে ৪১টি স্প্যান। এর মধ্যে ৪০টি খুঁটি থাকবে পানিতে আর ডাঙায় থাকবে দুটি খুঁটি। ডাঙায় থাকা দুটি খুঁটি সংযোগ সড়কের সঙ্গে মূল সেতুকে যুক্ত করবে। পদ্মা সেতুর পুরোটাই নির্মিত হবে স্টিল ও কংক্রিট স্ট্রাকচারে। সেতুর ওপরে থাকবে কংক্রিটিং ঢালাইয়ের চার লেনের মহাসড়ক আর তার নিচ দিয়ে যাবে রেললাইন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close