নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৯ মার্চ, ২০১৯

মন্ত্রিসভায় অনুমোদন

বাতিঘরের মাশুল না দিলে আটকে যাবে জাহাজ

সাগরে চলাচলকারী জাহাজকে দিকনির্দেশনা দেওয়া বাতিঘর মাশুল বিষয়ে কড়াকড়ি করে একটি আইনের অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে গতকাল সোমবার মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে বাংলাদেশ বাতিঘর আইন ২০১৯ এবং মাছের খামারের নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করে আইনের খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে। আইনে বিভিন্ন অপরাধের জন্য শাস্তিও বাড়ানো হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এই বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন শেখ হাসিনা। বৈঠকের শুরুতে ‘বাংলা ভাষার বঙ্গবন্ধু’ শিরোনামের গ্রন্থটির মোড়ক উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী। আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে ‘লাইফ টাইম কনট্রিবিউশন ফর উইমেন এমপাওয়ারমেন্ট অ্যাওয়ার্ড’ পাওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়েছে মন্ত্রিসভা। এছাড়া নিউজিল্যান্ডে জঙ্গি হামলায় হতাহতের ঘটনায় শোক ও নিন্দা জানানো হয়েছে।

বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, অমাদের একটা পুরোনো আইন আছে, দ্য লাইট হাউস অ্যাক্ট ১৯২৭। এর মধ্যে অনেক পরিবর্তন হয়ে গেছে এর প্রেক্ষাপটে পরিবর্তন আনা হয়েছে।

নতুন নতুন সংযোজন জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, বন্দর বাতিঘর কর্তৃপক্ষ যুক্ত করা হয়েছে। দেশের বিভিন্ন বন্দর কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে বাতিঘর পরিচালিত হয়।

বাতিঘরের ওপর মাশুল আরোপ করার বিধান আগে থেকেই ছিল জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এটি একটু সহজীকরণ করা হয়েছে।

বলা হয়েছে, বাংলাদেশের বন্দরে আগত এবং প্রত্যাগত ও এক বন্দর হতে অন্য বন্দরে যাতায়াতের জন্য জাহাজগুলো দিকনির্দেশনা দেওয়ার সুবিধার্থে বাতিঘরের সেবা সুবিধার জন্য সরকার এ আইনের অধীন প্রত্যেক আগমন ও প্রত্যাগমনকারী জাহাজের জন্য সময়ে সময়ে বাতিঘরের মাশুল নির্ধারণ এবং বাতিঘর মাশুল সংগ্রহ করতে পারবে।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, বাংলাদেশের যেকোনো আগমন ও প্রত্যাগমনের সময় জাহাজের মালিক অথবা এজেন্ট অথবা মাস্টারকে বাতিঘর মাশুল পরিশোধ করতে হবে। তবে শর্ত আছে, সরকার কর্তৃপক্ষ সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপনের দ্বারা বাতিঘরের মাশুল নির্ধারণের ৩০ কার্যদিবেসের মধ্যে পুনরায় বাতিঘর মাশুল আরোপ বাতিল অথবা বা তারতম্য করার ক্ষেত্রে রেয়াত দেওয়া হয়েছে। মাশুল কালেকশনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সংশ্লিষ্ট কাস্টমস কমিশনকে। যে জাহাজ মাশুল দেবে না সে জাহাজকে আটক করা যাবে। যতক্ষণ টাকা না দেবে ততক্ষণ পর্যন্ত তাকে সিজ করে রাখা যাবে। টাকা দিলে ছুটে যাবে।

মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার লাইফ টাইম কন্ট্রিবিউশন ফর উইমেন এমপাওয়ারমেন্ট অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন। আন্তর্জাতিক স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান ইনস্টিটিউট অব সাউথ এশিয়ান উইমেন (আইএসএডব্লিউ) আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীকে মর্যাদপূর্ণ এই অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত করেছে। গত ৭ মার্চ জার্মানির রাষ্ট্রদূত ইমতিয়াজ আহমেদ প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে এ পুরস্কার গ্রহণ করেছেন জানিয়ে শফিউল আলম বলেন, মন্ত্রিসভা প্রধানমন্ত্রীকে আন্তরিকভাবে অভিনন্দন জ্ঞাপন করেছে।

এদিকে, মন্ত্রিসভার বৈঠকের শুরুতে শেখ হাসিনা ‘বাংলা ভাষার বঙ্গবন্ধু’ শিরোনামের গ্রন্থটির মোড়ক উন্মোচন করেন।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী এ কে এম মোজাম্মেল হক, মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব এস এম আরিফ-উর-রহমান ও জার্নি পাবলিকেশনের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. খন্দকার বজলুল হক অনুষ্ঠানে ছিলেন। জার্নি পাবলিকেশন থেকে প্রকাশিত গ্রন্থটিতে ভাষা আন্দোলন ও বাংলা ভাষার প্রচারণায় বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক অবদান সচিত্র তথ্যসহ তুলে ধরা হয়েছে।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, নিউজিল্যান্ডে দুষ্কৃতিকারীদের হামলায় বাংলাদেশের পাঁচজনসহ ৫০ জন মুসল্লি নিহত হয়েছেন। তাদের নৃসংশভাবে হত্যা করা হয়েছে। এটা নিয়ে মন্ত্রিসভায় শোকপ্রস্তাব গ্রহণ করা হয়।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, একই সঙ্গে এ হামলার ঘটনায় মন্ত্রিসভা নিন্দা প্রস্তাব গ্রহণ করে এবং যারা নিহত হয়েছেন তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করা হয়েছে।

মাছের খামারের নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করে একটি আইনের খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। আইনে বিভিন্ন অপরাধের জন্য শাস্তিও বাড়ানো হয়েছে।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, মান নিয়ন্ত্রণ করার জন্য এই আইন করা হচ্ছে। ১৯৮৩ সালের একটি অধ্যাদেশ দিয়ে চলছিল। উচ্চ আদালতের নির্দেশনার আলোকে সামরিক শাসনামলে প্রণীত আইনগুলো নতুন করে বাংলায় করা হচ্ছে।

মৎস্যের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, সব কোমল ও কঠিন অস্থি বিশিষ্ট মৎস্য, স্বাদু ও লবণাক্ত পানির চিংড়ি, উভচর জলজপ্রাণী, কাকড়া জাতীয় প্রাণী, শামুক, ঝিনুক, ব্যাঙ এবং এসব জলজপ্রাণীর জীবন্ত কোষকে মৎস্য হিসেবে গণ্য করা হবে। মাছ রফতানিতে নানা রকম সমস্য হয় কোয়ালিটি নিয়ে। এজন্য আইনকে হালনাগাদ করা হয়েছে।

মৎস্য ও মৎস্য পণ্যে ভেজাল, অপদ্রব্যের মিশ্রণ ও অনুপ্রবেশ করানো এবং ক্ষতিকারক রাসায়নিক নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আগে আমাদের উদাহরণ আছে চিংড়ির ওজন বাড়ানোর জন্য পেরেক ঢুকানো হয়েছে বা জেলি বা সাগু তরল করে ঢোকানো হয়েছে, এগুলো আমাদের জন্য খুব অমর্যাদার, এগুলো যাতে না করতে পারে সেজন্য আইনে বিধান রাখা হয়েছে। উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ বা ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কাছ থেকে মৎস্য পণ্য যে স্বাস্থ্যকর সেই সনদ ছাড়া মৎস্য ও মৎস্য পণ্য রফতানি করা যাবে না।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, ‘বাংলাদেশ সুগারক্রপ গবেষণা ইনস্টিটিউট আইন ২০১৯’ এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। নতুন আইনে সুগারক্রপের সংজ্ঞায় ইক্ষু, সুগার বিট, তাল, খেজুর, গোলপাতা ও অন্যান্য মিষ্টি জাতীয় ফসল বা বৃক্ষ যেগুলো থেকে চিনি হয় তা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বাংলাদেশ ইক্ষু গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিবর্তে বাংলাদেশ সুগারক্রপ গবেষণা ইনস্টিটিউট।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close